অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান
পরিচালনা করা হবে : জেলা প্রশাসক
অনেক ভাটা পুনরায় চালু হয়েছে।
যা দুঃখজনক : সহকারী পরিচালক
জাহিদুল কবীর মিল্টন: অভিযোগ পাওয়া যায়, নিয়ম না মানায় জরিমানা করা যশোর শহরতলীর রাজারহাট ও সতীঘাটায় ভৈরব ব্রিকস ও সাহা ব্রিকস নামে দুইটি ভাটা ফের অবৈধভাবে কার্যক্রম চালাচ্ছে। জরিমানা ছাড়াও ওই সময় অভিযানকালে ভাটা দুটির কিছু অংশ ভেঙে দেয়া হয়। এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করতে গিয়ে ভয়াবহ তথ্য দেন দুটির এক ভাটা মালিক। তিনি সুপার ব্রিকস, আসলাম ব্রিকস, বাবুল ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ইটভাটার উদাহরণ দিয়ে বলেন, ‘আমার তো জরিমানা হয়েছিল, ওইসব ভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার পরও তো চলছে। এ বক্তব্যের যাচাই করতে গিয়ে তার সত্যতা মিলেছে।
শুধু এগুলো নয়, নিয়ম না মেনে যশোরে শতাধিক অবৈধ ভাটায় চলছে ইট তৈরি, পোড়ানো ও বিক্রির কার্যক্রম। জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদফতর অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদে অভিযান পরিচালনা করবেন বলে জানিয়েছেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
এদিকে, সরকারি আইন ও নির্দেশ উপেক্ষা করে অবৈধ ইটভাটার কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট এলাকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক, এলাকাবাসী, কৃষি জমির মালিকসহ সচেতন মহল প্রচন্ড ক্ষুব্ধ। ইটভাটা আইন-২০১৩ ও সংশোধনী ২০১৯ এর ৮ ধারায় কতিপয় স্থানে ইটভাটা স্থাপন নিষিদ্ধ করা ও নিয়ন্ত্রণ আইনে সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে আবাসিক, সংরক্ষিত বা বাণিজ্যিক এলাকা, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভা বা উপজেলা সদর, সরকারি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন বন, অভয়ারণ্য, জলাভূমি, কৃষি জমিসহ প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকায় ইটভাটা স্থাপন করতে পারবে না। ২০১৯ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারির পর থেকে অতীতে ও অন্য আইনে যাই থাকুক বিশেষ স্থাপনা, রেলপথ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, ক্লিনিক গবেষণাগার প্রভৃতি এলাকা থেকে কমপক্ষে এক কিলোমিটার দূরে ইটভাটা স্থাপন করা যাবে। নতুবা তা অবৈধ হবে। তাছাড়া জনবসতি এলাকা কৃষি জমিতেও ভাটা স্থাপন করা যাবে না। ভাটায় ভূমির উপরিভাগের মাটি বা টপ সয়েল ব্যবহার করা যাবে না। অথচ, যশোর সদরের রামনগর কানাইতলা এলাকার ভৈরব ব্রিকসটি যশোর মনিরামপুর সড়ক সংলগ্ন কৃষি জমির ওপর অবস্থিত। ভাটার সীমানা যেখানে শেষ সেখানেই রয়েছে ভাটপাড়া দাখিল মাদ্রাসা।
আবার সদরের সতীঘাটা বাজারের পাশে যেখানে আশরাফুল মাদরিস নামের মাদ্রাসার সামনেই সাহা ব্রিকস নামের বিশাল ইটভাটার কার্যক্রম চলছে। ১০-১২ টা ট্রাক, ট্রাক্টর সারাদিন মাটি টানছে মাদ্রাসার গেটের সামনে দিয়েই। সাড়ে ৮০০ শিক্ষার্থীর ওই মাদ্রাসা থেকে শিক্ষার্থীরা বাইরে বের হতে ভয় পায় দুর্ঘটনার আশঙ্কায়। তাছাড়া কয়লার ধোয়া, গন্ধ, ধুলাবালিতে তাদের জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠছে এমনটি দাবি দুটি প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রী শিক্ষকদের। তারা জানালেন একপ্রকার অসহায় অবস্থা তাদের। তবে তারা শুনেছেন, সরকারি আইন হয়েছে। তাই তারা দিন গুনছেন, এই ভাটা হয়তো থাকবে না। তবে, অবৈধ ভাবে যেনো না চলে প্রশাসনের কাছে এটা জোর দাবি জানিয়েছেন তারা।
ভৈরব ব্রিকস এর মালিক, ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি নাজির আহমেদ মুন্নু ও তার সঙ্গী নজরুল ইসলাম। তারা জানেন ভাটাটি অবৈধ। এর আগেও অভিযান চলছে, তারপরও অবৈধ ভাবে ভাটা চালাচ্ছেন। এ বিষয়ে নাজির আহমেদ মুন্নু জানান, অভিযান চলেছে, ভাটাটি অবৈধ কিন্তু অনেক টাকা খাটানো, নানা বিবেচনায় কাজ করা হচ্ছে। সাহা ব্রিকসের মালিক সনৎ কুমার সাহা স্বীকার করেছেন তার ভাটাটি অবৈধ। তিনি জানান, ২০২০ সালে সেখানে অভিযান পরিচালিত হয়, কিছু অংশ ভেঙ্গে দেয়। ১০ লাখ টাকা জরিমানাও দিতে হয়েছে। তারপরও কেনো চালাচ্ছেন, জানতে চাইলে মুন্নু ও সনৎ কুমার দুজনই জানান, এমন হিসেব করলে যশোরে তো ইটভাটা চলতেই পারবে না। সনৎ কুমার জানান, ২০২৫ সাল পর্যন্ত চলবে শুনেছি, সে পর্যন্তই আমাদের চেষ্টা তো থাকবেই।’
তিনি সুপার ব্রিকস, আসলাম ব্রিকস, বাবুল ব্রিকসসহ বেশ কয়েকটি ইটভাটার উদাহরণ দিয়ে বলেন, আমার তো জরিমানা হয়েছিল, ওইসব ভাটা ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয়ার পরও তো চলছে। তবে সংশ্লিষ্ট এলাকার ভুক্তভোগীসহ সচেতনমহল জানিয়েছে, ভাটা মালিকদেরকে পরিবেশ অধিদফতর ও প্রশাসন অলিখিত ভাবে সময় দিচ্ছে। এসব খাতে তাদের বিনিয়োগ অনেক তাই সেগুলো উঠিয়ে নেওয়ার সময় পাচ্ছে। যদিও এই বক্তব্যের সাথে পরিবেশ অধিদফতর বা জেলা প্রশাসন একমত নয়।
তবে, ইটভাটা আইনে সুস্পষ্টভাবে ১৩ ধারায় উল্লেখ আছে, কোনো ভাটায় লাইসেন্সের কোনো ধারার লংঘন হচ্ছে কিনা জেলা প্রশাসক স্বয়ং বা তৎকর্তৃক ক্ষমতাপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পরিদর্শন করতে পারবেন। একই ভাবে জেল, জরিমানার বিধানসহ লাইসেন্স বাতিলের বিধান রয়েছে ইটভাটা আইনে। ফলে, সরকারি নির্দেশ মানতে হলে অভিযানে আরো কঠোরতা অবলম্বন করা উচিৎ বলে ভুক্তভোগী ও সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসী মনে করেন। এ বিষয়ে যশোর জেলা পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক হারুন-অর-রশিদ জানান, গত বছর তাদের অফিসের পক্ষ থেকে ৯৩টি ইটভাটায় অভিযান পরিচালিত হয়। এ বছর এখন পর্যন্ত ৩২টি ভাটায় অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় জরিমানা আদায়সহ বিভিন্ন ভাটা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি স্বীকার করেন, অভিযান পরিচালিত হওয়া অনেক ভাটা পুনরায় চালু হয়েছে। এটাকে দুঃখজনক বলেন তিনি। একই সাথে জানান, ম্যাজিস্ট্রেট প্রাপ্তি সাপেক্ষে আবারো অভিযান পরিচালিত হবে।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, সরকারের নির্দেশ কঠোর ভাবে পালিত হবে। অবৈধ ইট ভাটায় অভিযান চালানো হবে। পরিবেশ অধিদফতরকে সাথে নিয়ে অবৈধ ভাটা উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা হবে।