নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগে নিজের মা ও তার প্রেমিককে আটক করেছে পুলিশ। গত বৃহস্পতিবার রাতে বাঘারপাড়া উপজেলার খলশি গ্রাম থেকে ‘ঘাতক’ মজনুর রহমানকে এবং সদর উপজেলার কিসমত রাজাপুর গ্রাম থেকে নিহত ছাত্রীর মা রোজিনা বেগমকে আটক করা হয়।
কোতোয়ালি থানা পুলিশের পরিদর্শক (তদন্ত) এ কে এম সফিকুল আলম চৌধুরী জানান, নিহত আমেনা সদর উপজেলার কিসমত রাজাপুর গ্রামের মজনু খাঁ’র মেয়ে। তাকে ধর্ষণের পর হত্যা এবং হত্যার আলামত গোপনসহ সহায়তার অভিযোগে নিহতের দাদী মর্জিনা খাতুন গত বৃহস্পতিবার দুপুরে মিজানুর রহমান ও রোজিনা বেগমকে আসামি করে কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছেন।
নিহতের দাদী মর্জিনা খাতুনের অভিযোগ, তার ছেলে মজনু জীবিকার তাগিদে দীর্ঘ ৫ বছর পূর্বে মালয়েশিয়ায় চলে যান। ৩ মাস আগে মজনু ছুটিতে বাড়িতে এসেছিলেন। ছুটি শেষ হয়ে যাওয়ায় মজনু ফের মালয়েশিয়ায় চলে গেছেন। মজনুর ২টি মেয়ে রয়েছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় সে তার স্বামীর বাড়িতে রয়েছে। আর ছোট মেয়ে আমেনা (৯) কিসমত রাজাপুরে তার মায়ের সাথে বসবাস করে। ছেলেদের আর্থিক অবস্থা খারাপ হওয়ায় মর্জিনা খাতুন তার বড় ছেলে মহাসিন খাঁ’র বাড়িতে এবং তার স্বামী মিনহাজ খাঁ থাকেন মজনু খাঁ’র বাড়িতে। আমেনার দাদা মিনহাজ খাঁ অসুস্থ। আমেনার মা রোজিনা তার চিকিৎসার জন্য পল্লী চিকিৎসক মজনুর কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ওষুধ নিয়ে আসতেন। মজনুর রহমান বাঘারপাড়া উপজেলার বহরমপুর বাজারে একটি চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে। চিকিৎসার জন্য শ্বশুরকে সেখানেও নিয়ে যেতেন রোজিনা। এরই মধ্যে রোজিনা পল্লী চিকিৎসক মজনুরের সাথে পরকীয়া প্রেমে জড়িয়ে পড়েন। এ জন্য মজনুর রহমান কিসমত রাজাপুরে মজনু খাঁ’র বাড়িতে প্রায় আসতেন। তারা গোপনে অবৈধ শারীরিক সম্পর্কে লিপ্ত হতেন। বিষয়টি রোজিনার শ্বশুর বুঝতে পেরে মর্জিনা খাতুনকে জানান। এ বিষয়ে মর্জিনা খাতুন পুত্রবধূকে জানতে চাইলে তিনি শাশুড়িকে গালিগালাজ করতেন। ফলে গালিগালাজের ভয়ে পরে এ বিষয়ে রোজিনাকে আর কোনোকিছু বলতেন না মর্জিনা খাতুন। এরই মধ্যে মর্জিনা খাতুনের নাতি আমেনা দাদির কাছে অভিযোগ করে যে, অসৎ উদ্দেশ্যে তার শরীরে হাত দিতেন মজনুর। এ বিষয়ে রোজিনাকে শাশুড়ি মর্জিনা খাতুন জানালে তিনি কোনো কর্নপাত করতেন না। গত ২৫ জুলাই বিকেল পৌনে ৪টার দিকে আমেনা প্রাইভেট পড়ার জন্য প্রতিবেশি মাস্টার আসাদুল ইসলামের বাড়িতে যায়। কিন্তু মাস্টার অসুস্থ থাকায় সে বাড়িতে ফিরে আসে। তখন নিজ বাড়ির পাশে ডালিমদের বাড়ির সামনে অন্যান্য প্রতিবেশীদের সাথে গল্প করছিলেন রোজিনা। মেয়েকে ফিরে আসতে দেখে তাকে ডেকে জিজ্ঞাসা করে তিনি জানতে পারেন, মাস্টার অসুস্থ থাকায় প্রাইভেট পড়তে পারেনি। এ কথা জানার পর রোজিনা মেয়েকে বাড়িতে গিয়ে পড়াশোনা করতে বলেন। বাড়িতে ফিরে এলে বিকেল সোয়া ৪টার দিকে পল্লী চিকিৎসক মজনুর রহমান ঘরে ঢুকে আমেনাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করেন। এরপর ধর্ষণের ঘটনা আড়াল করতে আমেনাকে শ্বাসরোধে হত্যা করেন মজনুর। কিছু সময় পর রোজিনা বাড়ি ফিরে আসার পর জানতে পারেন, তার মেয়েকে ধর্ষণের পর হত্যা করেছেন মজনুর রহমান। তখন হত্যার ঘটনা ধামাচাপা দিতে গলায় রশি দিয়ে খড়ি রাখার ঘরের আড়ার সাথে তার লাশ ঝুলিয়ে রাখেন মজনুর ও রোজিনা। এছাড়া ধর্ষণের আলামত নষ্ট করতে তারা আমেনার শরীর ধুয়ে ফেলেন এবং পরনের কাপড় পরিবর্তন করে পূর্বের কাপড় পুড়িয়ে ফেলেন। পরে প্রতিবেশিদের কাছ থেকে নাতি আমেনাকে ধর্ষণ ও হত্যার কথা জানতে পারেন মর্জিনা খাতুন। এরপর তিনি স্বজনদের সাথে আলাপ আলোচনা করে থানায় মামলা করেছেন।