আজ তালিকা জমার শেষদিন
সুনীল ঘোষ: আওয়ামী লীগের দূর্গ যশোরে জোরদার হয়েছে সাংগঠনিক কার্যক্রম। মেয়াদোত্তীর্ণ ও অসম্পন্ন কমিটিগুলো সহসাই পাচ্ছে পূর্ণতা। বিলম্বে হলেও ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের এই উদ্যোগকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন রাজনীতি সচেতন মহল। তবে কমিটি গঠনের স্বচ্ছতা নিয়ে এরই মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে। দলের ভেতরে-বাইরে বিরাজ করছে অস্থিরতা। অনেকেরই অভিযোগ কমিটি গঠনে প্রভাব খাটাচ্ছে অস্ত্র-মাদক মাফিয়ারা। যেকারণে নতুন নেতৃত্বে ক্লিন ইমেজের পরিবর্তে ঠাঁই পেতে পারে টেন্ডারবাজ, সন্ত্রাসী ও চাঁদাবাজসহ বিতর্কিতরা। এর ফলে দলটিতে বিভক্তির রাজনীতি আরও প্রকট হতে পারে। তবে এসব শঙ্কা উড়িয়ে দিয়েছেন জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয় ২১ ফেব্রুয়ারি। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মেয়াদোত্তীর্ণ ও অসম্পূর্ণ সাংগঠনিক কমিটিগুলোর পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমার শেষদিন আজ ২৮ ফেব্রুয়ারি। দলটির দায়িত্বশীল একটি সূত্র জানায়, রোরবার পর্যন্ত ৫টি উপজেলা থেকে জমা পড়েছে পূর্ণাঙ্গ কমিটির তালিকা। বাকিগুলোর তালিকা আজকের মধ্যে জমা পড়তে পারে। তবে এর আওতার বাইরে রয়েছে মণিরামপুর। প্রতিমন্ত্রী স্বপন ভট্টাচার্য্য দেশে ফেরার পর তার নিজ উপজেলা মণিরামপুর ও মণিরামপুর পৌর কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার সিদ্ধান্ত হয় বর্ধিত সভায়।
আওয়ামী লীগের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশজুড়ে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অসম্পন্ন কমিটি পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে যশোর আওয়ামী লীগ গত ২১ ফেব্রুয়ারি বর্ধিত সভা করে। দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমে গতি ফেরাতে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে জেলার ৮ উপজেলা ও পৌর কমিটির সকল অসম্পূর্ণ কমিটি সম্পন্ন করার সিদ্ধান্ত হয়। এর বাইরে ৩১ মার্চের মধ্যে সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। দলীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বর্ধিত সভায় জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলনসহ জেলা আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী অংশ নেন। এরবাইরে উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সম্পাদকরা উপস্থিত ছিলেন।
দলটির একাধিক সূত্র জানায়, যশোরের ৮টি উপজেলায় দীর্ঘদিন পূর্ণাঙ্গ কমিটি নেই। বেশিরভাগ কমিটি মেয়াদোত্তীর্ণ। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশ গ্রহণে সম্মেলনের মাধ্যমে এসব কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয় কিন্তু এসব কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। বৈশ্বিক মহামারি করোনার কারণে নির্ধারিত সময়ে কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা যায়নি। পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারার পেছনে দলের প্রকাশ্য বিভক্তিকেও দায়ী করেছেন দলটির অনেকে। যশোর সদর, মণিরামপুর, ঝিকরগাছা, শার্শা, চৌগাছা ও কেশবপুরে উপজেলা কমিটির মেয়াদ বহু আগেই শেষ হয়ে গেছে। তৃণমূলের নেতাকর্মীদের মতামতের ভিত্তিতে ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এসব কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা পেশ করার নির্দেশনা দেয়া হয় বর্ধিত সভা থেকে।
এ বিষয়ে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও সদর উপজেলা চেয়ারম্যান মোস্তফা ফরিদ আহমেদ চৌধুরী বলেন, সবকিছুই দেখছেন জেলা সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। এরবাইরে আর কিছু জানা নেই বলে জানান আওয়ামী লীগের এই নেতা।
মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে দৈনিক কল্যাণকে জেলা সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, এখন পর্যন্ত ৫-৬টি উপজেলা থেকে কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা জমা পড়েছে। বাকিগুলো আজকের মধ্যে জমা পড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
তিনি বলেন, কোন উপজেলা ব্যর্থ হলে আগামী সভায় জেলা আওয়ামী লীগ সবগুলো সাংগঠনিক কমিটির পূর্ণাঙ্গ তালিকা প্রকাশ করবে। ক্লিন ইমেজের নেতারাই এসব কমিটিতে আসছেন। অস্ত্রবাজ, সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ ও টেন্ডারবাজসহ বিতকির্তরা সাংগঠনিক কমিটিতে ঠাঁই পাবে না বলেও জানান তিনি।