নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন পদত্যাগ করেছেন। বুধবার (২১ আগস্ট) মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় চ্যান্সেলর বরাবর অব্যাহতিপত্র জমা দিয়ে তিনি এই পদত্যাগ করেন। এর আগে মঙ্গলবার প্রেসক্লাব যশোরে সংবাদ সম্মেলন করে তার পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘণ্টা সময়সীমা বেঁধে দেন পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। এর আগে যবিপ্রবি’র ট্রেজারারসহ বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা পদত্যাগ করেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিবের মাধ্যমে মহামান্য রাষ্ট্রপতি ও মাননীয় চ্যান্সেলর বরাবর অব্যাহতিপত্রে বিদায়ী উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেছেন, ২০২১ সালের ৩ জুন দ্বিতীয় মেয়াদে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে যোগদান করি। আমার মেয়াদ পূর্তির তারিখ ২০২৫ সালের ২ জুন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদান থেকেই পরিলক্ষিত হয় যে, যশোর শহরের রাজনীতির মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ন্ত্রিত হতো। বর্তমানে শহরের রাজনীতি থেকে মুক্ত হয়ে একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি হয়েছে। আমি চিকিৎসার জন্য গত ১ আগস্ট রিয়াদ নেমে ৯ আগস্ট ব্যাংককে মেডিকেল ছুটি শেষে যোগদান করি।
প্রায় দুই মেয়াদে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়নের জন্য ২০১৪ সালের এডিবি উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করে রিপোর্ট ইতোমধ্যে প্রদান করা হয়েছে। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়টি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা ল্যাবে সজ্জিত পূর্ণাঙ্গ উন্নতমানের একটি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
এছাড়াও এ বিশ্ববিদ্যালয়ের Intellectual Property Rights ও বিভিন্ন product উদ্ভাবনের সক্ষমতা রয়েছে। Centre for sophisticated Instrumentation and Research Laboratory (CSIRL) তে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে প্রযুক্তিগত বাণিজ্যিক সহায়তা প্রদান করা হয়ে থাকে। করোনা মহামারি চলাকালে এ বিশ্ববিদ্যালয়টি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের মধ্যে সর্বপ্রথম করোনা সনাক্তকরণ ও করোনা সম্মন্ধে বৈজ্ঞানিক গবেষণা শুরু হয়। এমনকি বিদেশগামীদেরও করোনা সনাক্তকরণের সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। রাষ্ট্রের বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিকে সহায়তা করার সক্ষমতা এ বিশ্ববিদ্যালয় ইতোমধ্যে অর্জন করেছে। উত্তরোত্তর বিভিন্ন বিভাগ ও অনুষদের উন্নয়নের মধ্য দিয়ে এটি আধুনিক একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলমগীর এর সভাপতিত্বে অন্যান্য ইউজিসির সদস্যবৃন্দের উপস্থিতিতে ইউজিসিতে আয়োজিত সভায় আমাকে এঝঞ-২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সমূহের ভর্তি আহ্বায়ক করা হয়। ২১ আগস্ট পর্যন্ত আমি ও অন্যান্য সদস্যবৃন্দ ও শিক্ষকের সহায়তায় এই দায়িত্ব সুষ্ঠু ও নিষ্ঠার সাথে পালন করে আসছি। বিদ্যমান অবস্থায় আমার পক্ষে এই দায়িত্ব পালন করা সম্ভব নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দ্রুত বেগে ধাবমান। একাডেমিক ও দাপ্তরিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চলমান থাকায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জট শূন্যের কোটায় অবস্থান করছে। কিন্তু বর্তমান অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি অস্থিরতা বিরাজমান এবং পুণরায় প্রশাসনিক স্থবিরতার কারণে আবারও সেশন জট হওয়ার অবস্থা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এমতাবস্থায়, আমায় পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করা সম্ভব নয়। আমি ২২ আগস্ট থেকে আমার উপর যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যলয়ের উপাচার্য হিসেবে অর্পিত দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য বিনীতভাবে অনুরোধ করছি।
এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, ‘ছাত্র-জনতা গণঅভ্যূত্থানে যে নতুন সরকার গঠিত হয়েছে, তাকে স্বাগত জানাই এবং তাদের সাফল্য কামনা করে। তবে দেশের প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে অস্থিরতা চলছে এবং জোরপূর্বক ভিসি, প্রোভিসিদের পদত্যাগ করানোর ঘটনা ঘটেছে তা খুবই নিন্দনীয়। এই কালচার বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি আর উল্লেখ করেন, ‘বর্তমান শিক্ষা উপদেষ্টা একজন স্বনামধন্য, অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় শিক্ষাবিদ। আমি বিশ্বাস করি তার নেতৃত্বে দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষার সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে এবং রাজনীতিমুক্ত পরিবেশে শিক্ষার্থীরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রকৃত শিক্ষা অর্জন করতে পারবে।’
এদিকে, এর আগে উপাচার্য, রেজিস্ট্রারসহ উপাচার্যের অনুসারীদের পদত্যাগের জন্য ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মঙ্গলবার বিকালে যশোর প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে তারা এই আল্টিমেটাম দেন।
তবে এর আগেই যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (যবিপ্রবি) দায়িত্বে থাকা শীর্ষ কর্তাদের প্রশাসনিক পদ থেকে পদত্যাগের হিড়িক পড়ে। সর্বশেষ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে পদত্যাগ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার অধ্যাপক ড. মো. আনিছুর রহমান। এছাড়া মঙ্গলবার সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন প্রশাসক ড. মো: জাহাঙ্গীর আলম রেজিস্ট্রার বরাবর পদত্যাগপত্র জমা দেন। এর আগে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি, উপাচার্যের একান্ত সচিব ও ভেটেরিনারি মেডিসিন অনুষদের ডিন স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন এবং সোমবার রাতে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করেন শহিদ মসীয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট বডি। বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার প্রকৌশলী ড. মো. আহসান হাবীব নিশ্চিত করেন।