বাড়বে বন্দরের নিরাপত্তা, খুশি আমদানি ও রফতানি
নিজস্ব প্রতিবেদক: অবশেষে ব্যবসায়ীদের দাবির মুখে দেশের সর্ববৃহৎ বেনাপোল স্থলবন্দর সিসি ক্যামেরার আওতায় এসেছে। বন্দরের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ৩৭৫টি সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণ হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও পাসপোর্টধারী যাত্রীর গতিবিধি। এতে আমদানিকারকদের মধ্যে স্বস্তি ফিরেছে। তারা বলছেন, এতে কমবে বন্দর থেকে পণ্য চুরি।
জানা গেছে, ১৯৭২ সালের শুরুর দিকে বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতের সাথে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যিক যাত্রা শুরু। দেশের স্থলপথে যে বাণিজ্য হয় যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় তার ৭০ শতাংশ হয়ে থাকে বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে।
প্রতিবছর বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতের সাথে প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকার আমদানি ও ৮ হাজার কোটি টাকার রফতানি বাণিজ্য হয়ে থাকে। আমদানি বাণিজ্য থেকে সরকারের রাজস্ব আসে প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা।
বেনাপোল বন্দরের আমদানি-রফতানি সমিতির সহসভাপতি আমিনুল হক বলেন, বন্দর থেকে পণ্য চোরাচালান, বারবার অগ্নিকান্ড, মাদক পাচার, দুর্বৃত্তায়ন কর্মকান্ডসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটছিল। এতে স্বাভাবিক বাণিজ্য যেমন ব্যাহত হচ্ছিল, তেমনি ঝুঁকির মধ্যে ছিল বন্দরের নিরাপত্তা। ফলে ব্যবসায়ীরা দাবি তোলেন সিসি ক্যামেরা স্থাপন করতে হবে। দীর্ঘদিন পর এবার বন্দরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের হস্তক্ষেপে সে অপেক্ষার অবসান হলো।
পরিবহন চালক রাসেল জানান, বেনাপোল বাস টার্মিনালে যাত্রী নামার সাথে সাথে দালালের খপ্পরে পড়তে হয় যাত্রীদের। এখন দালালদের দৌরাত্ম্য কমবে। পাসপোর্টধারী যাত্রীদের নিরাপত্তা বাড়বে।
যশোরের মোটরপার্টস আমদানিকারক রেজোয়ান আহমদ জানান, বন্দরের কোটি কোটি টাকার পণ্য রেখে চুরি ও নাশকতার শঙ্কায় থাকতে হতো। ব্যবসায়ীদের পণ্য চুরি বা আগুণে পুড়লেও তারা কোন ক্ষতিপূরণ পায়নি। সিসি ক্যামেরার আওতায় বন্দরটি আসায় এখন দুঃশ্চিন্তা কমবে আমাদের।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ স্টাফ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, সিসি ক্যামেরা স্থাপনে বৈধপথে আমদানি পণ্যের সাথে চোরাচালান, মাদক পাচার কমে বাণিজ্যিক নিরাপত্তা অনেকটা নিশ্চিত হবে।
বেনাপোল বন্দরের উপ-পরিচালক (ট্রাফিক) মামুন কবীর তরফদার বলেন, ১৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত বছর সিসি ক্যামেরা স্থাপনের কাজ শুরু হলেও করোনার কারণে শেষ করতে দেরি হয়। এখন বন্দরের আমদানি পণ্য প্রবেশদ্বার, ট্রাক টার্মিনাল, বাইপাস সড়ক, ঢাকা-কলকাতা মহাসড়ক, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল, বাস টার্মিনালসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় ৩৭৫টি সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ পর্যায়ে। বন্দর প্রশাসনিক ভবন সিসি ক্যামেরায় তদারকি হচ্ছে বাণিজ্যিক কার্যক্রম ও যাত্রী যাতায়াত। এতে নিরাপত্তা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা বাড়বে।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান বলেন, ব্যবসায়ীদের দীর্ঘদিনের দাবি ছিল বেনাপেল বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন। কেননা এর আগে একাধিকবার বন্দর থেকে পণ্য চুরি হয়েছে, আগুন লেগে মালামাল পুড়ে গেছে। কোন কূল কিনারা হয়নি। এখন বন্দরটি সিসি ক্যামেরার আওতায় আসার কারণে ব্যবসায়ীরা এসব হয়রানি ও আর্থিক ক্ষতির হাত থেকে রেহাই পাবে।
বেনাপোল কাস্টমের যুগ্ম কমিশনার আবদুর রশিদ জানান, বেনাপোল বন্দরে সিসি ক্যামেরা স্থাপনের জন্য ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি আমরাও বন্দর কর্তৃপক্ষকে বলেছি। অবশেষে সেটি কার্যকর হওয়ায় আমদানিকারকরা স্বস্তি পাবে। এতে আশা করছি বাণিজ্য গতি আরও বাড়বে।