নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে নিজ বাড়ির সামনে মীর সাদী (৩২) ন্যমে এক যুবককে গুলি করে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাত সাড়ে এগারোটায় শহরের রেলরোড পঙ্গু হাসপাতালের পেছনে নিজ বাড়ির সামনে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাত পৌনে একটার দিকে মারা যান সাদী। নিহত সাদী রেলগেট এলাকার শওকতের ছেলে।
সাদীর স্বজনেরা জানান, শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকার বাবুর ছেলে ট্যাটু সুমন, আশ্রম রোডের আলীর ছেলে মেহেদী চাঁদা দাবি করেছিল সাদীর কাছে। তার জেরেই সোমবার রাতে সাদীকে নিজবাড়ির সামনে তাকে ৬ থেকে ৭ রাউন্ড গুলি করে পালিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা।
অপর একটি সূত্র জানিয়েছে, সাদী চিহ্নিত সন্ত্রাসী ম্যানসেলের সহযোগি ছিল। সম্প্রতি ম্যানসেলের সাতে সাদীর নানা বিষয়ে মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। তারপর থেকে সাদী আলাদা গ্রুপ করে চলাফেরা করতো। আওয়ামী লীগের ছত্রচ্ছায়ায় থাকা সাদী ৫ আগষ্টের পর গা ঢাকা দেয়। গত কয়েকদিন সে আবার এলাকায় ফেরে। সাদীর নামে কোতোয়ালি থানায় বিভিন্ন মামলা রয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করেন। কিন্তু, অবস্থা গুরুতর হওয়ায় তাকে সেখান থেকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে অবস্থার অবনতী হলে ঢাকায় নেওয়ার পথে রাত পৌনে ১টার দিকে মারা যান সাদী।
যশোর জেনারেল হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক সাকিরুল জানান, সাদীর বুক ও গলায় দুটি গুলি লেগেছে। তাকে আইসিইউ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল।
যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাজী বাবুল জানান, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর-ই-আলম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থলে রয়েছেন। ঘটনাস্থলের আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।
জড়িতদের ধরতে শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে বলে ওসি জানান।
পুলিশ বলছে, সাদী যশোরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও ত্রাস ম্যানসেলের প্রধান সহযোগী ও ম্যানেজার। তার নেতৃত্বে রেলগেট এলাকায় মাদকবিক্রি, চাঁদাবাজি, হাটবাজার ইজারার নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদী। সাদীকে যারা হত্যা করেছে তারাও ম্যানসেলের সহযোগী। রাজনৈতিক পটপরিবর্তন পর ম্যানসেল আত্মগোপনে চলে যায়। ফলে রেলস্টেশন বাজার ও রেলগেট এলাকার চাঁদার টাকা ম্যানসেলকে দেওয়া বন্ধ করে দেয় সাদী। চাঁদার টাকা না পেয়ে ম্যানসেল তার আরেক সহযোগীদের দিয়ে সাদীকে হত্যা করেছে বলে ধারণা করছে পুলিশ ও স্থানীয়রা।
ঘটনার পর যশোর পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। হাসপাতালে যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নূর ই আলম সিদ্দিকী সাংবাদিকদের জানান, ‘কারা কি কারণে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সেটা পুলিশ তদন্ত করছে। নিহত সাদী সন্ত্রাসী ও যাদের নাম আসছে তারাও সন্ত্রাসী। সকলের বিরুদ্ধে থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। যারা এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে, তাদের গ্রেফতারে অভিযানে শুরু করেছে পুলিশ।’
এদিকে স্থানীয়রা জানান, ২০১৩ সালের ৯ ডিসেম্বর যশোর শহরের কোর্ট মোড়ে হত্যার শিকার হন তৎকালীন জেলা ছাত্রদলের সহ সভাপতি কবির হোসেন পলাশ। ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন সাদী। হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে মোটরসাইকেলে পালানোর সময় শহরের অন্য প্রান্ত পালবাড়ি ভাস্কর্য মোড়ে দুর্ঘটনার শিকার হন সাদী। ওই দুর্ঘটনার পর চিকিৎসায় তার এক পা কেটে ফেলতে হয়। এক পা হারিয়েও আওয়ামী লীগের দীর্ঘ ক্ষমতার প্রভাবে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করে আসছিলেন।
স্থানীয় একাধিক সূত্র জানিয়েছে, নিহত সাদী ও হামলাকারী ট্যাটু সুমন যশোরের বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহবুব রহমান ম্যানসেল বাহিনীর সদস্য। ২০২৩ সালের ৫ মার্চ দুপুরে যশোর শহরের সরকারি প্রতিবন্ধী সেবা ও সাহায্য কেন্দ্রে শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলের নেতৃত্বে হামলা ও মারপিটের ঘটনা ঘটে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে সন্ত্রাসী ম্যানসেল ও তার তিন সহযোগীকে আটক করে। আটক তিন সহযোগীর মধ্যে মীর সাদী আহমেদ ও মেহেদীও ছিল। আর পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গিয়েছিল ট্যাটু সুমন। ওই ঘটনার পর যশোর শহর যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক পদ থেকে ম্যানসেলকে বহিষ্কার করা হয়।
এর আগে ২০২২ সালের ২১ অক্টোবর যশোর কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী সুমন ওরফে ট্যাটু সুমনকে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলিসহ গ্রেফতার করেছিল। ট্যাটু সুমন শহরের টিবি ক্লিনিক এলাকার কানা বাবু ওরফে আফজালের ছেলে। সুমনের বিরুদ্ধে ছিনতাই, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অভিযোগে প্রায় ডজনখানেক মামলা রয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বহিষ্কৃত যুবলীগ নেতা ও শীর্ষ সন্ত্রাসী ম্যানসেলসহ তার বাহিনীর সদস্যরা গা-ঢাকা দেয়। সম্প্রতি তাদের কেউ কেউ আবার এলাকায় ফিরতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে তাদের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে সাদী খুন হলো বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানিয়েছে।