দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ
ঝিনাইদহের ৬ উপজেলার আউশ চাষিরা চলতি মৌসুমে প্রায় ৮৪ কোটি টাকার সেচ খরচ বাঁচাতে পারবেন। আর সেটা সম্ভব হচ্ছে মধ্য আষাঢ়ের টানা সপ্তাহের বৃষ্টি। যা তাদের জন্য প্রকৃতির আশীর্বাদ বলে মনে করছেন চাষিরা এবং কৃষি কর্মকর্তারা। শুধু তাই নয়, বৃষ্টির পানি সিসা, আয়রন বা অন্য কোন ক্ষতিকর উপাদানমুক্ত থাকায় ধানের মান ও ফলন উভয়ই ভালো হবে বলে তারা আশা করছেন।
মহেশপুরের খালিশপুর ও ঝিনাইদহ সদরের কালিচরণপুরে কথা হয় কয়েকজন চাষির সাথে। তারা জানালেন, দীর্ঘদিন বৃষ্টির দেখা না পাওয়ায় একাতো চাষিরা বৃষ্টিনির্ভর আউশ চাষ কমিয়ে দিয়েছেন, তার ওপরে আবার সেচ প্রদানকারী ব্যক্তিদের কমপক্ষে মোট উৎপাদিত ধানের এক পঞ্চমাংশ বা ২০ শতাংশ সেচ বাবদ দিতে হচ্ছে। এটা তাদের জন্য বড় বোঝা। সাধারণত আষাঢ়-শ্রাবণ মাসে এ ধান বেড়ে ওঠে আর তা প্রাকৃতিক বা বৃষ্টির পানিতেই বড় হতে থাকে। তবে এবার তাদের কপালে প্রথমে দুর্ভাগ্যের কালি লেপে দেয় দীর্ঘদিনের তাপদাহ আর খরা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি তাদের সব নিরাশার অবসান করে সামনের দিনগুলোতে আশার আলো জ্বেলে দিয়েছে। ঘন আর মাঝারি বৃষ্টির পানি মাথায় নিয়েই তারা পরিচর্যা শুরু করেছেন আউশ ক্ষেতের। যাতে বৃষ্টির পানি পুরোপুরি কাজে লাগানো যায়।
ধান চাষি মহিউদ্দিন বিশ্বাস জানালেন, তিনি এবার ৩ বিঘায় আউশ চাষ করেছিলেন। এক বিঘায় বিকল্প সেচ দিলেও চড়া দামের সেচের পানি কিনে বাকি ২ বিঘায় দিতে পারেন নি। কিন্তু বৃষ্টি তার কমপক্ষে ১০ হাজার টাকার সেচ খরচ কমিয়ে দিয়েছে। সব ঠিকঠাক থাকলে এবার তিনি ধানচাষে লাভবান হতে পারবেন, মনে করেন মহিউদ্দিন বিশ্বাস।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ঝিনাইদহ উপরিচালকের অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার ঝিনাইদহ সদর, কালীগঞ্জ, কোটচাঁদপুর, মহেশপুর, শৈলকুপা ও হরিণাকন্ডু উপজেলায় ৪৪ হাজার ৫শ হেক্টর জমিতে আউশ চাষ হয়েছে। প্রায় অর্ধেক জমিতে বিকল্প সেচ দেয়া সম্ভব হলেও বাকি জমি সেচের বাইরে ছিল। আর্থিক কারণে এবং ধানচাষে লোকসানের কথা ভেবে চাষিরা পাম্পের পানির সেচ দিতে পারেননি। রোববার থেকে শুরু হওয়া ৫ দিনের টানা ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টি চাষিদের সামনে ভালো ফসলের সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দিয়েছে। আশায় বুক বাধছেন চাষিরা। তবে গত জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত জেলায় মাত্র ৮১ মিলিমিটর বৃষ্টি রেকর্ড করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। যা ফসল উৎপাদনে কোন ভূমিকাই রাখতে পারেনি।
ডিএই ঝিনাইদহ খামারবাড়ির উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায় জানান, আউশ চাষ প্রধানত বৃষ্টিনির্ভর হওয়ায় তাতে সাধারণত সেচ খরচ লাগে না। কিন্তু এবারের টানা খরা আর তাপপ্রবাহ কৃষিক্ষেত্রে বিরুপ প্রভাব ফেলে। আর বাধ্য হয়েই বেশ কিছু চাষি সেচের পানি কিনে জমির ধান রক্ষা করেন। প্রতিবিঘায় ৫ হাজার টাকা হিসেবে এক হেক্টর জমিতে ৩৫ হাজার থেকে ৩৮ হাজার টাকা সেচবাবদ খরচ হয়। বৃষ্টির পানি তাদের সেচ খরচ কমপক্ষে ৫০ শতাংশ কমিয়ে দেবে বলে মনে করেন উপপরিচালক ষষ্টি চন্দ্র রায়।