সিটি করপোরেশনের আদর্শ কর তফসিল-২০১৬ অনুযায়ী, সরকারি বা আধা সরকারি প্রতিষ্ঠানের জায়গায় এলইডি সাইনবোর্ড, লাইট বোর্ড কিংবা ট্রাইভিশনে বিজ্ঞাপন প্রচার করতে হলে বর্গফুটপ্রতি নির্ধারিত হারে কর দিতে হয়। সঙ্গে পরিশোধ করতে হয় মূল্য সংযোজন করও (মূসক/ভ্যাট)। এলইডি সাইনবোর্ডের ক্ষেত্রে প্রতি বর্গফুটে বিজ্ঞাপন কর ২০ হাজার টাকা।
ঢাকা উত্তর সিটির রাজস্ব বিভাগ সূত্রে, সৌন্দর্যবর্ধনের বিনিময়ে বিজ্ঞাপন প্রচারে প্রতিষ্ঠানগুলো যেভাবে বিজ্ঞাপন প্রচার করছে, এর বিনিময়ে করপোরেশনের প্রতিবছর প্রায় ১২ কোটি টাকা রাজস্ব আয় করতে পারত। কিন্তু কর ছাড় দেওয়ায় গত পাঁচ বছরে প্রায় ৬০ কোটি টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হয়েছে সংস্থাটি। বিপরীতে চুক্তিবদ্ধ প্রতিষ্ঠানগুলোর সৌন্দর্যবর্ধনের বিষয়টি ছিল নামমাত্র।
সরেজমিন দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানগুলো সড়কের বিভাজকে অথবা কোনো এক প্রান্তে এলইডি কিংবা ট্রাইভিশন সাইনবোর্ডে স্থাপন করে বিজ্ঞাপন প্রচার করে অর্থ উপার্জন করছে। তবে সড়কের সৌন্দর্য অনেকটাই ম্রিয়মাণ। কোথাও শুধু ঘাস লাগানো হয়েছে। কোথাও আবার কিছু ফুল ও পাতাবাহারগাছ রয়েছে। তবে যত্নের বেশ অভাব
চুক্তির মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়া প্রতিষ্ঠানগুলো হচ্ছে—রাজধানীর বিজয় সরণি সড়কে আরকে মাল্টিমিডিয়া, মহাখালী উড়ালসড়কের নিচে ইউনিকম মিডিয়া লিমিটেড, কারওয়ান বাজারের সার্ক ফোয়ারায় ওজন ব্লু বাংলাদেশ লিমিটেড এবং কাকলি মোড় থেকে গুলশান-২ নম্বর গোলচত্বর পর্যন্ত সড়কে কনটিনেন্টাল হোল্ডিং লিমিটেড। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে প্রায় ছয় কোটি টাকা রাজস্ব আয় হতো।
অন্য পাঁচটি প্রতিষ্ঠান হচ্ছে—মগবাজার সাতরাস্তা উড়ালসড়কের নিচে হাবিব হোটেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মিরপুর ১০ নম্বর গোলচত্বর থেকে মিরপুর-১৪ নম্বর হয়ে কচুক্ষেতের রজনীগন্ধা সুপারমার্কেট সড়কে সাইন ভ্যালী, ধানমন্ডি রাপা প্লাজা থেকে শিশুমেলা হয়ে মাহবুব মোর্শেদ সরণিতে ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, শ্যামলী শিশু মেলা থেকে মিরপুর-১ নম্বর পর্যন্ত বিলিভ এস ক্রিয়েশন এবং গুলশান-২ নম্বর চত্বর থেকে বারিধারা হয়ে নতুন বাজার সড়কে আরকে মাল্টিমিডিয়া লিমিটেড।
এর মধ্যে হাবিব ইন্টারন্যাশনালের চুক্তি শেষ হবে ২০২৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে। অন্য চারটির চুক্তি শেষ হবে আগামী ডিসেম্বরে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকেও বছরে আরও প্রায় ৬ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় সম্ভব ছিল বলে জানান রাজস্ব বিভাগের কর্মকর্তারা।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০১৯ সাল পর্যন্ত বিজ্ঞাপন প্রচারের বিষয়টি ছিল করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগে।
পরে এ দায়িত্ব রাজস্ব বিভাগকে দেওয়া হয়। আর কর ছাড়া বিজ্ঞাপন প্রচারের চুক্তি হয়েছিল ২০১৭ সালে প্রয়াত মেয়র আনিসুল হকের সময়ে। তবে চুক্তির সময়, অর্থাৎ আগস্টে তিনি দেশের বাইরে ছিলেন। পরে সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই বছরের নভেম্বরে তিনি মারা যান।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা উত্তর সিটির ঊর্ধ্বতন একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, কর প্রদান ছাড়া সৌন্দর্যবর্ধনের মাধ্যমে বিজ্ঞাপন প্রচারের সুযোগ আইনে নেই। যে প্রতিষ্ঠান বিজ্ঞাপন প্রচার করবে, তাদের অবশ্যই কর দিতে হবে। আইনত কোনো প্রতিষ্ঠানকে কর থেকে অব্যাহতি দেওয়া যায় না।
তিনি আরও বলেন, কোনো চুক্তি (এমওইউ) করার ক্ষেত্রে তাতে করপোরেশনের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়, এমন কোনো বিষয় রয়েছে কি না—তা যাচাই করতে আইন বিভাগের মতামত (ভেটিং) নিতে হয়। কর ছাড় দিয়ে করা চুক্তিতে এ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।