নিজস্ব প্রতিবেদক: যশোরে ইউপি সদস্যের হাতে দুই তরুণ তরুণীর নির্যাতনের ঘটনায় মামলার আসামিরা আটকের ৮ ঘণ্টার মধ্যে জামিনে মুক্ত হওয়ায় এলাকাবাসী ও আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, পুলিশের দুর্বল ধারায় মামলা রেকর্ড করার কারণে আসামিরা সহজেই জামিন পেয়েছে। মামলাটি হওয়া উচিত ছিল নারী নির্যাতন দমন আইনে। এদিকে অভিযুক্তরা সহজে জামিনে বের হয়ে এলাকায় ফেরার কারণে আতংকিত হয়ে পড়েছেন নির্যাতনের শিকার মেয়েটির পরিবার। তাদেরকে মামলাটি নিষ্পত্তির জন্য চাপ দেয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
অনৈতিক কার্যকলাপের অভিযোগে ১৫ মার্চ সন্ধ্যা ৭টার দিকে যশোর সদর উপজেলার আব্দুলপুর গ্রামে দুই তরুণ তরুণীর নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ভিডিওচিত্র ১৮ মার্চ শুক্রবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে।
ভিডিও ভাইরাল হওয়ার পর ১৮ মার্চ তরুণীর বাবা যশোর কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ অভিযান চালিয়ে অভিযুক্ত ইউপি সদস্য আনিচুর রহমানসহ চারজনকে গ্রেফতার করেছিল। অন্যরা হলেন, সদরের আব্দুলপুর গ্রামের ভুট্টো, আজিম আলী ও তৌহিদ হাসান। মামলাটি হয়েছিল দন্ডবিধি ১৪৩, ৩৪১, ৩২৩, ৩৫৪, ৩৭৯, ৫০৬ ধারায়। শনিবার পুলিশ তাদের আদালতে সোপর্দ করে। এসময় যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মঞ্জুরুল ইসলামের আদালতে আসামিদের জামিনের আবেদন করে তাদের আইনজীবী। বিচারক জামিন মঞ্জুর করলে মুক্তি পায় ইউপি সদস্য আনিচুর রহমান, আজিম আলী ও তৌহিদ হাসান। গতকাল রোববার অপর আসামি ভুট্টোও জামিনে মুক্তি পেয়েছেন।
আদালতের জিআরও (সদর) মজিবর রহমান জানান, জামিনযোগ্য ধারা হওয়ার কারণে আদালত আসামিদের জামিন মঞ্জুর করেছেন।
যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি ফরিদুল ইসলাম জানান, মামলাটি নারী নির্যাতন দমন আইনে হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু সেটি হয়েছে দুর্বল ধারায়। যে কারণে আদালত জামিন মঞ্জুর করেছেন। এ ধরনের মামলা বুঝে শুনে হওয়া প্রয়োজন।
তা না হলে অপরাধীরা পর পেয়ে যাবে। এতে তাদের মধ্যে অপরাধ প্রবণতা বেড়ে যাবে। আসামিদের আইনজীবী এনামুল হক জানান, জামিনযোগ্য ধারা হবার কারণে আমার মক্কেলরা জামিন পেয়েছেন।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে যশোর কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তাজুল ইসলাম বলেন, ‘ কোন ধারায় মামলা হবে; সেবিষয়ে আইনের বই পড়ে নিউজ করেন।’ এক পর্যায়ে তিনি বলেন, মোটরসাইকেলে ঘোরাঘুরি অবস্থায় তাদেরকে মারপিট করা হয়েছে, সেখানে নারী নির্যাতনের মামলা হবে কেন?
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেলা মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য বলেন, পুলিশের কারচুপির কারণে এমনটা হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানাই। আমরা মহিলা পরিষদ আজকালের মধ্যেই দোষীদের শাস্তির দাবিতে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার বরাবর স্মারকলিপি দেব।
আর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় হলে চুড়ামনকাটি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান দাউদ হোসেন সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, ইউপি সদস্য আনিচুরসহ কয়েকজন তাদের মারপিট করেছে। এটা অন্যায়। আমি এর বিচার দাবি করছি।
এদিকে তরুণ তরুণীর অমানুষিক নির্যাতনের ঘটনায় আটকরা ৮ ঘণ্টা পর জামিনে মুক্তি পাওয়ার ঘটনায় গোটা এলাকাবাসী হতবাক হয়েছেন। গতকাল রোববার দিনব্যাপী জেলা জুড়ে সবার মুখে মুখে ছিলো কিভাবে এতো দ্রুত জামিন পেলেন এই অভিযুক্তরা।
মেয়েটির মা কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, আমার মেয়েকে এমনভাবে পেটানো হয়েছে তার সমস্ত শরীরের কালো দাগ হয়ে গেছে। অথচ হামলাকারীরা কি সহজেই ছাড়া পেয়ে গেল।