নিজস্ব প্রতিবেদক
বাঘারপাড়ার বন্দবীলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন বারবার অপরাধ করা সত্ত্বেও তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক কোন ব্যবস্থায় নেয়নি উপজেলা বা জেলা বিএনপি। প্রতিটি ঘটনার মূল নায়ক হয়েও বারবার পার পেয়ে গেছেন। শাস্তি হয়েছে অন্যদের। সর্বশেষ, গত বুধবার তপনের নেতৃত্বে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানের উপর হামালা ও মারপিটের অভিযোগ প্রমাইিত হলেও তা এড়িয়ে গেছেন শীর্ষ নেতারা । এ ঘটনায় ৬নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুলকে বহিষ্কার করা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার র্শীষ নেতাদের ম্যানেজ করে তপন পার পেয়েছেন।
জুলাই অভ্যুত্থানের পর দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হলে বাঘারপাড়ার বন্দবীলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপনের নেতৃত্বে নানা অপরাধ কর্মকাণ্ড সংগঠিত হয় ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামে। শালিসের নামে অর্থ আদায়, জমি দখলসহ লুটপাটের অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। দলের কোন নেতাকর্মী এসবের বাঁধা দিলে আক্রমণ চালানো হয়েছে তার উপর। গত বছরের ২৬ আগস্ট তপনের নির্দেশে ইউনিয়ন বিএনপির যুগ্ম আহবায়ক ফিরোজ বিশ্বাসকে মারপিট করে রক্তাক্ত জখম করা হয়। চিহ্নিত আওয়ামী লীগ সন্ত্রাসীদের পুনর্বাসনের প্রতিবাদ করায় এ হামলা চালানো হয় ফিরোজের উপর। এ ঘটনায় ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক কবির হোসেন ও যুবদল নেতা নন্টু হোসেন বহিষ্কার হয়। তপনের বিষটি আমলেই নেননি দলের শীর্ষ নেতারা।
দলীয় প্রভাব খাটিয়ে ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে বন্দবিলা ইউনিয়ন পরিষদে তালা লাগানো, সেকেন্দারপুরে ইউপি সদস্য শেফালি রানী ও চাপাতলা গ্রামে বেশ কয়েকটি হিন্দু পরিবারে হামলা ও লুটপাট, ভাটার আমতলা বাজারে এক মুদি দোকানে তালা লাগানো, হাইকোর্টের রায় উপেক্ষা করে কঠুরাকান্দি গ্রামে জমি দখল, খাজুরা পল্লী বিদ্যুৎ সাব-স্টেশনের পাশে হিন্দু সম্প্রদায়ের মেহেগনি বাগানের গাছ লুট, মির্জাপুর আদর্শ মহিলা কলেজ মাঠে এক যুবককে আটকে রেখে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে চাঁদা দাবি, সেকেন্দাপুরে এক হিন্দু বাড়িতে দু’লাখ টাকা দাবি, খাজুরা বাজার পাইপপট্টিতে দোকানঘর দখল ও চাঁদা আদায়, হাট ইজারাদারদের টাকা লুট ও চাঁদা আদায়, খাজুরা সরকারি কলেজের পুকুরের মাছ লুট, খাজুরা মাখনবালা বালিকা বিদ্যালয়ের দুই শিক্ষকের কাছে চাঁদা দাবিসহ লাগামহীন অপকর্ম হয়েছে বন্দবীলা ইউনিয়নে। আর এর সব কিছুর মূল নেতৃত্বে ছিলেন মনিরুজ্জামান তপন ও তার লোকজন। অধিকাংশ এ সব ঘটনা নিয়ে জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে ফলাও করে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। তবে এসব ঘটনায় তপন বারবার পার পেয়ে গেছেন। সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে চুনোপুঁটিদের বিরুদ্ধে। এতে দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ তৈরি হয়েছে।
সর্বশেষ গত বুধবার তপনেরে উপস্থিতিতে ও তার নির্দেশে এ ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমানকে মারপিট করে ৬ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল। শুক্রবার রাতে তপনের বিরুদ্ধে নানা অপকর্ম তুলে ধরে জেলা ও উপজেলা বিএনপির শীর্ষ নেতাদের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী আজিজুর রহমান।
অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেন, স্বৈরাচার শেখ হাসিনার পতনের পর থেকে বন্দবিলা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মনিরুজ্জামান তপন লাগামহীনভাবে নানা অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। এ নিয়ে প্রতিবাদ করলে মনিরুজ্জামান তপন ও তার সন্ত্রাসীবাহিনী বিভিন্ন সময়ে তাকে হুমকি-ধামকি, গালিগালাজসহ প্রাণনাশের ভয় দেখিয়েছে। গত মঙ্গলবার আজিজুর রহমানসহ ইউনিয়ন বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ সনাতন ধর্মাবলম্বীদের দুর্গাপূজা পরিদর্শনে যায়। পরদিন বুধবার উপজেলা বিএনপির সভাপতি তানিয়া রহমান বন্দবীলা ইউনিয়নের সবকটি পূজাম-প পরিদর্শনে আসবেন সেই লক্ষে আজিজুর রহমান খাজুরা বাজার গরুহাট বটতলা চত্বরে অপেক্ষায় ছিলেন। তখন মনিরুজ্জামান তপন তার অনুমতি ছাড়া আগেরদিন পূজাম-প পরিদর্শনে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তোলেন। তিনি বলেন, যারা পূজা পরিদর্শনে গেছেন তাদের হাত-পা ভেঙ্গে দেয়া হবে। একপর্যায়ে তপনের নির্দেশে ছয় নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসুল আজিুরকে বেদম মারপিট করেন।
অভিযোগ উঠেছে, সরেজমিনে কোন খোঁজখবর ছাড়াই বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির কথিত এক সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী গোলাম রসুলের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়। এ বিষয়টি নিয়ে বাঘারপাড়ার বিএনপি নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক শামসুর রহমান জানিয়েছেন, শুক্রবার উপজেলা বিএনপির সিদ্ধান্ত মোতাবেক গোলাম রসুলের প্রাথমিক সদস্যপদসহ সকল পদ পদবী থেকে তাকে বহিস্কার করা হয়েছে।
মনিরুজ্জামান তপন জানিয়েছেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ করা হচ্ছে, সেটা মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। পূজা মন্দিরে স্থানীয় নেতাকর্মীদের না জানিয়ে ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আজিজুর রহমান একাই পরিদর্শনে যান। এতে নেতাকর্মীরা তার উপর ক্ষিপ্ত হন। এটা নিয়ে বাজারে কথাকাটাকাটি হয়। শেষে ধাক্কাধাক্কির পর্যায়ে যায়। কোনো হামলা বা মারধর করা হয়নি। এছাড়া দখলদারিত্ব, চাঁদাবাজি ও হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষের উপর নির্যাতন, শালিশ বিচার করা এসব অভিযোগও ভিত্তিহীন।’
