নিজস্ব প্রতিবেদক
তথ্য প্রযুক্তি খাতকে এগিয়ে নিতে এবং ডিজিটাল বাংলাদেশের জন্য জ্ঞানভিত্তিক শিল্প স্থাপনের উদ্দেশ্য নিয়ে তৈরি হয়েছিল যশোর শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক। উদ্বোধনের পরে হাজারো মানুষের কর্মসংস্থানের সঙ্গে হাতছানি দিয়েছিলো দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পের উন্নয়ন ও উদ্যোক্তা সৃষ্টির। এখন সেই আইটি পার্ক বিনিয়োগকারীদের কাছে ক্ষোভ আর হতাশার নাম। বর্তমানে নানা সংকট সমস্যার মধ্যে দিয়ে অতিবাহিত করছেন পার্কটির বিনিয়োগকারীরা। ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতির কাছে মুক্ত আলোচনা ও মতবিনিময় সভায় নিজেদের সমস্যা, ক্ষোভ হতাশা আর সম্ভাবনার কথা তুলে ধরলেন পার্কটির বিনিয়োগকারীরা।
শনিবার দুপুরে ‘শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক : চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভার আয়োজন করে পার্কটির বিনিয়োগকারীদের সংগঠন শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টর অ্যাসোসিয়েশন। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় সংসদ সদস্য কাজী নাবিল আহমেদ। এতে বক্তব্য রাখেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিনিয়োগকারীরা। মুক্ত আলোচনাতে বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন সমস্যার কথা তুলে ধরেন।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ শাহজালাল বলেন, ‘এটি দেশের প্রথম আইটি পার্ক। ফলে সবকিছুতেই মডেল হতে পারত পার্কটি। কিন্তু সরকার এটিতে সেভাবে মনোযোগ দেয়নি। দেশের প্রথম আইটি পার্কের লক্ষ্য বাস্তবায়ন না হওয়াতে নতুন করে এই সেক্টরে বিমুখ হচ্ছে তরুণ উদ্যোক্তারা। পার্কের বর্তমান তথ্য উপস্থাপন করে তিনি বলেন, ‘পার্কটিতে লক্ষ্য অনুযায়ী কর্মসংস্থান হয়নি। বিনিয়োগের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। কারণ, বেশির ভাগ বিনিয়োগকারী ই-কমার্স, কল সেন্টার, ইন্টারনেট সেবা ও ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে কাজ করে। সফটওয়্যার টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান নগণ্য। পার্কটিতে জায়গা নেওয়া ৬১ টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৪৪ টি প্রতিষ্ঠান বর্তমানে অপারেশনে রয়েছে। এর মধ্যে স্থানীয় ৩১টি আর ১৩টি ঢাকার প্রতিষ্ঠান। বিদেশী প্রতিষ্ঠান থাকলেও তারা চলে গেছে। বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে প্রথমদিকে চুক্তিবদ্ধ ৩৩টির মধ্যে ১৪টি কোম্পানি রয়েছে পুরনো। বাকীগুলো সব নতুন কোম্পানি। পার্কটির প্রধান সমস্যা ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল। যশোরের বাস্তবতায় এই ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল অনেক অংশেই বেশি।’

মহিদুল ইসলাম নামে এক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘এই আইটি পার্ক দেশের প্রথম। এই সরকারের উন্নয়নের চিত্র দেখানো হলে এই পার্কটি দেখানো হয়। অথচ পার্কটি সরকারের একটি নান্দনিক বিন্ডিং ছাড়া ওখানে কিছুই নাই। নানা সংকট রয়েছে। একই সাথে পণ্য বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের কোন উদ্যোগ নেই বলে তিনি জানান।
পারভেজ মাহমুদ হিরা নামে আরেক বিনিয়োগকারী বলেন, ‘স্থানীয় অর্থনীতি শক্তিশালী করার জন্য এই পার্ক নির্মিত হয়েছিলো। দিনকে দিন পর্যাপ্ত দক্ষ জনবলের কারণে স্থানীয় কোম্পানি শুন্য হয়ে যাচ্ছে। অনেক স্বপ্ন নিয়ে উদ্যোক্তরা এখানে এসেছিলো। তবে কাক্সিক্ষতভাবে কাজ করতে না পেরে স্থানীয় উদ্যোক্তা দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে। এই উদ্যোক্তাদের বাঁচিয়ে রাখতে দ্রুতই উদ্যোগ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।’
সংগঠনের সভাপতি আহসান কবীর বলেন, ‘পার্কটিতে টিকে থাকার সংখ্যা কম। পার্কটিতে আইকনিক ভবন রয়েছে। কিন্তু ভবনের ভিতরে যে কার্যক্রম সেটা বিকাশিত হচ্ছে না। ভালো ভালো উদ্যোক্তা থাকলেও নানা সমস্যায় প্রতিবন্ধকতায় আটকে যাচ্ছে তারা। তার পরেও এখানকার উদ্যোক্তারা হাল ছাড়ছে না। এসব উদ্যোক্তরা শেখ হাসিনার নামে এই পার্কটি যে উদ্দেশ্য নির্মিত হয়েছিলো সেই লক্ষে কাজ করে যাবে। সে সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা প্রয়োজন। তিনি করোনাকালীন সময়ে এখানকার বিনিয়োগকারীদের ভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল মওকুফ করার দাবি জানান।’
মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি বাংলাদেশ ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদ বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ তৈরিতে সরকার অনেক কিছুই ধরে ধরে পরিবর্তন করছে। তারই অংশ হিসেবে যশোরের শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক নানানভাবে অর্থবহ করা হবে। ডিজিটালে দেশকে এগিয়ে নিতে দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ককে আরো কর্মমুখী করতে সকল প্রকার উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করবে। একই সাথে এখানকার বিনিয়োগকারীদের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস প্রদান করেন তিনি।’
সংগঠনের সভাপতি আহসান কবীরের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ডিরেক্টর (টেকনিক্যাল) ব্যারিস্টার গোলাম সরওয়ার ভুইয়া, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী, প্রেসক্লাব যশোরের সভাপতি জাহিদ হাসান টুকুন, টেকসিটি বাংলাদেশ লিমিটেডের নির্বাহী পরিচালক হারুন অর রশিদ, ৯ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান বাবুল। বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আরো বক্তৃতা করেন ইমানুর রহমান ইমন, অজয় দত্ত, আরিফুল হাসনাত, উজ্জ্বল বিশ্বাস, আনিকা হাসান প্রমুখ।
মতবিনিময় সভা শেষে শেখ হাসিনা সফটওয়্যার টেকনোলজি পার্ক ইনভেস্টরস এ্যাসোসিয়েশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট, দি বাংলাদেশ ইকো সিস্টেমের রি-ব্রান্ডিং, বর্ণ আইটির জনসচেতনতায় ডিজিটাল কনটেন্ট শীর্ষক একটি ইউটিউব চ্যানেল ‘ডিজিটাল টেক’ কেক কেটে উদ্বোধন করেন কাজী নাবিল আহমেদ। একই সাথে তিনি টেকনোসফট গ্লোবাল লিমিটেডের ই-সমবায় সফটওয়্যার উদ্বোধন এবং এ্যাবাকাস সফট বিডি লিমিটেডের অফিস পরিদর্শন করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মেহেদী হাসান মিন্টু, উপপ্রচার সম্পাদক লুৎফুল কবীর বিজুসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা, বিনিয়োগকারীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিবর্গ অংশ নেন।