কাপড়ের দামের সাথে বেড়েছে টেইলার্সের মজুরি, ক্রেতারা হতাশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রতি বছর রমজানের শুরুতে ঈদের কেনাকাটা শুরু হওয়ার পরেই ছিট কাপড়ের বাজারেও বিক্রি বেড়ে যায়। ক্রেতারা তাদের রুচিসম্মত পোশাক তৈরির জন্য ছিট কাপড় কিনে নেন। এ বছরও ঈদুল ফিতর সামনে রেখে রমজানের শুরুতে ক্রেতাদের ভিড় জমেছে যশোরের ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে। এসময়ে ছিট কাপড় কিনে দর্জির দোকানগুলোতে পোশাক বানাতে দেয়ার তাড়া থাকে। তবে গতবছরের তুলনায় এবছর মানভেদে ছিট কাপড়ের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ২০ শতাংশ। দাম বৃদ্ধির কারণে অসন্তুষ্টি দেখা গেছে ক্রেতাদের মাঝে।
একদিকে ছিট কাপড়ের দাম বৃদ্ধি, অন্যদিকে টেইলার্সের মজুরি বৃদ্ধির কারণে বাড়তি খরচ গুনতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ক্রেতাদের। ক্রেতারা বলছেন, অন্যান্য বছরের তুলনায় এ বছর ছিট কাপড় প্রতি গজ প্রকার ও গুণগত মান ভেদে দাম বেড়েছে ৫০ থেকে ১০০ টাকা।
মঙ্গলবার যশোর বড়বাজারের কাপুড়িয়াপট্টি এলাকার ছিট কাপড়ের দোকানগুলোতে দেখা যায়, ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড়। তবে ক্রেতার উপস্থিতি থাকলেও বেচাকেনা তুলনামূলক কম। অনেকে ইচ্ছার বাইরে কেনাকাটা করলেও দাম নিয়ে ক্ষোভ ও হতাশা প্রকাশ করেন। ক্রেতাদের অভিযোগ অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর দেশি কাপড়ে ১০ শতাংশ ও বিদেশি কাপড়ে ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ দাম বেড়েছে। কোনো কোনো কাপড়ের ক্ষেত্রে তিনগুণ দাম বেড়েছে।
যশোর বড়বাজার ছিট বিতানের বিক্রয় প্রতিনিধি শরিফুল ইসলাম বলেন, রমজান উপলক্ষে প্রতি বছর যে বেচাকেনা থাকে সে তুলনায় খুব বেশি চাপ এখনো পরেনি। প্রতিটি কাপড়েই ৫০ থেকে ১০০ টাকা দাম বেড়েছে। বিদেশি শার্ট-প্যান্টের পিসে গজ প্রতি ৫০ থেকে ১৫০ টাকা বেড়ছে। পায়জামা-পাঞ্জাবির কাপড়ের গজ প্রতি প্রকার ও মানভেদে বেড়েছে ৫০ থেকে ২০০ টাকা। মেয়েদের দেশি-বিদেশি সালোয়ার কামিজের কাপড়েও বেড়েছে ৫০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত।
লতিফ ক্লথ স্টোরের বিক্রয় প্রতিনিধি আরিফুল ইসলাম বলেন, রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে থেকেই ছিট কাপড়ের বেচাকেনা শুরু হয়েছে। মানুষ বাজারে আসছে। তবে দেখেশুনে দাম যাচাই-বাছাই করে অনেকেই চলে যাচ্ছে। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর দেশি কাপড়ের দাম ১০ শতাংশ আর বিদেশি কাপড় ৩০ থেকে ৭০ শতাংশ অতিরিক্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। বেশি দাম বেড়েছে পাঞ্জাবির কাপড়ের। কোরিয়ান মাইক্রো পাঞ্জাবির সুতি কাপড়ের দাম আগে গজপ্রতি ২২০ টাকা বিক্রি হলেও এবার তা বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা। ১১০ টাকার দরে কাপড় বিক্রি হচ্চে গজপ্রতি ১৬০ টাকা।
একই কথা বলেন, মডার্ন ক্লথ স্টোরের ম্যানেজার হারান মজুমদার। তিনি বলেন, সব ধরনের ছিট কাপড়ের দাম বেড়েছে। তবে বিদেশি গর্জিয়াস কিছু আইটেম আছে সেসব কাপড়ের দাম গজপ্রতি ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে পণ্য আমদানি কমার কারণে এসব কাপড়ের দাম বেড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
এদিকে কাপড়ের দামের পাশাপাশি টেইলার্সের দোকানে কাপড় তৈরির মজুরিও বেড়েছে। কাপুড়িয়াপট্টি এলাকার মর্ডান টেইলার্সের মালিক রুহুল আমীন বলেন, ঘরভাড়া, বিদ্যুৎ, শ্রম খরচের পাশাপাশি আনুষঙ্গিক খরচ বেড়ে যাওয়ায় আমাদের মজুরিও বাড়াতে বাধ্য হতে হয়েছে। আগে প্যান্টের মজুরি ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেয়া হলেও এ বছর ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। স্যালোয়ার কামিজের মজুরি আগে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা নেয়া হলেও এখন ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা নেয়া হচ্ছে। আর ৩০০ টাকার পাঞ্জাবির মজুরি ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা নেয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, এরপরও কারিগররা কাজ করতে চাচ্ছে না। তারা আরও বেতন বাড়াতে বলছে।
সানমুন টেইলার্সের মাহবুব হোসেন বলেন, কাপড়ের ও দর্জির দোকানের খরচ বেশি হওয়ায় অনেক ক্রেতাও ঈদের পোশাক তৈরিতে কাটছাঁট করছে। যে কারণে অন্যান্য বছরে যে হারে অর্ডার আসত, এ বছর এখন পর্যন্ত তেমন অর্ডার পাওয়া যাচ্ছে না। তিনি বলেন, অন্যান্য বছরে আমরা ১০ রমজানের পরে অর্ডার নিতাম না। এ বছর অনেকটা ব্যতিক্রম মনে হচ্ছে।
দাম বৃদ্ধির কারণে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তুষ্টি দেখা দিয়েছে। তাদের দাবি ব্যবসায়ীরা ইচ্ছামতো তাদের পণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে। বড় বাজারে কথা হয় সুরাইয়া আকতার নামে এক ক্রেতার সঙ্গে। তিনি বলেন, শার্ট-প্যান্টের কাপড় কেনার জন্য বাজারে এসেছিলাম। কিন্তু যে দাম তাতে রেডিমেড তৈরি পোশাক কিনবো কিনা ভাবছি।
বাজারে আসা আনোয়ারা বেগম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, সাধারণত দেশি ভয়েল কাপড় যেগুলো আমরা সচরাচর ব্যবহার করি। তাতেও গজপ্রতি ৩০ থেকে ৪০ টাকা দাম বেড়েছে। গরিবের কাপড় বলে পরিচিত ট্যাট্রন-পলেস্টার কাপড়েও গজপ্রতি ৫০ টাকা বেড়েছে। সঙ্গে দর্জির খরচও বেড়েছে। এ অবস্থায় কীভাবে ছেলেমেয়েদের ঈদের পোশাক বানিয়ে দেবো তাই চিন্তা করছি। নিত্যপণ্যের পাশাপাশি কাপড়ের দাম সহনশীল পর্যায়ে রাখার বিষয়ে সরকারের কাজ করা উচিৎ বলেও দাবি করেছেন তিনি।