জাহিদুল কবীর মিল্টন: যশোরের আলোচিত যুবলীগ নেতা ইয়াসিন আরাফাত ওরফে হুজুর ইয়াসিন হত্যা মামলা তুলে নিতে বাদীকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। প্রতিপক্ষ নজরুল ইসলাম ওরফে নজু ডাকাত মোবাইলে ভারত থেকে হুমকি দিচ্ছে বলে জানিয়েছেন ইয়াসিনের স্ত্রী বাদি শাহানা আক্তার নিশা। এ ঘটনায় মামলার বাদি নিহত ইয়াসিনের স্ত্রী শাহানা আক্তার নিশা ৮মার্চ কোতোয়ালি থানায় জিডি করেছেন। যার নম্বর ৪১৪। বিষয়টি তদন্তে মাঠে নেমেছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এস আই মফিজুল ইসলাম। পুুলিশ ইতিমধ্যে ঘটনার সত্যতা পেয়েছে বলে নিশ্চত করেছেন।
যশোর শহরের শংকরপুরের ইয়াসিন আরাফাত ওরফে হুজুর ইয়াসিন ১৬ ফেব্রুয়ারি ব্রাদার্স ক্লাবে বসে থাকা অবস্থায় প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে নিহত হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী যশোর কোতোয়ালি থানায় মামলা করেছিলেন। এই মামলা তুলে নিতে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে।
জিডিতে তিনি বলেছেন, ১৬ মার্চ সন্ধ্যা ৭ টা ৪৫ মিনিটের সময় শংকরপুর চোপদারপাড়া ব্রাদার্স ক্লাবের মধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ওরফে স্বর্ণকার রানা ও তার সহযোগিরা ধারালো দা ও চাকু দিয়ে ইয়াসিনকে হত্যা করে। হত্যাকান্ডের ঘটনায় ১৭ ফেব্রুয়ারি কোতোয়ালি থানায় তিনি মামলা করেন। ইয়াসিন হত্যার প্রায় দুই আড়াই ঘণ্টা পর শাহানা আক্তার নিশা যখন শোকে হতবিহবল সেই সময় ইয়াসিনের (০১৭১২১৪৫৫৫১) মোবাইল নম্বরে ভারত থেকে ফোন আসে। (+৯১৯৫৯৩১৫৭৯৪২)। যশোরের সন্ত্রাসী টিবি ক্লিনিক পাড়ার নজরুল ইসলাম ওরফে নজু ফোন করে। শাহানা আক্তার নিশা ফোন রিসিভ করেন। ফোন রিসিভ করার পর নজু তার পরিচয় দিয়ে বলে রানার সাথে তার কথা হয়েছে। তারা ইয়াসিনকে মারেনি। ইয়াসিন হত্যাকান্ডের পর ডিবি পুলিশ খুলনা শিরোমনির লিন্ডা ক্লিনিক থেকে রুবেল ও রানা দুই ভাইকে আটক করে। আটকদের বাড়ি শংকরপুর চোপদারপাড়া আকবরের মোড়ে। ১৭ ফেব্রুয়ারি মামলা হওয়ার পর ওই রাতে ডিবি পুলিশ আবারো খুলনায় অভিযান চালিয়ে রানা ও রুবেলের আরেক ভাই হাফিজুর ও তার বন্ধু শান্তকে আটক করে। ১৮ ফেব্রুয়ারি র্যাব সদস্যরা শংকরপুর কবরখানার বাড়ি থেকে জীবন সিকদার নামে আরো এক আসামিকে আটক করে।
জিডিতে শাহানা আক্তার নিশা বলেন, এ সব আসামিরা আটকের পর ঘটনাটি স্পষ্ট হয়। এরপর ২৭ ফেব্রুয়ারি রাত আনুমানিক ১ টার দিকে ভারত থেকে (+৯১৮১০০৫১৫৭৩৩) ইয়াসিনের মোবাইলে আবারো ফোন করে বলে রানাদের বিরুদ্ধে কেন মামলা করেছিস। শাহানাকে ভয়ভীতি দেখিয়ে মামলা তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেয়।
জিডিতে আরো বলা হয়েছে, গ্রেফতারকৃতদের স্বীকারোক্তি ও ভারত থেকে হুমকি ও এলাকার সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ধারণা করা হচ্ছে শাহানার স্বামীকে ভারতে থাকা সন্ত্রাসী নজরুল ওরফে নজুসহ এলাকার কতিপয় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ, পূর্বপরিকল্পনা করে স্বর্ণকার রানা ও তার ভাইসহ অন্যদের সহযোগিতায় ইয়াসিন হত্যাকান্ড সংঘটিত করে। বিষয়টি হত্যা মামলার সাথে তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এদিকে বিষয়টি নিয়ে মাঠে নেমেছেন ইয়াসিন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের এস আই মফিজুল ইসলাম। মফিজুল ইসলাম বলেছেন, ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আমরা খোঁজ খবর নিয়ে অনেক দূর এগিয়েছি। ঘটনাটি তদন্তের স্বার্থে বিস্তারিত পরে জাাননো হবে।
অপরদিকে এলাকার বিভিন্ন সূত্র বলেছে, নজরুল ইসলাম ওরফে নজু ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইয়াসিনকে হত্যার পরিকল্পনা করে। পুলিশ জানায়, মাদক ব্যবসা ও এলাকার আধিপত্যকে কেন্দ্র করে প্রতিপক্ষ ইয়াসিনকে হত্যা করে। কারণ ইয়াসিন বেঁচে থাকাকালীন শংকরপুর চোপদারপাড়ায় নজু, মাঠপাড়ার সুমনসহ অনেকেই স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা করতে পারতো না। পথের কাটা সরাতে দীর্ঘদিন ধরে পরিকল্পনা করে প্রতিপক্ষরা ইয়াসিনকে হত্যা করে।