নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরের তিন উপজেলার (অভয়নগর, মণিরামপুর ও কেশবপুর) ১০ লক্ষাধিক মানুষের দুঃখ হিসেবে পরিচিত ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যা সম্পর্কে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় ও পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, ‘এক-দুইদিনের জন্য নয়, এ সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধানের জন্য দ্রুততম সময়ের মধ্যে কাজ শুরু করা হবে।’
তিনি বলেন, ‘কয়েক দশকের সমস্যার সমাধান এক মাসে দিতে পারবো না। কিন্তু এতোদিন যেটা হয়েছে, তারা (পানি উন্নয়ন বোর্ড) নিজেরা নিজেরা সমাধানের চেষ্টা করেছে, স্থানীয়দের কথা শুনেনি। এবার সমাধানটা যাতে স্থানীয়দের মতামতের ভিত্তিতেই হয় তা নিশ্চিত করা হবে।’
যশোরের ভবদহ এলাকার জলাবদ্ধতা নিরসনের দাবিতে রোববার (৬ অক্টোবর) দুপুরে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে একপর্যায়ে মোবাইল ফোনে যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন পানিসম্পদ উপদেষ্টা। যশোরের জেলা প্রশাসকের কার্যালয় চত্বরে দুপুর ১২টায় এ কর্মসূচি শুরু হয়। মোবাইল ফোনে দেওয়া পানি উপদেষ্টার বক্তব্য মাইকের মাধ্যমে তা কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া ভবদহ এলাকার বাসিন্দাদের সরাসরি শোনান ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ।
মোবাইল ফোনে দেওয়া বক্তব্যে পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান আরও বলেন, ‘আইডব্লিউএম-এর একজন প্রতিনিধিকে নিয়ে পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব যশোরে গিয়ে দুই দিন থেকে আপনাদের সাথে কথা বলবেন। আপনাদের কাছ থেকে সবকিছু জেনে তারা সেটা আমাকে বলবেন। আমি উপদেষ্টা পরিষদে তা উপস্থাপন করবো।’ তিনি বলেন, ‘কথা দিচ্ছি, অতীতের মতো সমস্যার আশপাশ দিয়ে ঘোরা হবে না। চিরস্থায়ী সমাধানের দিকে যাওয়া হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এতোদিন আমি আপনাদের পাশে থেকে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের জন্য আপনাদের সাথে আন্দোলন করেছি। আইনী লড়াই করেছি। এবার সমস্যা সমাধানের দায়িত্ব আমার ওপর পড়েছে। সমাধানটা যাতে আপনাদের মতামত শুনে হয়, সেটা আমি অবশ্যই নিশ্চিত করবো এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ে আপৎকালীন যে টাকা আছে তা দিয়ে যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করবো।’
রিজওয়ানা বলেন, সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধানে যেনো এই সমস্যার সমাধানে কাজ করা হয় আপনাদের এই দাবির প্রতি একাত্মতা পোষণ করে বলতে চাই, এই বিষয়টি আমি তাদের সঙ্গেও আলোচনা করবো। এ সময় ভবদহ অঞ্চলে ব্যাংক ও এনজিওর সুদ মওকুফ, ক্ষতিগ্রস্তদের খাদ্য ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তার দাবির বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে দেখবেন বলে আশ্বস্ত করেন।
এর আগে পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে বক্তব্য রাখেন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রণজিৎ বাওয়ালী, যুগ্ম-আহ্বায়ক গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব অধ্যাপক চৈতন্য পাল, আমিনুল ইসলাম হীরু, জিল্লুর রহমান ভিটু প্রমুখ। পরে ভবদহ জলাবদ্ধতা সমস্যার সমাধানের দাবিতে যশোরের জেলা প্রশাসক মো. আজাহারুল ইসলামের কাছে স্মারকলিপি প্রদান করেন নেতৃবৃন্দ।
ভবদহ জলাবদ্ধ এলাকার ক্ষতিগ্রস্ত দুই সহস্রাধিক মানুষ দ্রুত পানি সরানোর দাবিতে এদিন জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেন। আন্দোলনকারীদের ‘পানি সরাও, জীবন বাঁচাও’, অবিলম্বে টিআরএম (নদীতে জোয়ারাধার বাস্তবায়ন) চালু, আমডাঙা খাল সংস্কার কর- স্লোগানে গোটা চত্বর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে।
এছাড়া জলাবদ্ধ এলাকার মানুষের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তৃতা করেন বাসদ নেতা হাচিনুর রহমান, বিপ্লবী কমিউনিস্ট লীগ নেতা তসলিম উর রহমান, সিপিবি নেতা অ্যাড. আমিনুর রহমান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক রাশেদ খান প্রমুখ।