এম এ রাজা
গতকয়েক বছর ধরেই যশোর শামস্-উল-হুদা স্টেডিয়ামে সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুুপানি জমে খেলাধুলার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। আর এবছর জলাবদ্ধ এই মাঠে সারাদিনই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বহিরাগতরা। আর এতে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে মাঠে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে ক্রিকেটের পিচ। ফলে এবার শুষ্ক মৌসুমে মাঠ খেলার উপযোগী করা কঠিন হয়ে যাবে জানান সংশ্লিষ্টরা। অথচ স্টেডিয়ামের সার্বিক দেখাশোনার জন্য রয়েছেন তত্ত্বাধায়কসহ ৯ কর্মচারী। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণে কর্তৃপক্ষের কোনো দৃষ্টি নেই বলে অভিযোগ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নালা (ড্রেনেজ) ব্যবস্থা না থাকায় অল্প বৃষ্টিতেই অথৈই পানিতে তলিয়ে থাকে যশোর স্টেডিয়ামের মাঠ। ফলে নিয়মিত খেলা, অনুশীলন ও প্রশিক্ষণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন খেলোয়াড়রা। এ নিয়ে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে উদীয়মান খেলোয়াড়, ফুটবল ও ক্রিকেট অনুরাগী মানুষের মধ্যে। তবে চলতি বছর সেই ক্ষোভটা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। এবছর জলাবদ্ধ এই মাঠেই সারাদিনই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে বহিরাগতরা। আর এতে ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে মাঠে। পাশাপাশি নষ্ট হচ্ছে ক্রিকেটের পিচ। শুধু মাঠ দাপিয়ে বেড়েচ্ছে তাই নয়, স্থানীয় বখাটেরা গ্যালারির উপরে বসায় তাস খেলার আসর। সাথে চলে গাঁজা সেবনও।
বুধবার আমেনা খাতুন ভিআইপি ক্রিকেট গ্যালারিতে যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে বলে একটি সূত্র জানিয়েছে। তবে সেই আলোচনায় সমাধানের কোন উপায় খুঁজে পায়নি তারা। সভায় শহরের বিভিন্ন স্কুল-কলেজ পর্যাপ্ত মাঠ না থাকায় সংগঠনের সভাপতি ও জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদার ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবেক এক খেলোয়াড় বলেন, পিচের যে ক্ষতি হয়েছে এইটার জন্য অন্তত তিন ইঞ্চি উপর থেকে ফেলে দিয়ে নতুন করে টপ ড্রেসিং করতে হবে। নয়তো পিচের অবস্থা বেশি একটা ভাল থাকবেনা।
শুধু বহিরাগত এই চাপে পিষ্ট হচ্ছে না। বিভিন্ন সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান, স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী পুনর্মিলনীর জন্য আয়োজিত প্রীতি ম্যাচ এখন স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়।
দুই পাশের গেট টপকে কিছু ছেলে মাঠে আসে। নিষেধ করলেও শোনে না। এমনি কি পুলিশ দিয়েও বলা
হয়েছে। কিছু করার নেই।-বীরমুত্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবির, সাধারণ সম্পাদক, যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থা
যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য শামীম এজাজ বলেন, যশোরে এখন খেলার মতো কোন মাঠ নেই। মাঠ না থাকায় পাড়া মহল্লার খেলা এখন স্টেডিয়ামে চলে। ছোট বেলায় আমাদের স্বপ্ন ছিল কবে আমরা স্টেডিয়ামে খেলতে পারবো? কখনোই খালি পায়ে মহল্লার কিংবা কলেজের ছেলেরা এখানে ঢুকতে পারেনি।

যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার কর্মচারী দিলীপ কর্মকার বলেন, স্থানীয় ছেলেরা সকাল হলে খেলতে চলে আসে। আমরা প্রতিনিয়ন নিষেধ করি। আমাদের কথা শোনে না। এমনকি আমাদের ধরে মারতে যায়।
যশোর জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক বীরমুত্তিযোদ্ধা ইয়াকুব কবির বলেন, পৌর পার্কের ওই দিকের প্রাচীর টপকে ও আমেনা খাতুন ভিআইপি ক্রিকেট গ্যালারির পাশের গেট টপকে স্থানীয় কিছু ছেলেরা মাঠে খেলা। আমরা নিষেধ করেছি। এমনিক পুলিশ দিয়েও বলা হয়েছে, তাও শোনে না। আমরা অনেক চেষ্টা করেছি। আমাদের কিছু করার নেই। তবে পানি সরে গেলেও আবার মাঠ খেলার উপযোগী হয়ে যাবে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সংগঠন বা সংস্থা মাঠের জন্য আগে জেলা প্রশাসক কার্যালয়ে যায়। সেখান থেকে আগামীতে কোন খেলা আছে জানতে চায়। আবেদনপত্র আমাদের কাছে ফরোয়ার্ড করে দেয়। তখন অনুমতি না দিয়ে আমাদের কিছু করার থাকে না।