নিজস্ব প্রতিবেদক
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যশোরের ৬টি সংসদীয় আসনে ৩২ জন সংসদ সদস্য প্রার্থীর মধ্যে ২০ জন জামানত হারিয়েছেন। এর মধ্যে জাতীয় পার্টির ছয়জনসহ অন্য রাজনৈতিক দলের প্রার্থীদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। পাশাপাশি আওয়ামী লীগের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী ছাড়া অন্য চারজন জামানত বাঁচাতে পেরেছেন। জামানত হারানো প্রার্থীদের মধ্যে অন্য দলগুলো হচ্ছে- তৃণমূল বিএনপি (সানালি আঁশ), ইসলামি ঐক্যজোট (মিনার), বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব), বিএনএফ (টেলিভিশন), বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন (বটগাছ), বিকল্পধারা বাংলাদেশ (কুলা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (নোঙার) ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টি (আম)। এসব প্রার্থীদের জামানত চার লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী, কোনো আসনে প্রদত্ত ভোটের আট ভাগের এক ভাগ ভোট কোনো প্রার্থী যদি না পান, তাহলে তার জামানত বাজেয়াপ্ত হবে। সে অনুযায়ী জেলা রিটানিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ঘোষিত ফলাফল বিশ্লেষণ করে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
জেলা নির্বাচন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রত্যেক প্রার্থীকে ২০ হাজার টাকা জামানত দিতে হয়েছিল। যা ইসি সচিবের নামে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ব্যাংকে রাখতে হয়েছিল। আইন অনুযায়ী, এই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা হবে। সেই হিসেবে যশোরে জামানত হারানো ২০ প্রার্থীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমা হবে।
প্রাপ্ত বেসরকারি ফলাফলে জানা গেছে, যশোর- ১ (শার্শা) আসনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ২৮ হাজার ৯৯৬। যা মোট ভোটরের শতকরা ৪৩ দশমিক ৭৭ ভাগ। এই আসনে জামানত বাঁচাতে প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট দরকার ছিল ১৬ হাজার ১২৫ ভোট। কিন্ত জাতীয় পার্টির আক্তারুজ্জামান মাত্র ২ হাজার ১৫১ ভোট পাওয়ার তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর- ২ (ঝিকরগাছা ও চৌগাছা) আসনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ৯৩ হাজার ৯৯৭। যা মোট ভোটরের শতকরা ৪২ দশমিক ৪৭ ভাগ। এই আসনে জামানত বাঁচাতে প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট দরকার ছিল ২৪ হাজার ২৫০ ভোট। কিন্ত এ আসনে ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা এসএম হাবিবুর রহমান ২২২ ভোট, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী আব্দুল আওয়াল ১ হাজার ২৪৫ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ফিরোজ শাহ ১ হাজার ৯৫০ ভোট এবং বিএনএফের প্রার্থী শামসুল হক ১২০০ ভোট পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-৩ (সদর) আসনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোট ২ লাখ ৪৬৫। যা মোট ভোটারের শতকরা ৩৪ দশমিক ৫৬ ভাগ। এই আসনে জামানত বাঁচাতে প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট দরকার ছিল ২৫ হাজার ৫৯ ভোট। কিন্ত এ আসনে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের প্রার্থী মোহাম্মদ তৌহিদুজ্জামান ১ হাজার ২৪৬ ভোট, তৃনমূল বিএনপির প্রার্থী মো. কামারুজ্জামান ৩৮৯ ভোট, বিকল্পধারার প্রার্থী মারুফ হাসান কাজল ৫৫৫ ভোট, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মাহাবুব আলম বাচ্চু ৩ হাজার ৭১০ ভোট, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী শেখ নুরুজ্জামান ২২৪ ভোট ও ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির সুমন কুমার রায় ৬৩৩ ভোট পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর -৪ (বাঘারপাড়া ও অভয়নগর) আসনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোট ২ লাখ ৫ হাজার ৩৩০। যা মোট ভোটরের শতকরা ৪৭ দশমিক ৩২ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট দরকার ছিল ২৫ হাজার ৬৬৭ ভোট। কিন্ত এ আসনে বিজয়ী আওয়ামী লীগের প্রার্থী এনামুল হক বাবুল ছাড়া সকল প্রার্থীর জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। এ আসনে জাতীয় পার্টির জহুরুল হক পেয়েছেন ১০ হাজার ৩৪৬ ভোট, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী এম শাব্বির আহমেদ পেয়েছেন ১ হাজার ৬৬৬ ভোট, স্বতন্ত্র প্রার্থী রণজিৎ কুমার রায় পেয়েছেন ৫৮৬ ভোট, ইসলামী ঐক্যজোটের মো. ইউনুছ আলী পেয়েছেন ৪ হাজার ১৫৩ ভোট এবং বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের প্রার্থী সুকৃতি কুমার মন্ডল পেয়েছেন ৪২৩ ভোট।
যশোর-৫ (মণিরামপুর) আসনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ৫৪ হাজার ৯০২। যা মোট ভোটারের শতকরা ৪৩ দশমিক ৫১ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট দরকার ছিল ২৫ হাজার ৫৯ ভোট। কিন্ত এ আসনে জাতীয় পার্টির এমএ হালিম ৬২৪ ভোট, তৃণমূল বিএনপির আবু নসর মোহাম্মদ ২৩৬ ভোট এবং ইসলামি এক্যজোটের প্রার্থী হাফেজ মওলানা নুরুল্লাহ আব্বাসী ৮০৬ ভোট পাওয়ায় তাদের জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর-৬ (কেশবপুর) আসনে সর্বমোট প্রদত্ত ভোট ১ লাখ ৮ হাজার ৩১৭। যা মোট ভোটরের শতকরা ৪৯ দশমিক ৭০ ভাগ। জামানত বাঁচাতে প্রার্থী প্রাপ্ত ভোট দরকার ছিল ১৩ হাজার ৫৪০ ভোট। কিন্ত এ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী জিএম হাসান মাত্র ৬৪০ ভোট পাওয়ায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
যশোর জেলার ছয়টি সংসদীয় আসনে ভোটারের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫৫ জন। পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৭৬ হাজার ১০৫ জন, নারী ভোটারের সংখ্যা ১১ লাখ ৬২ হাজার ৯৫৩ জন। তৃতীয় লিঙ্গের ভোটার রয়েছেন ১৫ জন। জেলায় ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ৮২৫টি ও ভোটকক্ষের সংখ্যা ৫২১৭টি।