শেখ এনামুল হক দুলু, মহেশপুর: ঝিনাইদহের মহেশপুরে কালের সাক্ষী ইতিহাসের শেষ চিহৃটুকুও নিশ্চিহৃ হয়ে যাচ্ছে। সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেনি কেউ ব্রিটিশ আমলের জজ পিতা-পুত্রের এই বাস্তুভিটার।
উপজেলার ফতেপুর গ্রামের চ্যাটার্জী পরিবার এ অঞ্চলে উচ্চশিক্ষিত পরিবার হিসেবে পরিচিত ছিল।
ব্রিটিশ আমলে এ পরিবারে দুইজন জজ ছিলেন বলে জানা যায়। অমূল্য গোপাল চট্টোপাধ্যায় ছিলেন কলকাতা জজ কোর্টের একজন নামকরা জজ (বিচারক), তিনি ব্যারিস্টারও ছিলেন। তার বাবা গোপাল চট্টোপাধ্যায়ও জজ ছিলেন। তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন নলডাঙ্গার রাজা বাহাদুর প্রমথ ভূষণ দেবদার, জয়দিয়ার রাজা সতিষ চন্দ্র রায় বাহাদুর ও ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। তিনি সংস্কৃতি, ফারসি ও আরবি ভাষায় প্রগাঢ় পান্ডিত্য ছিলেন।
অমূল্য বাবুর বাড়ি ছিল কলকাতার ২৩/৩১ গড়িয়াহাট রোড, বালিগঞ্জে। তাঁর ছিল ৫ মেয়ে। তাদের বংশধররা এখনও কলকাতায় ওই বাড়িতে বসবাস করেন বলে জানা গেছে। ফতেপুর গ্রামে এ পরিবারের ৮৮ শতক জমির উপর সুরম্য পাকা বাড়ি ছিল। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর সকলে ভারতে চলে গেলে পরিত্যক্ত হয় জজ সাহেবের বাসভবন। যা পরবর্তীতে স্থানীয় বাঁওড়ের মৎস্য অফিস হিসাবে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
১৯৮৫ সালের পর বিশ্ব ব্যাংকের সহায়তায় বাঁওড়ের নতুন অফিস তৈরি হলে জজ বাড়িটি আবারও পরিত্যক্ত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কিছু ভূমিহীন পরিবার ওই ভিটায় বসবাস শুরু করেন। অপরদিকে একটি কুচক্রী মহল জাল কাগজপত্র তৈরি করে উক্ত জমি গ্রাস করার চেষ্টা করছে।
ইতিহাসের একাধিক সূত্রে পাওয়া গেছে ব্রিটিশ আমলে জজ সাহেব ঘোড়ার গাড়িতে করে আবার কখনও নৌকায় ভারত থেকে এই বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। বাড়িটি মুর্শিদাবাদের মোগলদের আদলে তৈরি করা হয়েছিল। তৎকালীন সময়ে মুর্শিদাবাদের রাজমিস্ত্রি দিয়ে বাড়ীটি নির্মাণ করা হয় বলে জনশ্রুতি রয়েছে।
বর্তমানে বাড়ির প্রধান ফটকের গেট ও ঠাকুর ঘরের অংশ বিশেষ দৃশ্যমান আছে। এখনও তাদের স্মৃতি চিহৃ টুকু সংরক্ষন করা যায়। স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম সিরাজ জানান, তারা ওই জমিতে একটি শিশু পার্ক করার জন্য পরিকল্পনা গ্রহন করেছেন এবং সরকারের কাছে সর্বশেষ চিহৃটুকু সংরক্ষণের জন্য হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।