বায়জিদ হোসেন, মোংলা (বাগেরহাট) প্রতিনিধি: পর্যটকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়াতে সুন্দরবনে তৈরি করা হচ্ছে নতুন চারটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র। এ জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ২৫ কোটি টাকা। ইতোমধ্যে ৩০ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ‘সুন্দরবনে পরিবেশবান্ধব পর্যটন বা ইকো ট্যুরিজম সুবিধা সম্প্রসারণ ও উন্নয়ন’ প্রকল্পের আওতায় কাজটি করা হচ্ছে।
বনের ভেতর দিয়ে পর্যটকদের অবাধ যাতায়াতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় বনের সার্বিক পরিবেশ। পরিস্থিতি বিবেচনায় বনের সৌন্দর্য অবলোকনে নিরিবিলি পরিবেশ সৃষ্টি ও বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণ নিশ্চিত করে পরিবেশবান্ধব পর্যটনকেন্দ্র গড়ে তুলতে বন বিভাগ ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে। বন্যপ্রাণী আর নানা জাতের বৃক্ষরাজি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের সঙ্গে আধুনিক পদ্ধতিতে নির্মাণ করা হচ্ছে মনোমুগ্ধকর স্থাপনা। উন্নত যোগাযোগ আর নিরাপদ পরিবেশের ব্যবস্থা করতে পারলে ইকো ট্যুরিজমে সৃষ্টি হবে নতুন নতুন কর্মসংস্থান। বাড়বে রাজস্ব।
বনবিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সুন্দরবনের ভেতরে বর্তমানে মোট সাতটি পর্যটনকেন্দ্র রয়েছে। যেখানে প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ পর্যটক ভ্রমণ করে থাকেন। এর সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। বর্তমানে থাকা সাতটি স্থানে এত বেশি মানুষের যাতায়াতে ঝুঁকির মুখে পড়ে সুন্দরবনের সার্বিক পরিবেশ। পর্যটকদের পদভারে বনের ক্ষয়ক্ষতি এড়ানো ও তাদের ভ্রমণ আরো সহজ করার জন্য পরিবেশবান্ধব নতুন নতুন স্পট তৈরির উদ্যোগ নেয় বনবিভাগ। এর অংশ হিসেবে ২০২১ সালে সুন্দরবন পশ্চিম বিভাগে খুলনা রেঞ্জের শেখেরটেক ও কালাবগী এবং সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের আলীবান্ধা ও চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিকে আরো চারটি পর্যটন স্পট গড়ে তোলার কাজ শুরু করা হয়।
চলতি বছরের ডিসেম্বরে পুরো কাজ শেষ হবে। প্রাকৃতিক পরিবেশ ঠিক রেখে পর্যটকদের আসার নতুন স্থান তৈরি করে দেয়ার জন্য এ প্রকল্প। নতুন এ প্রকল্পের আওতায় সাতটি ফাইবার বডি ট্রলার, তিনটি পন্টুন ও গ্যাংওয়ে, তিন কিলোমিটার আরসিসি সড়ক, ছয়টি পাবলিক টয়লেট, সাড়ে আট হাজার ঘনমিটার পুকুর খনন, একটি সেডসহ প্রদর্শনী ম্যাপ, ৩০টি আরসিসি বেঞ্চ নির্মাণ করা হচ্ছে। পাঁচটি গাইড ম্যাপ, ২০টি ডাস্টবিন ও পর্যটকদের জন্য ১০টি পথ নির্দেশনা তৈরি করা হচ্ছে। প্রকল্পটি সুন্দরবনের পশ্চিম ও সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে বাস্তবায়িত হচ্ছে। নতুন নতুন পর্যটন কেন্দ্র তৈরি হওয়ায় পর্যটন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরাও নতুন আশার আলো দেখছেন। তারা বলছেন, নতুন পর্যটন কেন্দ্রে পর্যটকের সংখ্যা বাড়লে ব্যবসা-বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। পর্যটক বা দর্শনার্থীরা খুব সহজে অল্প সময়ে বনের গহীনে মনোমুগ্ধকর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করতে পারবেন।
সুন্দরবন ট্যুর এন্ড ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারি মিজান বলেন, সুন্দরবনে পর্যটক কেন্দ্র বাড়ায় পর্যটকদের বন দেখার সুযোগ বাড়ছে। বন্যপ্রাণীদের অবাধ বিচরণের মধ্যে নিরিবিলি পরিবেশে বনের সৌন্দর্য অবলোকনের সুযোগ সৃষ্টি হবে নতুন পর্যটন কেন্দ্রে। এতে পর্যটক যেমন বাড়বে তেমনি ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়বে। সরকারের রাজস্বও বাড়বে। খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, ভবিষ্যতে সুন্দরবনে ইকো ট্যুরিজম উন্নয়নের জন্য সরকার কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। সে আলোকে সুন্দরবনে যে সাতটি ইকো ট্যুরিজম রয়েছে (করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী, দুবলার চর, হিরণ পয়েন্ট ও কলাগাছী) সেখানে মূলত ট্যুরিস্টরা যান। এর পাশাপাশি বেশ কিছু জায়গা সম্প্রসারণ করা হয়েছে। সে আলোকে নতুন চারটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র উন্নয়ন কাজ শুরু হয়েছে। বাগেরহাটের মোংলা উপজেলার চাঁদপাই রেঞ্জের আন্দারমানিক, শরণখোলা উপজেলার আলীবান্দাতে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র হচ্ছে।
খুলনা জেলার শেখের টেকে একটি প্রাচীন মন্দির আছে। সেখানে অনেক পর্যটক যাচ্ছেন। কিন্তু অবকাঠামোগত সুবিধা না থাকায় অনেকে আগ্রহ থাকা সত্তেও যেতে পারছেন না। সেখানে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র তৈরির কার্যক্রম চলছে। এছাড়া দাকোপের কালাবগিতে আরও একটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র তৈরি হচ্ছে।
এগুলো সব লোকালয় সংলগ্ন। কটকা, কচিখালী গিয়ে দিনকে দিন ফিরে আসা যায় না। তাই সবাই করমজলে যেতে বাধ্য হয়। এ কারণে স্থানীয় জনগণ সুন্দরবনে যেতে পারে না। অভয়ারণ্য এলাকায় পর্যটকদের চাপ কমানো এবং স্থানীয় লোকজনকে সম্পৃক্ত করে ইকো ট্যুরিজমের উন্নয়নের জন্যই এ চারটি স্থানে ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র গড়ে তোলা হচ্ছে।