নিজস্ব প্রতিবেদক: ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারেনা’ ভূপেন হাজারিকার কালজয়ী এ গানের মতোই পরতে পরতে মিশে রয়েছে জাবেদ আলীর জীবন। বৃদ্ধকালে মানুষের যখন সময় কাটাতে চান নাতি-নাতনিদের সাথে মিলেমিশে। থাকতে চান স্বজনদের সাথে।
ঠিক এমন বৃদ্ধ বয়সে মসজিদের অজুখানা একাকি দিন রাত কাটাচ্ছেন ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ জাবেদ আলী। বৃদ্ধ বয়সে বৃদ্ধাশ্রমের একটু ঠাই চান তিনি। বাড়ির ঠিকানা ও স্ত্রী-সন্তান থেকেও যেন কেউ নেই তার। অসুস্থ, প্রায় অন্ধ (চোখে ঝাপসা দেখছেন) মেয়ে বাবা জাবেদ আলীর দেখভাল করতে অস্বীকার করেছেন। ঘটনাটি ঘটেছে যশোর সদরের হাশিমপুর বাজার জামে মসজিদে। ঠিকানা জানতে চাইলে জাবেদ আলী বলেন তার জন্মস্থান রংপুর জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সি গ্রামে।
জাবেদ আলী বলেন, ১০-১২ বছর বয়সে অভাবের কারণে রংপুর থেকে কর্মসন্ধানেরর জন্য যশোর এসেছিলেন তিনি। আর কখনো ফিরে যাননি নিজের জেলা রংপুরে। তার বাবা থাকতেন অন্যের জায়গায়। নিজের কোন জায়গা জমি নেই। সেখানে তার কোনো থাকার জায়গাও নেই। ভাইয়েরা বেঁচে আছে কিনা সে খবর জানেন না তিনি এবং এখন তাকে চিনবে কি না তিনিও তাদেরকে চিনবে কি না তা নিয়েও রয়েছে সন্দেহ। যশোর এসে মানুষের বাড়িতে কাজ করতেন জাবেদ আলী একজনের কাজ শেষ হলে চলে যান অন্য জনের বাড়িতে। যাদের বাড়িতে কাজ করেন তাদের বাড়িতেই খান। এভাবেই চলতে থাকে তার দিন। প্রাপ্তবয়স্ক হলে বিয়ে করেছেন যশোর সদরের বেতালপাড়া-পদ্মবিলা গ্রামের সিরাজ দাইয়ের মেয়ে ফাতেমা খাতুনকে। কিন্তু সেখানে নানাভাবে নিগৃহীত হওয়ায় একপর্যায়ে সেখানে থেকে স্ত্রী-কন্যা রেখে আবার অন্যের জমিতে বাড়িতে কৃষিকাজ শুরু করেন। জাবেদ আলীর পোটলায় যশোর খোজারহাটের একটি মাদ্রাসার আইডি কার্ড রয়েছে। যেখানে তার পদের নাম রয়েছে বাবুর্চি।
মাদ্রাসা ফোন দিলে তারা বলেন, একসময় সেখানে বাবুর্চির কাজ করেছেন। এখন তিনি কোথায় আছেন তারা জানেন না।
জাবেদ সর্বশেষ কাশিমপুরে কাজ করছিলেন। এমন সময় তিনি গুরুতর অসুস্থ হলে একজন তাকে কাজের মূল্য পরিশোধ করে হাশিমপুর বাজার এনে ছেড়ে দিয়ে যান। তখন তিনি হাশিমপুর বাজার শুকুর আলীর গ্যারেজে কান্নাকাটি করলে স্থানীয়রা তাকে মসজিদে থাকার ব্যবস্থা করেন।
তিনি এখন চোখে একটু ঝাপসা দেখছেন। স্থানীয়রা পালাক্রমে তাকে খাবার দিচ্ছেন। তবে এভাবে আর কতদিন তাই তাকে কোন বৃদ্ধাশ্রমের দেয়ার ব্যাপারে জেলা প্রশাসকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন স্থানীয়রা।
বৃদ্ধ জাবেদ আলীর আহাজারি বাতাস ভারি করে তুলছে। বলছে আমার কেউ নেই। থাকার কোন জায়গা নেই।
বৃদ্ধ জাবেদের দেয়া ঠিকানা মেতে খোঁজ নেয়া হয় তার স্ত্রী ঠিকানায়। বেতালপাড়ায়, খোঁজ নিয়ে জানা যায় তার স্ত্রীর অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেছে। যোগাযোগ করা হয় হয় তার মেয়ের সাথে। জাবেদ আলীকে বাবা বলে স্বীকার করলেও দায়িত্ব নিতে চান না ।
একটু সহানুভূতি হতে পারে বৃদ্ধ জাবেদের নতুন ঠিকানা। আর জয় হবে মানবতার।
বৃদ্ধ জাবেদ বৃদ্ধাশ্রমে শুরু করুক নতুন জীবন। এটা সকলের প্রত্যাশা।