নিজস্ব প্রতিবেদক, মনিরামপুর
শারীরীক অসুস্থতা দেখিয়ে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কর্মস্থলে অনুপস্থিত আছেন যশোরের মনিরামপুর উপজেলার টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র। দুই মেয়াদে মেডিকেল ছুটি নিয়ে কাজে যোগ দিচ্ছেন না তিনি। আগামী ৬ অক্টোবর তার দ্বিতীয় মেয়াদের ছুটি শেষ হবে।
অসুস্থতা দেখিয়ে কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকলেও দিব্যি প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়ানোর অভিযোগ উঠেছে প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্রের বিরুদ্ধে। সর্বশেষ মঙ্গলবার (২৪ সেপ্টেম্বর) তিনি যোগ দিয়েছেন জাতীয়করণের দাবিতে বেসরকারি শিক্ষকদের করা মানববন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) হাতে স্মারকলিপি প্রদান অনুষ্ঠানে। এর আগে এই অনুষ্ঠান সফল করতে কয়েকটি সভায় তার যোগ দেওয়ার কথা জানা গেছে।
বুধবার দুপুরে জানতে চাইলে টেংরামারী সম্মিলনী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক রেজাউল করিম বলেন, প্রধান শিক্ষক স্কুলে আসছেন না। ৫ আগস্টের পর দুইদিন তিনি স্কুলে এসেছেন। এরপর থেকে তিনি মেডিকেল ছুটিতে আছেন। প্রথমবার তিনি বিদ্যালয়ের এডহক কমিটির সভাপতি আব্দুল আলীমের কাছ থেকে ১ মাসের মেডিকেল ছুটি নিয়েছেন। তারপর ইউএনওর কাছ থেকে ২১ দিনের ছুটি নিয়েছেন। আগামী মাসের প্রথম সপ্তাহে তার ছুটি শেষ হবে। এখন আমি স্কুল চালাচ্ছি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাবেক নেতা হিসেবে ক্ষমতার দাপটে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকাসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েন প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর জনরোষের হাত থেকে বাঁচতে বিদ্যালয়ে যাওয়া বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর থেকে টানা মেডিকেল ছুটি কাটাচ্ছেন এই শিক্ষক।
বর্তমানে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির মনিরামপুর উপজেলা শাখার সভাপতি প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সদস্য এক প্রধান শিক্ষক বলেন, মেডিকেল ছুটি নিয়ে বেড রেস্টে থাকার নিয়ম। এখন কেউ যদি এই সুযোগে হালচাষ করে বেড়ান তাকে কে আটকাবে। শিক্ষক প্রভাস চন্দ্র সমিতির নেতা হিসেবে সম্প্রতি মানববন্ধন নিয়ে আমাদের সাথে কয়েকটি বৈঠকে যোগ দিয়েছেন। সেখানে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম খানও উপস্থিত ছিলেন।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবাইলে যোগাযোগ করা হয় প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্রের সাথে। তিনি ব্যস্ততার কথা বলে ফোন কেটে দেন।
এই বিষয়ে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আকরাম হোসেন খান বলেন, পরিস্থিতির কারণে অনেক শিক্ষক ৫ আগস্টের পর থেকে প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছেন না। ফরমালিটি রক্ষা করতে অনেকে মেডিকেল ছুটিতে আছেন। ছুটি নিয়ে প্রধান শিক্ষক প্রভাস চন্দ্রের মানববন্ধনে যোগ দেওয়া বা অন্য কাজ করাতে দোষের কিছু দেখছি না।
মনিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত তামান্না বলেন, অসুস্থতা দেখিয়ে মেডিকেল ছুটি নিয়ে অন্য কর্মকা-ে যোগ দেওয়ার অভিযোগ সত্য হলে ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।