নিজস্ব প্রতিবেদক
একজন রেবা রানী সোম। পেশায় গৃহিনী। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার সময় যশোর শহরে ষষ্ঠীতলাপাড়া অমল সেনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবন্ধ হন। ১৯৭১ সালে তার স্বামী অমল সেনকে পাক হানাদার তুলে নিয়ে যেয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ২৫ বছর বয়সে স্বামী হারিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে দিনযাপন করতে থাকেন। শুরু হয় সংগ্রামের জীবন। তবে পারিবারিক সীমাবদ্ধতার পাশ কাটিয়ে নান প্রতিকূলতার মাঝেও ত্যাগ স্বীকার করে ছয় সন্তানকে শিক্ষিত করে তুলেছেন। ছয়জন সফল সন্তানের মা। রোববার সন্ধ্যায় বিশ^ মা দিবেস খেতাব পেয়েছেন রতœগর্ভা মায়ের। তার জীবন-কর্ম ও সন্তানদের পেছনে শ্রম এনে দিয়েছে এই বিশেষ সম্মাননা।
রেবা রানী সোমের মতো আরও চার মাকে সম্মাননা জানিয়েছে যশোরের সাংস্কৃতিক সংগঠন শেকড় যশোর। সম্মাননা পাওয়া অন্য মায়েরা হলেন, উপশহর মহিলা ডিগ্রি কলেজের সহকালী অধ্যাপক তৌহিদা পারভীন, শহরের আরবিকে রোডের বাসিন্দা তৈয়বা কামরুন নাহার, বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা পল্লী বিকাশ কেন্দ্রের প্রধান পৃষ্ঠপোষক জীবন নেসা ও সুফিয়া খানম। মাগো তোমার চরণ তলে বেহেস্ত আমার, মাগো তুই খোদা তলার সেরা উপহার শ্লোগানে জেলা শিল্পাকলা একাডেমি মিলনায়তনে প্রধান অতিথি জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান মায়েদের হাতে ক্রেস্ট, উত্তরীয় ও ফুল দিয়ে সম্মাননা জানান।
প্রধান অতিথি তার বক্তব্যে বলেন, আমাদের স্বাধীনতার পেছনে রত্মগর্ভ মায়েদের অবদান রয়েছে। তেমনি দেশ যে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে সফল মায়েদের সফল সন্তানদের অবদান রয়েছে। পিতা-মাতার কাছে নিজের সাফল্যের চেয়ে সন্তান ভাল করেছে বা সফল হয়েছে এর চেয়ে গর্বের কোন কিছু নেই।
মা সমাবেশ ও রত্নগর্ভ মায়েদের সম্মাননা অনুষ্ঠানে শেকড় যশোরের সভাপতি ও বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক এ্যাঞ্জেলা গোমেজের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন মা দিবস উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক হাবিবা শেফা, মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তন্দ্রা ভট্টাচার্য্য ও জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস। স্বাগত বক্তব্য রাখেন শেকড় যশোরের সাধারণ সম্পাদক রওশন আরা রাসু।
এর আগে শেকড়ের যশোরের শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতি অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়। বৃদ্ধাশ্রমের মায়েদের অবস্থান নিয়ে নাটিকা উপস্থিত দর্শকদের মন ছুয়ে যায়।
এদিকে সকালে যশোর জেলা প্রশাসন ও মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের আয়োজনে বিশ্ব মা দিবসে এক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়। শহরের কারবালা রোডস্থ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন উপ পরিচালক আনিছুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন, ছিলেন সহকারী কমিশনার ইউছুপ মিয়া। বক্তব্য রাখেন বাঁচতে শেখার নির্বাহী পরিচালক অ্যাঞ্জেলা গোমেজ, জয়তী সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক অর্চনা বিশ্বাস, ধারার নির্বাহী পরিচালক লিপিকা দাস গুপ্তা, মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের হোস্টেল সুপার নাসরিন আকতার প্রমুখ।