৬ মাসের চিত্র
মামলা ৯৫টি। আটক ২২৯ জন, পলাতক ২৩ জন।
৯০৪ বোতল ফেনসিডিল, ইয়াবা ২৪৪২ পিচ, গাঁজা ৫৫ কেজি
লাবুয়াল হক রিপন
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সারা দেশের মতো যশোরেও রয়েছে জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর। আছেন ২৩ জন কর্মকর্তা-কর্মচারি। শুধু মাদক নিয়ে কাজ করা সরকারের এ প্রতিষ্ঠানটির কাছে তাই মাদকের ভয়াবহতা রুখতে স্বাভাবিকভাবেই প্রত্যাশা বেশি। তবে মাদকের বিরুদ্ধে তাদের অভিযান, আটক কিংবা মামলার তথ্য অনেকটাই হতাশাজনক। বছরের প্রথম ছয় মাসে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর মামলা করেছে মাত্র ৯৫টি। এরমধ্যে ২২৯ জনকে আটক করলেও পলাতক রয়েছে ২৩ জন। সেক্ষেত্রে পরিসংখ্যানে অনেক এগিয়ে রয়েছে জেলা পুলিশ। গত ছয় মাসে ৭৯৬ টি মামলা দিয়েছে পুলিশ। আইনশৃংখলা রক্ষার সাথে মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করে পুলিশ এ সাফল্য দেখিয়েছে। সেখানে শুধু মাদকের বিরুদ্ধে কাজ করা জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সফলতা সীমিতই।
সূত্র মতে, যশোর সীমান্ত জেলা হওয়ায় এখানে মাদকের ভয়াবহতা রয়েছে। সীমান্তের অবৈধ পথে প্রতিনিয়ত মাদকের চালান ঢোকে এ জেলায়। মাদকের ছোবলে নিঃস্ব হয়েছে বহু পরিবার। বিপদগামী হয়েছেন অসংখ্য তরুণ-তরুণী। মাদকের ছোবলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে কিশোর- যুবক থেকে বিভিন্ন বয়সীরা। ফলে মাদক বেচাকেনা ও চোরাচালান দমনে সচেতন মহলের জোরালো দাবি রয়েছে সবসময়ই। বিভিন্ন সভা-সেমিনার কিংবা আইনশৃংখলা মিটিংয়ে এ প্রসঙ্গে কথা বলতে শোনা যায়। সেক্ষত্রে জেলা মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কাছে প্রত্যাশা থাকে বেশি। কিন্তু সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি সেভাবে সফলতা দেখাতে পারছে না। গত ৬ মাসে ৯০৪ বোতল ফেনসিডিল, ইয়াবা ২ হাজার ৪৪২ পিচ, গাঁজা ৫৫ কেজি ৩৩২ গ্রাম, রেক্টিফাইড স্প্রিট ৩ লিটার, ডিএস ৫ লিটার, ট্যাপেন্টাডোল ৭০ পিচ, তাড়ি ২৪৫ লিটার ও হেরোইন ৫ গ্রাম। এতে মামলা হয়েছে মাত্র ৯৫টি। এরমধ্যে ২২৯ জনকে আটক করলেও পলাতক রয়েছে ২৩ জন।
এদিকে যশোর জেলা পুলিশ জানুয়ারি মাসে ১১৫টি মাদকের মামলা দিয়েছে। ফেব্রুয়ারি মাসে ১৬৯টি, মার্চ মাসে ১৫৭টি, এপ্রিল মাসে ১৩৩টি, মে মাসে ১১৫টি এবং জুন মাসে ১০৭টি মাদকের মামলা দিয়েছে। সব মিলিয়ে জেলা পুলিশের ছয় মাসের মামলায় হয়েছে ৭৯৬টি। অথচ মাদক নিয়ন্ত্রণ সংস্থার মামলা হয়েছে মাত্র ৯৫টি। এরমধ্যে আবার ২৩জনই রয়েছে পলাতক।
এদিকে মাদক নিয়ন্ত্রন সংস্থার বিভিন্ন সময়ের অভিযানে আটক, উদ্ধার এবং নিয়ন্ত্রণমূলক কর্মকাণ্ড নিয়ে নানা বিতর্ক রয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের যশোর সদর ক-সার্কেলের দায়িত্বে থাকা পরিদর্শক লায়েকুজ্জামান নিজেই অবৈধ কারবারিদের সাথে যোগসাজস করে থাকেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে তিনি যশোরের মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অফিস সহকারী পদে চাকরি করতেন। সেই সময়ে পরিচিত কারবারি এবং তাদের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরণের সুযোগ সুবিধা নিচ্ছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে। এই ব্যাপারে পরিদর্শক লায়েকুজ্জামানের মুঠোফোনের নম্বরটি ওই দপ্তরের কেউ দিতে রাজি হননি বলে তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই দপ্তরের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, লায়েকুজ্জামানের মুঠোফোন নম্বর দেয়া নিষেধ আছে।
তবে এসব অভিযোগ মানতে নারাজ জেলা মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আসলাম হোসেন। তিনি বলেছেন, জনবল সঙ্কট, বিভিন্ন উপজেলা পর্যায়ে কোন অফিস নেই এবং লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় পুলিশের মত নিয়মিত অভিযান চালানো সম্ভব হয়ে ওঠেনা। তবে অভিযানের মধ্যেও বিভিন্ন শিক্ষা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে মাঝেমধ্যে সচেতনতামূলক সভা করা হয় বলে তিনি জানিয়েছেন।