নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, রেজিস্ট্রারসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকালে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই আল্টিমেটাম দেন। একই সাথে বেধে দেওয়া সময়ের মধ্যে উপাচার্য সসম্মানে পদত্যাগ না করলে তার অবস্থাও শেখ হাসিনার মতো হবে বলে হুশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
এর আগে মঙ্গলবার সকালে ভিসিসহ তার অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে চলমান আন্দোলনের কর্মসূচির অংশ হিসাবে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেন শিক্ষার্থীরা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে ভিসির পদত্যাগসহ তাদের অনিয়ম দুর্নীতিরও বিচার করা হয়। একই সাথে ভিসিকে ‘স্বৈরাচার ও শেখ হাসিনার দালাল’ আখ্যা দিয়ে বিভিন্ন স্লোগানও দেন তারা।
এদিকে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্মকর্তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান।
মঙ্গলবার বিকেলে প্রেসক্লাব যশোরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ‘অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন ২০১৭ সালের ২০মে ভাইস চ্যান্সেলর পদে যোগদান করেন। চাকরির প্রথম মেয়াদে তার বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। ৫৫টি অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি ২০২১ সালের ১৯ মে ভিসি পদের প্রথম মেয়াদ শেষ করেন। একই বছরের ১ জুন দ্বিতীয় মেয়াদে ভিসির দায়িত্ব পান তিনি।
দ্বিতীয় মেয়াদে নানা দুর্নীতির মধ্যে তার বিরুদ্ধে যবিপ্রবির ১০ কোটি টাকার ১৪ লিফট স্থাপনে অর্ধেকের বেশি লুটপাটের অভিযোগ ওঠে। নিয়োগ বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে তার বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন করেন খোদ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
সংবাদ সম্মেলনে বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সাইন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাদেকা শাহানী ঊমি বলেন, ‘আমরা যখন বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন শুরু করি, তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রবাসে বহিরাগত, বহিস্কারকৃত ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা এসে আন্দোলনরত কয়েকজন শিক্ষার্থীকে মারধর করে। তখন ভিসি আমাদের নিরাপত্তা দিতে পারেননি। তিনি যখন তার শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার দায়িত্ব দিতে পারেননি, তখনই ভিসির দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়ানো উচিত ছিলো। কিন্তু তিনি তার দুনীর্তির তথ্য লোপাট করতে পদত্যাগ করছেন না। আমরা গত দুই সপ্তাহ থেকে আন্দোলন করছি, সেই আন্দোলনের কোন গুরুত্ব না দিয়ে তিনি তার পদেই আছেন। এই দুর্নীতিবাজ ভিসি ও রেজিস্ট্রারসহ তার অনুসারীরা যদি ২৪ ঘন্টার মধ্যে পদত্যাগ না করলে তার অবস্থা শেখ হাসিনার মতো হবে। একই সাথে আমরা জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে শিক্ষা উপদেষ্টার কাছে স্মারকলিপি দিবো।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল এন্ড প্রোডাকশন ইজ্ঞিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী সজীব হোসেন বলেন, ‘এই ক্যাম্পাসে যে সকল শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী যারা দুর্নীতির মাধ্যমে চাকরি নিয়েছেন তাদেরকেও সসম্মানে পদত্যাগের দাবি জানাই। শিক্ষার্থীদের পূর্ণ মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দিতে হবে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় একটি গবেষণাধর্মী বিশ্ববিদ্যালয় তাই আমরা এই ক্যাম্পাসে কোন ধরণের রাজনীতি চাই না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে ছাত্র সংসদ নির্বাচিত করে তারাই ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের দাবি আদায়ে কাজ করবে।’ সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন শিক্ষার্থী হাবিব আহমেদ শান্ত, সিয়ামুল ইসলাম, আবু দাউদ মহির, ফারজানা ইয়াসমিন কেয়া, অরত্রিকা হক শ্রেষ্ঠা প্রমুখ।
পদত্যাগের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আল্টিমেটামকে আমি গুরুত্ব দিচ্ছি না। ইতোমধ্যে আমি পদত্যাগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। পদত্যাগপত্র স্বাক্ষরও করেছি। কিন্তু চলমান ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয়ের গুচ্ছ ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়ক আমি। শিক্ষার্থীদের আমানতের দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করতে পারছি না। সময় হলেই সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আমার পদত্যাগ জমা দিবো।’ তবে তিনি শিক্ষার্থীদের আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘আমার পদত্যাগের জন্য আন্দোলন করতে হবে না। সময় হলেই আমি সরে যাবো। বরং শিক্ষার্থীদের উচিত তাদের ক্লাসে, ল্যাবে ফিরে যাওয়া। কারণ পড়াশোনা করে মানুষ হয়ে তাদেরকেই দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগ করতে হবে।’
এদিকে, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়েছে। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান। মঙ্গলবার (২০ আগস্ট) দুপুর ১২ টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্য ও তার অনুগতদের পদত্যাগের দাবিতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি কাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমানের ডরমেটরির বাসার সামনে অবস্থান নিয়ে বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকে। পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন ট্রেজারার আনিছুর রহমান।
এছাড়া মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, উপাচার্যের একান্ত সচিব ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং সোমবার রাতে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন শহিদ মসীয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট বডি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ড. মো. আহসান হাবীব নিশ্চিত করেছেন।
এবিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী মো: আহসান হাবীব জানান, তারা লিখিত আবেদনের মাধ্যমে অব্যাহতি চেয়েছেন এবং ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে পদত্যাগ করেছেন।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার থেকে শিক্ষার্থীরা উপাচার্য, ট্রেজারার, রেজিস্ট্রার, হল প্রভোস্ট, প্রক্টর, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য ড. ইকবাল কবির জাহিদসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের দাবিতে কর্মসূচি শুরু করে। ওই দিন একই দাবিতে যবিপ্রবিতে বঙ্গবন্ধু ম্যুরাল, শেখ হাসিনা’র ম্যুরাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একাডেমিক ভবনের বঙ্গবন্ধুর নাম ও বঙ্গবন্ধু একাডেমিকের গ্যালারির সামনে ছবি ভাস্কর্য্য ভাঙচুর করে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা। এছাড়া সোমবার বিক্ষোভকারীরা উপাচার্যের কুশপুত্তলিকাও পুড়িয়েছে।