খোলা সয়াবিনের দাম কমেনি
বাজারে ফেরেনি বোতলজাত সয়াবিন
সালমান হাসান: তেলের দর নিয়ে বন্ধ হয়নি তুঘলকি কারবার। কড়াকড়ির মধ্যেও চলছে তেলেসমাতি। যশোরের কোথাও সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি হচ্ছে না সয়াবিন তেল। বোতলজাত সয়াবিনও নতুন করে বাজারে ফেরেনি। ফলে তেলের দামে ক্রেতার যেন ত্রাহি মধুসূদন দশা। যশোরের বাজারে একেক লিটার সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৭৪ টাকায়। অথচ সরকারের তরফ থেকে দাম নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছে ১৪৩ টাকা।
যশোরের নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা যায়, দোকানে টাঙানো মূল্য তালিকায় সয়াবিন তেলের দাম সরকার নির্ধারিতর চেয়েও বেশি লেখা। একেক দোকানের তালিকায় একেক রকম দাম। শহরের পাড়া-মহল্লার দোকানে সয়বাবিন তেলের দাম আরও চড়া। সেসব দোকানে একেক কেজি তেল বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়। বিভিন্ন বাজারেও তেলের এরকম উচ্চদাম। শহরের রেলবাজারের মুদি দোকানদাররা ১৮০ টাকা কেজি দরে সয়াবিন তেল বিক্রি করছেন।
বাজারটির মুদি মালামাল বিক্রেতাদের দাবি, পাইকারদের কাছ থেকে বেশি দামে তেল কিনেছেন। কিন্তু হঠাৎ করে ফের দাম কমিয়ে দিয়েছে সরকার। ফলে বিপাকে পড়েছেন তারা। সরকারের বেধে দেয়া দামে তেল বিক্রি করতে হলে লোকসান মুখে পড়বেন। শফিকুল ইসলাম নামে এখানকার এক দোকানি বলেন, ভাবছি তেল বিক্রি করা বন্ধ করে দেব। আমরা ছোটখাট দোকানদাররা বাজারের বড় মোকাম থেকে তেল কিনে এনে বিক্রি করি। কয়েক দিন আগে ১৬০ টাকারও বেশি টাকা কেজি দরে তেল কিনে এনেছিলাম বিক্রির জন্য। তার অল্পকিছু এখনও অবশিষ্ট আছে। যদি বর্তমান বেধে দেয়া দামে ওই তেল বিক্রি করি তাহলে লোকসান গুণতে হবে। গোহাটা রোডে মেসার্স সাধন স্টোরে গিয়ে দেখা যায়, মূল তালিকায় সয়াবিন তেলের দাম ১৭৪ টাকা লেখা। এখনও দাম বেশি কেন এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন ওটা আগের দাম লেখা। এই রোডের বিভিন্ন দোকানের মূল্য তালিকায় সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দাম লেখা দেখা গেছে।
যশোর কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের যশোর কার্যালয়ের সিনিয়র কৃষি বিপণন কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম জানান, তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত বাজার তদরাকি অভিযান চলছে। জরিমানাও করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারিভাবে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম নির্ধারন হয়েছে সর্বোচ্য ১৬৮ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল ১৪৩ টাকা। এর চেয়ে বেশি দাম নিলে সেটি আইনত অবৈধ। তিনি জানান, আগামী ১৫ তারিখে নিত্যপণ্যের বাজার পরিস্থিতি নিয়ে একটি সভা আছে। ওই সভার পর হার্ডলাইনে যাওয়া হবে। কৃষি বিপণন আইন-২০১৮ অনুযায়ী করা হবে জেল জরিমানা ।
ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক ওয়ালিদ বিন হাবিব জানান, সরকার নির্ধারিত দামের বাইরে যাতে কেউ সয়াবিন তেল বিক্রি করতে না পারে তার জন্য কঠোর তৎপরতা চলছে। প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা হচ্ছে। বেশি দামে সয়াবিন বিক্রির অপরাধে জরিমানাও করা হচ্ছে।
এদিকে, যশোরের বাজার ঘুরে ক্রেতাদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেশি হলেও সহজলভ্য। কিন্তু বোতলজাত সয়াবিন তেল হাওয়া। দুই একটি দোকানে পাওয়া গেলেও দাম বেশি। বিক্রেতারা বলছেন, কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল সরবরাহ করছে না। শহরের হাটচান্নি রোডের মা কালি ভান্ডারের স্বত্ত্বাধিকারি মধুসূদন পাল বলেন, প্রায় মাস হতে চলল কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেলের অর্ডার নিচ্ছে না। যার কারণে ক্রেতারা চাইলেও পরিশোধিত বোতলজাত সয়াবিন তেল তাদের দিতে পারছেন না।
যশোর শহরের বসুন্ধরা সয়াবিন তেলের ডিলারদের একজন সমবায় ট্রেডিংয়ের সত্ত্বাধিকারি সাইফুজ্জামান বলেন, আগে প্রতি মাসে কোম্পানি থেকে ৩০ থেকে ৩৫ টন তেল বিক্রির টার্গেট দেয়া হতো। এখন সেটি ৯ টনে নেমে এসেছে। কোম্পানি তেলের সরবরাহ কমিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন, এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায় মন্দা যাচ্ছে। মূলধন ভেঙে কর্মীদের গত মাসের বেতন দিয়েছি।