হাসানুজ্জামান ঝড়ু
এশিয়াকাপ-নিউজিল্যান্ড সিরিজ ও বিশ্বকাপসহ বাংলাদেশের খেলা সর্বশেষ ১০ ম্যাচের ছোট একটা পরিসংখ্যান দিয়ে লেখা শুরু করতে চাই। বাংলাদেশ ১০ ম্যাচের ৯ ইনিংসে ব্যাট করেছে। এ ৯ইনিংসের ৭ বারই স্কোর বোর্ডে শতক পূর্ণ হওয়ার আগেই টপ ফোরের চার ব্যাটার সাজঘরে ফিরে গেছেন। ব্যতিক্রম হওয়া ঘটনা দুটি আফগানদের বিপক্ষে। ওই সাত ম্যাচের মধ্যে এশিয়া কাপের শেষ ম্যাচে ভারতে বিপক্ষে ৫৯ রানে ৪ উইকেট হারানোর পরও জয় পায়। ভারতের বিপক্ষে মিডল অর্ডারে সাকিব ও হৃদয়ের একটা জুটি হয় এবং শেষ দিকে নাসুম ও শেখ মাহাদির ৩০ ছাড়ানো দুই ইনিংসের কল্যাণে ২৬৫ রান করতে পারে।
দলের টপ অর্ডার ভেঙ্গে পড়লে, মিডল অর্ডারের উপর চাপ পড়ে। বাংলাদেশের মিডল অর্ডারে রান করার মতো সামর্থ্য আছে। তবে তাদেরকে যদি দ্রুত ক্রিজে নামতে হয় তাহলে স্বাভাবিক খেলাটি তারা খেলতে পারে না। তাতে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে বা রান তাড়ায় বড় স্কোর করা সম্ভব হচ্ছে না।
বড় স্কোর করার জন্য টপ অর্ডারের চার ব্যাটারের থেকে বড় জুটির কোনো বিকল্প নেই। গত ম্যাচে ইংল্যান্ড প্রথম ও দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ম্যাচ থেকে আমাদের ছিটকে দেয়।
দল ঘোষণার পরই বাংলাদেশের টপ অর্ডার নিয়ে আশঙ্কার কথা বলেছিলাম। তবে বিশ্বকাপ প্রস্তুতি ম্যাচে তানজিদ তামিম ও লিটন দাস আশা দেখিয়েছিলেন। তবে সেই প্রত্যাশা তারা পূরণ করতে পারেনি। যদিও লিটন ইংল্যান্ডের সাথে শেষ ম্যাচে ৭৬ রানের ইনিংস খেলেছে। কিন্তু তামিম প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। এ জন্য টপ অর্ডারে বারবার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে খেলানো হচ্ছে।
আজকের নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে এ জায়গাতে টিম ম্যানেজমেন্ট বড় পরিবর্তন আনলে অবাক হব না। তবে আমাদের হাতে খুব বেশি বিকল্পও নেই। মেক শিফট মেহেদি হাসান মিরাজ ও নামজুল হোসেন শান্ত আছে ওপেনিং খেলার মতো।
আজ বাংলাদেশ খেলবে চেন্নাইয়ের এম.এ. চিদম্বরম স্টেডিয়ামে। প্রথমবারের মতো ডে-নাইট ম্যাচ। এ মাঠে বিশ^কাপে তৃতীয় সর্বোচ্চ ২.৯০ ডিগ্রি পর্যন্ত টার্ন পাচ্ছে বোলাররা। সর্বশেষ হওয়া ভারত আর অস্ট্রেলিয়া ম্যাচে দাপট দেখিয়েছে ভারতের তিন স্পিনার বরীন্দ্র জাদেজা, রবিচন্দন অশি^ন, কুলদীপ যাদব। তিনজনই তাদের ১০ ওভারের বোলিং কোটা পূরণ করেছেন। তাতে ১৮০ বলে ১০৪ দিয়ে ৬ উইকেট নিয়েছেন। তাই এ মাঠে আমাদের সাকিব, মিরাজ ও মেখ মাহাদি ভাল করবেন বলে আশা করা যায়।
বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের জন্য বড় হুমকি হতে পারেন রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল স্যান্টনার, ইশ সোধির স্পিন। বরাবরই বাংলাদেশ কোয়ালিটি পেস বোলারদের বিপক্ষে স্ট্রাগল করে। নিউজিল্যান্ড দলে ট্রেন্ড বোল্ট, ম্যাট হেনরি, লকি ফার্গুসেনে মতো পেসার রয়েছে। যারা নিয়মিতই বাংলাদেশের বিপক্ষে ভাল খেলেন। বিশ^কাপে মিশেল স্যান্টনার ও ম্যাট হেনরি সর্বোচ্চ উইকেট শিকারির তালিকায় প্রথম ও তৃতীয় স্থানে রয়েছেন।
এদিকে নিউজিল্যান্ডের ব্যাটাররা রয়েছেন পুরো ফর্মে। নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম তিন ওভারে কোন রানই নিতে পারেনি নিউজিল্যান্ড। তবুও শেষ ৭ উইকেট হারিয়ে ৩২২ রান করে। ডেভন কনওয়ে, রাচিন রবীন্দ্র দুই ম্যাচেই রান পেয়েছে। উইল ইয়ং প্রথম ম্যাচে রান না পেলেও নেদারল্যান্ডের বিপক্ষে ৭০ রান করেন।
এখন পর্যন্ত বিশ^কাপে উপরে দিকে থাকা দল গুলো কাগজে কলমে কম শক্তিশালী দল গুলোর বিপক্ষে ডমিনেট করে খেলার চেষ্টা করছে। আজ বাংলাদেশের বিপক্ষে নিউজিল্যান্ড এমন ভাবে খেলতে চাইবে।
গত দুই ম্যাচে বাংলাদেশের পেস ইউনিট শুরু দিকে উইকেট নিতে পারেনি। যদিও ধর্মশালার আউট ফিল্ডে রানআপ নিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছিল পেস বোলারদের। এটাও একটা কারন হতে পারে। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ভাল করতে হলে শুরুতেই উইকেট নিতে হবে।
আবার আমাদের একাই ম্যাচ ঘুরিয়ে দেয়ার মতো খেলোয়াড় কম। তাই ভালো কিছু করতে হলে দল হয়ে খেলতে হবে। ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলতে হবে। তাহলেই ভালো কিছু করা সম্ভব।
কাগজের কলমের হিসাব করে সব কিছু হয়না। তাই শক্তিমত্তায় এগিয়ে থাকা নিউজিল্যন্ডের বিপক্ষে ভাল কিছুর সম্ভবনা তো আশা করাই যায়।
