নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোর শিক্ষাবোর্ডে চেক জালিয়াতির মাধ্যমে ৭ কোটি টাকা লোপাটের ঘটনায় পলাতক কর্মচারি আবদুস সালাম শোকজের জবাব দিয়েছেন। গতকাল রোববার ডাকযোগে বোর্ড কর্তৃপক্ষের কাছে পৌঁছেছে জবাবটি। এতে সালাম জালিয়াতির সাথে শিক্ষা বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, বোর্ডের অন্যান্য কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবুর সম্পৃক্ততায় একাজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন।
এদিকে বোর্ড কর্তৃপক্ষ আবদুস সালামের শোকজের জবাবটি পরীক্ষা নিরীক্ষার জন্য তিন সদস্যর কমিটি গঠন করেছে। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক মাধব চন্দ্র রুদ্রকে প্রধান করে উপ-কলেজ পরিদর্র্শক মদন মোহন ও উপ-সচিব জাহাঙ্গির আলমকে কমিটির সদস্য করা হয়েছে। এই কমিটিকে পরবর্তীতে করনীয় ঠিক করতে বলা হয়েছে।
গত ২২ ফেরুয়ারি বোর্ডের হিসবা সহকারী আবদুস সালামকে শোকজ করা হয়েছিল। ১০ কর্মদিবসে তাকে জবাব দিতে বলা হয়। গত ৫ মার্চ আবদুস সালাম শোকজ নোটিশ জবাবের সময় বৃদ্ধির আবেদন করেন। কিন্তু বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাতে সাড়া না দেয়ায় গতকাল ৯ মার্চ ডাকযোগে শোকজ নোটিশের জবাব পাঠান। গতকাল রোববার সেই নোটিশ হাতে পেয়েছেন বোর্ড কর্তৃপক্ষ।
বিষয়টি নিশ্চিত করে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক আহসান হাবীব জানান, আমরা সালামের শোকজ নোটিশের জবাব গতকাল হাতে পেয়েছি। এজন্য পরবর্তীতে করণীয় ঠিক করতে তিন সদস্যর কমিটি গঠন করা হয়েছে। তারা সিদ্ধান্ত দেবেন কর্মচারি সালামের বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেয়া হবে। তদন্ত কমিটির প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক মাধব চন্দ্র রুদ্র জানান, এখনও শোকজ নোটিশের জবাবের কপি হাতে পাইনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বোর্ডের একাধিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, আবদুস সালাম ৭ কোটি টাকা জালিয়াতির সাথে সাবেক চেয়ারম্যান মোল্লা আমীর হোসেন, কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি ও ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু জড়িত। তিনি ঘটণার শিকার বলে দাবি করেছেন।
২০২১ সালের ৭ অক্টোবর যশোর শিক্ষা বোর্ডের ৩৮টি চেকে জালিয়াতির মাধ্যমে লোপাট করা হয় ৭ কোটি টাকা। এই ঘটণার পর বোর্ড কর্তৃপক্ষ যশোর দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) লিখিত অভিযোগ করেন। তদন্তে নেমেই দুদক দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়ায় মামলা করেন। এতে আসামি করা হয় ৫ জনকে। এরা হলেন শিক্ষাবোর্ডের তৎকালীন চেয়ারম্যান ড. মোল্লা আমীর হোসেন, সচিব অধ্যাপক এএমএইচ আলী আর রেজা, কর্মচারী আব্দুস সালাম, জালিয়াতি চক্রের প্রধান ভেনাস প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিংয়ের মালিক শরিফুল ইসলাম বাবু ও শেখহাটী জামরুলতলার শাহীলাল স্টোরের মালিক আশরাফুল আলম।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ হন দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক নাজমুচ্ছায়াদাত। মামলার কাজ যখন এগিয়ে যাচ্ছিল তখন (ডিসেম্বরে) তদন্তকারী কর্মকর্তা বদলি হন। নতুন উপপরিচালক হিসেবে মো. আল আমিন যোগদান করেন। তার যোগদান ৩ মাস পার হলেও এখনো পর্যন্ত তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ বোর্ড কর্মচারী আব্দুস সালাম গত বছর অক্টোবরে দুই দফায় প্রায় ৩১ লাখ টাকা ফেরত দিলেও অদ্যাবধি আর কোন টাকা পরিশোধ করেননি। শিক্ষাবোর্ড সূত্র জানিয়েছে, আত্মস্বীকৃত দুর্নীতিবাজ আব্দুস সালাম ঠিকাদারী কাজে খুলনা-বাগেরহাট-সাতক্ষীরা এলাকায় যাতায়াত করছে।
গত ৭ ফেরুয়ারি জেলা প্রশাসন ও দুদক কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে সালামের তালাবদ্ধ কক্ষটি খুলে দেয়া হয়। আলমারির তালা ভেঙ্গে পাওয়া যায় জাল চেক, সিল ও প্যাড।