চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি: লাইব্রেরিতে পড়তে আসছেন শিশু-কিশোর, যুবকসহ সব বয়সের মানুষ। বন্দিশালা থেকে মুক্ত হয়ে লাইব্রেরি প্রাঙ্গণ এখন সরব ও উৎসবমুখর। জ্ঞান চর্চা করতে দূর-দূরান্ত থেকে ছুটে আসছে মানুষ। এছাড়া প্রযুক্তি নির্ভরতা কমিয়ে বইয়ে আসক্তি গড়ে তুলতে অভিনব পদ্ধতি বের করেছেন স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি। ফেসবুকে মেসেজ দিয়ে বইয়ের নাম, লেখকের নাম জানালেই বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয় বই। আর পাঠকরা পড়তে পারেন তা একদম বিনামূল্যে। এ লাইব্রেরিটি এলাকার জ্ঞানার্জনের একটি বাতিঘর।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলা শহরের কলেজরোডে ভাড়া বাড়িতে ২০১৪ সালে সর্বপ্রথম স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি কার্যক্রম শুরু করেন এনামুল হক নামের একজন গণমাধ্যমকর্মী। ৬১টি বই নিয়ে লাইব্রেরিটি যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে আছে প্রায় দুই হাজারের বেশি বই।
৮ বছরের প্রচেষ্টায় পূর্ণতা পেতে শুরু করেছে লাইব্রেরটি। প্রতিদিনই বৃদ্ধি পাচ্ছে নতুন পাঠক। লাইব্রেরি চত্বরে চলে বই পড়া, আবৃত্তি, পেপার পড়া, আড্ডাসহ নানা কর্মকান্ড। প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার পাঠক লাইব্রেরিতে আসেন।
স্বয়ম্ভর লাইব্রেরিতে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, শরৎ চন্দ্র চট্টোপাধ্যয়, হুমায়ূন আহমেদ, আহসান হাবিব, গোলাম মোস্তফাসহ দেশ-বিদেশের লেখক ও সাহিত্যিকদের বই। আর এসব বই পড়া যায় একদম বিনামূল্যে। এমনকি পাঠকদের পছন্দের বই বাড়িতে পৌঁছে দেয়া হয়।
বাড়িতে বই পৌঁছে দেয়া এবং নিয়ে আসার কাজ করেন স্বেচ্ছাসেবকরা। স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির সদস্য সংখ্যা ৪৫০। আর স্বেচ্ছাসেবক আছেন ২৫ জন। নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেন একজন লাইব্রেরিয়ান। প্রতি শুক্রবার লাইব্রেরি প্রাঙ্গণে বসে পাঠক বৈঠক।
লাইব্রেরিতে পড়তে আসা একজন পাঠক রাকিব বলেন, করোনার সময় বিনা টাকায় বাড়িতে বসে স্বয়ম্ভর লাইব্রেরির বই পড়েছি। এখন লাইব্রেরিতে নিয়মিত পড়তে আসি। খুব ভালো লাগে এখানে এসে।
লাইব্রেরির সদস্য অনিন্দিতা জানান, বইয়ের প্রতি মানুষের দরদ ও ভালোবাসা থাকতে হবে। প্রতিনিয়ত বইয়ের সাথে সম্পর্ক গভীর হচ্ছে।
লাইব্রেরিতে পড়তে আসা আরেকজন পাঠক প্রাপ্তি বলেন, বই হচ্ছে একটা ছোট বাগানের মত। যে বাগানে সৌরভ আছে, গন্ধ আছে কিন্তু বর্ণ নেই। বর্ণ আছে সৌরভ নেই। কিন্তু বইয়ে সব কিছু পেতে পারি।
মাইশা জানান, পাবলিক লাইব্রেরি ছিল সেটা বন্ধ রয়েছে। সময় নষ্ট না করে বই পড়লে জ্ঞান অর্জন হবে। তাই এখানে পড়তে আসেন তিনি।
স্বয়ম্ভর লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠাতা এনামুল হক বলেন, আলোকিত সমাজ গঠনের জন্য এ লাইব্রেরি গড়ে তুলি। সমাজের মানুষের মাঝে বই পড়ার প্রবণতা অনেক কম। সব বয়সের মানুষের বই পড়তে হবে। বই পড়লে হবে না, বইয়ের ভাষা বুঝতে হবে। সকলের সহযোগিতা অব্যাহত থাকলে লাইব্রেরিটি এগিয়ে নেয়া সম্ভব। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রনি আলম বলেন, ব্যক্তি উদ্যোগে আলমডাঙ্গায় স্বয়ম্ভর নামের একটি লাইব্রেরি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। সব বয়সের মানুষের মিলনমেলা হয় সেখানে। ব্যতিক্রমী এ উদ্যোগকে সাধুবাদ জানান তিনি।
তিনি বলেন, আগামীতে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।