নিজস্ব প্রতিবেদক
শুক্রবার যশোরে সারাদিন বৃষ্টিপাত হয়েছে। এদিন ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনভর ভারি বর্ষণে শহরের নিচু এলাকায় হাঁটু পানি জমে যায়। এতে চরম দুর্ভোগে পড়ে মানুষ। বিশেষ করে গতকাল জুমার নামাজ পড়তে গিয়ে পানি ডিঙ্গিয়ে মসজিদে প্রবেশ করেন মুসল্লিরা।
এর আগে গত ২৩ আগস্ট সকাল ও দুপুরে দুই দফা ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছিল। গতকাল বৃষ্টিতে শহরের বেশির ভাগ সড়কই পানিতে তলিয়ে গেছে। এমনকি অনেকের বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পৌর শহরের দক্ষিণ অংশের বাসিন্দারা। এসব বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ড্রেন ঠিকমত পরিস্কার না হবার কারণে পানিপ্রবাহের পথ রুদ্ধ হয়ে পড়েছে।
যেকারণে ভারি বৃষ্টি হলেই শহরে জমে যায় পানি। এই সংকট দূর করার জন্য কোনো ধরণের মহাপরিকল্পনা নেই পৌরসভার। ফলে ভোগান্তি নিয়েই বসবাস করছেন শহরের দক্ষিণ অংশের অর্ধলক্ষাধিক বাসিন্দা। তবে পৌর কর্তৃপক্ষ বলছেন, মূলত অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার কারণে ওই এলাকার পানি নিষ্কাশিত হচ্ছে না। এতে ভোগান্তি বেড়েছে শহরবাসীর।
যশোর বিমানবাহিনী নিয়ন্ত্রণাধীন আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, শুক্রবার সকাল ৬ থেকে বিকাল ৬টা পর্যন্ত ৩৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এতে পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডের কমপক্ষে ১৫-২০টি সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। আজ শনিবারও বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আগামীকাল রোববার থেকে স্বাভাবিক হতে পারে আবহাওয়া।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, গতকালের ভারি বৃষ্টিতে শহরের বিভিন্ন সড়কে পানি জমে আছে। বেজপাড়া চিরুনিকল, টিবি ক্লিনিক মোড়, খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়ক, শহরের পিটিআই, নাজির শংকরপুর, খড়কি রূপকথা মোড় থেকে রেললাইন, মিশনপাড়া, আবরপুর ক্যান্টনমেন্ট, বিমানবন্দর, ষষ্ঠীতলাপাড়ার বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। দুর্ভোগে পড়েন পথচারী ও এলাকাবাসী। এসব এলাকার বাড়িঘরেও পানি ঢুকেছে। এসব অঞ্চলের বাসিন্দারা দিনভর ভোগান্তির এমন দৃশ্য ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেইসবুকে পোস্ট করতে দেখা গেছে।
শহরের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শহরের ভেতর দিয়ে ভৈরব ও মুক্তেশ্বরী নামে দুটি নদ-নদী বয়ে গেছে। এর মধ্যে ভৈরব নদ দিয়ে শহরের উত্তরাংশ ও মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে শহরের দক্ষিণাংশের পানি নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু গত দেড় দশক শহরের দক্ষিণাংশের পানি মুক্তেশ্বরী নদী দিয়ে নামতে পারছে না। পয়ঃনিষ্কাশন নালার মাধ্যমে শহরের পানি হরিণার বিল দিয়ে মুক্তেশ্বরী নদীতে যেত। কিন্তু ২০১০ সালে হরিণার বিলে যশোর মেডিকেল কলেজ স্থাপিত হয়। এরপর আশপাশে আরও অনেক স্থাপনা গড়ে উঠেছে। এতে বিল দিয়ে পানি আগের মতো নিষ্কাশিত হতে পারছে না। ওই পানি বের করার জন্য খালের মাধ্যমে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে হবে। কিন্তু পৌরসভা গত দেড় দশকেও সেই উদ্যোগ নিতে পারেনি।
শহরের পিটিআই ও বেজপাড়া চিরুনিকল এলাকায় হাঁটু পানি জমে আছে। পায়ের জুতা হাতে নিয়ে অনেককে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যাচ্ছে। এই এলাকার বাসিন্দা মোকাম্মেল হক বলেন, এখানে ১৫-২০ বছর ধরে জলাবদ্ধতার সমস্যা। বৃষ্টি হলে মানুষের ভোগান্তির শেষ থাকে না। অপরিকল্পিত ড্রেন নির্মাণ করাতে শহরের পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়াতে এই জলাবদ্ধতা দেখা যাচ্ছে। ঠিক মতো ড্রেন পরিস্কার করাও হয় না বলে তিনি দাবি করেন। গতকাল পানি ভেঙ্গে মানুষ জামার নামাজ পড়তে গেছে।
খড়কি এলাকার শাহ আবদুল করিম সড়কের বাসিন্দা আজিজুর রহমান বলেন, ১২ মাসই এই সড়কে সমস্যা থাকে। বর্ষাকালে সমস্যা দ্বিগুণ হয়। বর্ষাকালে প্রতিদিনই হাঁটু পানি থাকে। পাশেই সরকারি এম এম কলেজ। এখানকার শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগ ছাত্রাবাস খড়কিতে। এখানে মেসগুলোতে সড়ক ও এলাকায় জলাবদ্ধতার কারণে উঠতে চায় না! বারবার এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিরা পৌরসভাকে বলেছে, তবে তারা কোন ব্যবস্থা নেয় না। পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তা উত্তম কুন্ডু বলেন, শহরের ভারি বর্ষাতে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের কর্মীরা কাজ করছে, দ্রুতই জলাবদ্ধতা দূর হবে।
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী এসএম শরীফ হাসান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। তবে শহরবাসীর অসচেতনতার কারণেও নালার পানিপ্রবাহ বন্ধ হয়ে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। অনেকে ড্রেনের মধ্যে পলিথিন ফেলে রাখে। রাস্তা ও নালা সংস্কার এবং নির্মাণে নতুন প্রকল্প প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।’
পৌরসভা সূত্র মতে, যশোর শহরে ২৫২ কিলোমিটার পয়ঃনিষ্কাশন নালা (ড্রেন) রয়েছে। এর মধ্যে ৫৫ কিলোমিটার আরসিসি, ৬০ কিলোমিটার ইট, ৫ কিলোমিটার পাইপ ও ১৩০ কিলোমিটার কাঁচা নালা রয়েছে। এর মধ্যে নগর উন্নয়ন প্রকল্পসহ কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে গত ১৪ বছরে ৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৪০ কিলোমিটার আরসিসি ড্রেন নির্মাণ করা হয়েছে। এতো কাজের পরও কেন জলাবদ্ধতা নিরসন হচ্ছে না জানতে চাইলে পৌরসভার মেয়র হায়দার গণী খান পলাশ বলেন, জলাবন্ধতা দূর করণে আমরা কাজ করছি। মুক্তেশ্বরীর সঙ্গে সংযোগ খাল স্থাপনের পরিকল্পনা নিয়েছি। ৪০ কোটি টাকার প্রকল্পটি অর্থায়ন করেছে বিশ্বব্যাংক।