আসাদুজ্জামান মিলন, শরণখোলা থেকে: চলতি বছরে ১৫ মার্চ থেকে আগাম মধু আহরণ মৌসুম শুরুর ঘোষণা করেছিলো বন বিভাগ। কিন্তু শরণখোলা রেঞ্জ এলাকার তিন শতাধিক মৌয়ালী বন বিভাগের বর্ধিত সময়ের এ আহবানে সাড়া দেয়নি। তারা অন্যান্য বছরের মতো এবারও ১ এপ্রিল শুক্রবার বিকেলে মধু সংগ্রহের জন্য সুন্দরবনে যাত্রা করেছে। এদিন মৌয়ালদের বনের শরণখোলা স্টেশনসহ অন্যান্য স্টেশন থেকে অনুমতিপত্র দেয়া হয়েছে। বন বিভাগ এ বছর এক হাজার পঞ্চাশ কুইন্টাল মধু সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে বলে বন বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।
বন বিভাগ জানায়, প্রতি বছর ১ এপ্রিল থেকে মধু আহরণের মৌসুম শুরু হয়। কিন্তু এবছর ১৫ দিন আগে অর্থাৎ ১৫ মার্চ থেকে মধুর মৌসুম ঘোষণা করা হেেয়ছিল। কিন্তু ওই সময়ে বনে মধু পাওয়া যাবে না এমন আশংকায় শরণখোলার মৌয়ালরা বনে যায়নি। তারা আগের নিয়মে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহের জন্য ১ এপ্রিল শরণখোলা স্টেশনসহ অন্যান্য স্টেশন অফিস থেকে পাস (অনুমতিপত্র) সংগ্রহ করেন। এপ্রিল থেকে জুন মাস পর্যন্ত মৌয়ালীরা বনে মধু সংগ্রহ করবেন।
শুক্রবার শরণখোলা স্টেশন থেকে ৪৮টি, চাঁদপাই স্টেশন থেকে ১২টি এবং ঢাংমারী স্টেশন থেকে ৫টি নৌকা পাস নিয়েছে। প্রতিটি নৌকায় ৯ জন করে মৌয়াল রয়েছেন। শুক্রবার বিকেলে শরণখোলা স্টেশন থেকে মৌয়ালদের ৩৪ টি নৌকার বহর গভীর বনের নির্দিষ্ট গন্তব্যে রওয়ানা হয়ে যায়। এ সময় শরণখোলা রেঞ্জ কার্যালয় চত্বরে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয়।
শরণখোলার উত্তর সাউথখালী গ্রামের ইলিয়াস হাওলাদার (৪৮) জানান, তিনি দীর্ঘ ২০ বছর ধরে সুন্দরবনে মধু সংগ্রহ করে আসছেন। তারা বন বিভাগের সকল নিয়ম মেনে মধু আহরণ করবেন। এক প্রশ্নের জবাবে মৌয়ালী ইলিয়াস হাওলাদার, ফারুক হাওলাদার, নুরুল ইসলাম তালুকদার জানান, প্রতিবার বন বিভাগের পাস বাবদ রাজস্ব, নৌকা মেরামত, প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী ও সহযোগী মৌয়ালদের অগ্রীম বাবদ ৬০ থেকে ৭০ হাজার টাকা খরচ হয়।
শরণখোলা ফরেস্ট স্টেশন অফিসার আসাদুজ্জামান আসাদ জানান, সুন্দরবনে মধু আহরণের জন্য শুক্রবার বিকালে ৪৮টি নৌকার অনুমতিপত্র (পাশ) দেয়া হয়েছে। প্রতিটি পাসের বিপরীতে তারা ১৪ দিনের জন্য মধু আহরণের সুযোগ পাবেন। তাদেরকে মধু আহরণের সঠিক নিয়ম কানুনের জন্য সংক্ষিপ্ত প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। যাতে তারা মধু আহরণ করতে গিয়ে বনের কোন ক্ষতি করে না ফেলেন।
পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন জানান, এ বছর পূর্ব সুন্দরবনে ১ হাজার ৫০ কুইন্টাল মধু তিনশ কুইন্টাল মোম সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। গত ২০২০-২১ অর্থ বছরে পূর্ব সুন্দরবন থেকে এক হাজার ৪৪ কুইন্টাল মধু ও ৩১৩ কুইন্টাল মোম সংগ্রহ হয়েছিল। এ থেকে ১০ লাখ ৯৬ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছিলো বলে জানান তিনি।