জেমস রহিম রানা ও মনিরুজ্জামান মনির: নতুন বছরের শুরুতেই যশোরে জেঁকে বসেছে হাড়কাঁপানো শীত। মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। কুয়াশার তেমন প্রকোপ না থাকলেও হঠাৎ জেঁকে বসা শীতের সঙ্গে মানিয়ে নিতে হিমশিম খাচ্ছে সব বয়সের মানুষ। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় শহরে ব্যস্ততা বাড়ছে দেরিতে। আবার রাত গভীর হওয়ার আগেই পুরো শহরে নেমে আসছে নীরবতা
দু’একদিনের মধ্যে তাপমাত্রা আরও কমার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর। দিনের তাপমাত্রা কিছুটা বাড়তে পারে, আর রাতে শীতের অনুভূতি আগের চেয়ে সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে ।
আবহাওয়া অধিদফতরের সূত্র মতে, চলতি সপ্তাহ জুড়েই দেশের বিভিন্ন স্থানের সাথে যশোরেও অনুভূত হতে থাকে মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ। চলতি সপ্তাহে তাপমাত্রার পারদ ১৫ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থেকে নেমে সোমবার দাঁড়ায় দেশের দ্বিতীয় সর্বনি¤œ ১০ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এদিন যশোরে সর্ব্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিলো ২০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের সর্বনি¤œ তাপমাত্রা ছিলো নওগাঁর বাদলগাছিতে ১০ দশমিক ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর সর্বোচ্চ ছিলো ২৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বর্তমানে আবহাওয়ার পরিস্থিতি ভালো অবস্থানে রয়েছে। এখন তাপমাত্রা নি¤œমুখি। বর্তমানে চারটি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ বিরাজমান আছে। যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পঞ্চগড় ও কুড়িগ্রাম শৈত্যপ্রবাহের আওতায় রয়েছে। আপাতত এই চার জেলাতেই শৈত্যপ্রবাহ থাকবে।
হাড়কাঁপানো এ শীতে স্বাভাবিক জীবন বাধাগ্রস্ত হয়ে বিপাকে পড়ছেন নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষ। হতদরিদ্ররা খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। বৃদ্ধ ও শিশুদের নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন পরিবারের লোকজন। শীতের প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পুরনো কাপড়ের দোকানে বেশ ভিড় বেড়েছে।
যশোর শহরের রেল স্টেশন এলাকার রিকশা চালক ডালিম মিয়া জানান, বিকেল থেকেই পরের দিন বেলা ১০ টা পর্যন্ত জেঁকে বসছে শীত। কোন কাজে বের হতে পারছিনে। দিনেও শীত শীত অনুভব করলেও রোদের কারণে কিছুটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে।
রেলগেট বস্তি এলাকার চুড়ি বিক্রেতা রাজিয়া জানান, খুব শীত পড়ছে। সকালে উঠে গ্রামে যেতাম চুড়ি-ফিতা বিক্রি করতে। তবে শীতের কারণে সকাল করে যেতেই পারিনে। গরিবদের জন্য সরকার কম্বল দেয়, তবে এ বছর শীত পড়লেও এখনো কোন কম্বল পেলাম না।
চলমান মৃদু থেকে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের কারণে শহরে মানুষের চলাচল অনেকাংশে কমে গেছে। তবে শহরের নতুন পোশাকের বেচাকেনা তেমন না থাকলেও পুরোনো শীতবস্ত্রের দোকানগুলোতে বেশ ভিড় দেখা গেছে। টাউন হল ময়দানে শীতের পোশাক কিনতে আসা গৃহবধূ রুমা খাতুন বলেন, হঠাৎ শীত বেড়ে যাওয়ায় শীতের পোশাকের দাম একলাফে বেড়ে গেছে। দোকানিরা ইচ্ছেমতো দাম হাঁকাচ্ছেন। ফলে শীতের নতুন পোশাক কেনা মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য। তাই টাউন হল ময়দানে এসেছি পুরনো কিছু শীতের কাপড় কিনতে।
অপর ক্রেতা তেঁতুলতলার আয়েশা আক্তার জানান, হঠাৎ করে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় সকল বয়সের মানুষ অবর্ণনীয় কষ্টে দিন কাটাচ্ছে। অন্যবারের চেয়ে এবছর কাপড়ের দাম অনেক বেশি। ব্যবসায়ীরাও সুযোগ বুঝে কাপড়ের দাম বেশি হাঁকাচ্ছেন। তারপরও ছেলেমেয়েদের জন্য কিছু কাপড়তো কেনা লাগে, সেই হিসেবে আমি ১৫টি কাপড় কিনেছি।
পুরোন কাপড় বিক্রেতা টাউন হল মার্কেটের শফিকুল ইসলাম ও মনিরুল ইসলাম মনি বলেন, করোনা প্রাদুর্ভাবে মানুষ অভাবগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। মালের দামও অন্য বছরের তুলনায় এবছর একটু বেশি। তাছাড়া এবছর শীতও পড়েছে দেরিতে । যে কারণে তুলনামূলক কেনাবেচা নেই। তবে গত দুইদিনে কেনাবেচা বেশ বেড়েছে।
যশোর নিউ মার্কেটস্থ ফ্যাশন হাউসের সত্বাধিকারি আসমা আখতার জানান, এবছর কাপড়ের দাম বেশি থাকায় খরিদ্দারের কাছে দাম বেশি চাইতে হচ্ছে। এতে কেনাবেচা অনেক কম হচ্ছে।
এমএম গার্মেন্টস মালিক মোর্শেদ আলম জানান, এবছর তুলনামূলক শীত কম, করোনাকলীন অর্থনৈতিক সংকট ও মূল্যবৃদ্ধিসহ নানাবিধ কারনে কাপড়ের স্থায়ী দোকানগুলোতে কেনাবেচা নেই বললেই চলে। তাছাড়া ফুটপাত দখল করে অবৈধ দোকান থেকে লোকে কমদামে কাপড় পাওয়ায় স্থায়ী দোকানে কেনাবেচা অনেক কম হচ্ছে।
কনকনে ঠান্ডা আর হিমেল হাওয়ায় কাবু হয়ে পড়া ষাটোর্ধ ছিন্নমূল, অসহায় গ্রামীণ জনপদের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য যশোরে ৪৭ হাজার ৫০০ জনের মাঝে কম্বল বিতরণ শুরু করেছে যশোর জেলা প্রশাসন। বরাদ্দকৃত এসব কম্বল স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিতরণ শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান। এই শীতে অসহায় হতদরিদ্র মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য আরো কম্বল কেনার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে কিছু অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। সেই অর্থ দিয়ে দ্রুত কম্বল ক্রয় করে হতদরিদ্র মানুষের মাঝে কম্বল বিতরণ করা হবে।