মণিরামপুর (যশোর) প্রতিনিধি: এক ক্লিকেই দেখা যাবে সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন যাবতীয় শিক্ষা কার্যক্রম। মণিরামপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসানের উদ্যোগেই এ কার্যক্রমের যাত্রা শুরু হয়েছে। যা অনলঅইন স্কুল নামে অভিহিত করা হয়েছে। গতানুগতিক ধারা পরিবর্তন করে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তির ছোয়ায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৈনিন্দন কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যে দিয়ে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধানসহ সহকারী শিক্ষক, শিক্ষার্থী-অভিভাবকদের দৃষ্টিভঙ্গি উচ্চমাত্রায় নিয়ে যাবে বলে আশা উদ্যোক্তার। ঘরে বসে কিংবা প্রবাসে থেকেই অভিভাবক তার সন্তান বিদ্যালয়ে নিয়মিত যাচ্ছো কি-না, পরীক্ষার ফলাফল, শ্রেণিকক্ষে পারদর্শিকতাসহ লেখাপড়া সংক্রান্ত যাবতীয় খোজ-খবর রাখতে পারবেন। প্রাথমিক পর্যায় উপজেলার ৩৭টি মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে।
দেশের মধ্যে যশোরের মনিরামপুর উপজেলায় প্রথম চালু হয়েছে এ অনলাইন স্কুল কার্যক্রম। এতে করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দৈনন্দিন কার্যক্রম নিমিষেই নজরদারি করতে পারবেন সংশ্লিষ্ট বিভাগের উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ। এতে একদিকে শিক্ষা কার্যক্রম যেমন গতিশীল হবে অপরদিকে পরিবর্তন হবে শিক্ষা সংশ্লিষ্ট দৃষ্টিভঙ্গি। গত ৬ মাস ধরে ইউএনও’র সরাসরি তত্ত্বাবধানে মোতাহার হোসেন তোতান, মাহমুদুল হাসান জনি, প্রহল্লাদ কুমার দেবনাথ ও রেজাওনুল হক রিপন নামের ৪ জন আইটি এক্সপার্ট-এর নিরলস পরিশ্রমে এ ওয়েবসাইট উন্নয়নসহ নানা ধরনের এ্যাপস উদ্ভাবনের মাধ্যমে এটি করা হয়েছে।
উপজেলার মাধ্যমিক স্তরের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সকল কার্যক্রম manirampuredu.com নামে ওয়েব সাইটে প্রবেশ করলেই দেখা যাবে। যার সুপার এডমিন (প্রশাসক) হিসেবে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ওয়েব সাইটের মাধ্যমে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় কার্যক্রম পরিচালনাসহ নজরদারি করতে পারবেন। মাধ্যমিক স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান থাকবেন সংশ্লিষ্ট বিদ্যালয়ের এডমিন। এছাড়াও তার সহকারি শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকবৃন্দ পৃথকভাবে (একে অপরের সাথে সংযোগ ছাড়াই) ওই ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় বার্ষিক আয়-ব্যয় থেকে অনলাইন ক্লাস, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, পাঠদান কার্যক্রম (বাৎসরিক সিলেবাস, ক্লাস রুটিন, দৈনিক, সপ্তাহিক, মাসিক, ত্রৈমাসিক পরীক্ষা ও মূল্যায়ন)সহ যাবতীয় কার্যক্রম এ ওয়েবসাইটের মাধ্যমে পরিচালিত করতে পারবেন। এক্ষেত্রে এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তথ্য অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কেউ দেখতে পারবেন না। এমনকি এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান কিংবা সহকারি শিক্ষক কিংবা শিক্ষার্থী-অভিভাববকের কার্যক্রম কার্যক্রম আরেক প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্যরা দেখতে পারবেন না। তবে, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম এডমিন দেখতে পারবেন।
আইটি এক্সপার্ট মোতাহার হোসেন তোতান জানান, আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে এ অনলাইন স্কুল কার্যক্রম শিক্ষা ক্ষেত্রে এক নবযুগের সূচনা করবে। এতে এক নিমিষেই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রধান, সহকারি শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের সকল তথ্য এ ওয়েবসাইটে সমৃদ্ধ থাকবে। যা দৈনিক আপডেট করা যাবে। ঘরে বসেই একজন অভিবাবক তার সন্তানের লেখাপড়ার খোজ নিতে পারবেন। আরেক আইটি এক্সপার্ট মাহমুদুল হাসান জনি জানান, মোবাইল ফোনে বিকাশ এ্যাপস-এর ম্যানুয়াল অনুসরন করে একজন ব্যবহারকারির যে সময়টুকু কাজ করেন, অনরুপ ম্যানুয়াল অনুসরণ করেই সেই সময়ের মধ্যে এটি অপারেট করা যাবে।
উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, এ কার্যক্রম চালু হলে প্রধান শিক্ষকদের ফাইল নিয়ে দৌড়া-দৌড়ি করতে হবে না। উপজেলার ১১৮ টি বিদ্যালয়ের মধ্যে প্রাথমিকভাবে ৩৭টি স্কুল নিয়ে কাজ শুরু হয়েছে বলে তিনি জানান।
অনলাইন স্কুল কার্যক্রমের উদ্যোক্তা উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ জাকির হাসান বলেন, করোনাকালিন শিক্ষা কার্যক্রম ব্যহত হওয়া থেকে বেরিয়ে আসার করণীয় ধারণা থেকেই তিনি এ ধরনের উদ্যোগ গ্রহণ করেন।
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের দিনে এ অনলাইন কার্যক্রম উদ্বোধন করা হয়। উপস্থিত ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান নাজমা খানম, ইউএনও সৈয়দ জাকির হাসান, ভাইস চেয়ারম্যান উত্তম চক্রবর্তী বাচ্চু, কাজী জলি আক্তার প্রমুখ।