রায়হান সিদ্দিক
রমজানকে কেন্দ্র করে যখন নিত্যপণ্যের উর্ধ্বগতিতে দিশেহারা সাধারণ মানুষ। অধিক মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা হু-হু করে বাড়িয়ে দিচ্ছেন সকল পণ্যের দাম। তখন যশোরের হাট বাজার সুপার শপ নিয়েছে ভিন্ন উদ্যোগ। শুধুমাত্র রমজান উপলক্ষে নিত্যপ্রয়োজনীয় ৩০টির বেশি পণ্যের দাম কমিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তাদের এমন উদ্যোগে খুশি সাধারণ মানুষ। প্রশংসায় ভাসছেন প্রতিষ্ঠানটির সত্ত্বাধিকারী মো. মেফতাহুর রহমান খোকন।
হাট বাজারে ১১০ টাকার ছোলা কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ টাকা করে। বেসন ৫শ গ্রামে ৫ টাকা কমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়। ৫০ গ্রাম ভূষি ১২০ টাকার জায়গায় ১১৮ টাকা, দেশি চিনি বাহিরে ১৫০-১৬০ টাকায় বিক্রি হলেও হাটব বাজারে মিলছে ১৪২ টাকায়। সাদা চিনি ১৪০ টাকা, মসুর ডাল কেজিপ্রতি ১৬৫ টাকার পরিবর্তে ১৫৬ টাকা, মুগ ডাল ৫শ গ্রামে ৫টাকা কমিয়ে ৯৫ টাকা, ৫শ গ্রাম ছোলার ডাল ৫৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। লাল ও সাদা চিড়া ৫শ গ্রাম ৩৫ টাকার পরিবর্তে ৩৩ টাকা, মাসকলায় ৫শ গ্রাম ১১৫ টাকার পরিবর্তে ১০২ টাকা, খেসারির ডাল ৫শ গ্রাম ১০ টাকা কমিয়ে বিক্রি হচ্ছে ৪৫ টাকায়। ১২শ টাকার মরিয়ম খেজুর ১০৫০ টাকা ও ৬৫০ টাকার ডেট ক্রাউন খেজুর ৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
৩শ গ্রামের রুহ আফজা ২৮০, ৭৫০ গ্রামের রুহ আফজা ৫০০ টাকা, ট্যাংজার ৭৫০ গ্রাম ৭৬০ টাকা, ৫০০ গ্রাম মুড়ি ৭০ টাকার পরিবর্তে ৬৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এর সাথে ৫ শতাংশ ভ্যাট যা লাভের অংশ থেকে দিচ্ছে হাট বাজার কর্তৃপক্ষ।
তাদের এমন উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে গাজী গোলাম মোস্তফা লিখেছেন, সারা বাংলাদেশে কি হচ্ছে জানিনা তবে যশোর একটু ব্যতিক্রম দেখে আসলাম হাটবাজার সুপার শপে। রমজান উপলক্ষে বিশেষ ছাড় নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের। এই রমজানে যশোরে খোকন ভাইয়ের মতো হাটবাজারের মত সবাই যদি একটু ত্যাগের মহিমা দেখায় তাহলে বাংলার মানুষ অনেক উপকৃত হবে। হাটবাজারের মালিকসহ সমস্ত স্টাফদের অনেক অনেক ধন্যবাদ।
মোকবুল আহমেদ নামে অন্য একজন ক্রেতা ফেসবুকে তার অনুভূতি জানিয়ে লিখেছেন, মেয়েকে নিয়ে কিছু রোজার খাবার কিনতে গেলাম যশোরের হাট বাজার ডিপার্টমেন্টাল স্টোরে। আমি অবাক হয়েছি এবং ভীষণ ভালো লেগেছে। রোজা উপলক্ষে এখানে দ্রব্যমূল্যের দাম কমানো হয়েছে। যেখানে সর্বজায়গায় চলছে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির মহড়া। সত্যিই ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। প্রতিষ্ঠানের মালিকের এই মহতী উদ্যোগকে আল্লাহ পাক কবুল করুন।
হাট বাজারের এমন উদ্যোগ থেকে অন্য ব্যবসায়ীদের অনেক কিছু শেখার আছে। রমজান এলেই বাংলাদেশী ব্যবসায়ীরা যেন দাম বৃদ্ধির প্রতিযোগিতায় নেমে পড়েন। সেখানে সাধারণ মানুষের কথা চিন্তা করে হাট বাজারের এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়ে আয়ুব হোসেন নামে একজন ক্রেতা বলেন, মানুষের নৈতিকতার অবক্ষয় হয়েছে। এখন আমরা ভালো মন্দ কোন কিছুই বুঝতে পারিনি। সকলে মিলে একটা নষ্ট প্রতিযোগিতায় নেমেছি। সেখানে হাট বাজার রমজান উপলক্ষে প্রায় ৩০ টি পণ্যের দাম কমিয়েছে। এতে কিছু মানুষ অন্তত উপকৃত হচ্ছে। রমজানে পণ্যের দাম কমিয়ে দেয়ার বিষয়ে হাট বাজারের সত্ত্বাধিকারী মেফতাহুর রহমান খোকন বলেন, বছরের ১১ মাস ব্যবসা করি। অন্তত ১টা মাস লাভ কম হলে খুব বেশি ক্ষতি হবে না। বরং সবাই যখন নিত্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে তখন আমরা কিছুটা কমিয়েছে এতে সাধারণ মানুষ কিছুটা হলেও স্বস্তি পাবে।
তিনি বলেন, আমরা খুব বেশি মানুষকে সুবিধা দিতে না পারলেও যারা আমাদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন তারা উপকৃত হচ্ছেন। আমাদের জন্য দোয়া করছেন । আমাদের এই উদ্যোগটি নেয়া মূলত নি¤œ ও মধ্যবিত্ত বা স্বল্প আয়ের মানুষদের জন্য।
এক প্রশ্নের জবাবে মেফতাহুর রহমান খোকন বলেন, ২০ বছর আগে যখন হাট বাজার প্রতিষ্ঠা করেছিলাম তখন অনেকেই বলেছিলো এক বছরের বেশি টিকতে পারবে না। অথচ ২০ বছর পার হয়েছে। কিছুটা আর্থিক ক্ষতি তো হবেই। যেমন বিদ্যুৎ এর দাম বেড়েছে। তাছাড়া রমজান উপলক্ষে অতিরিক্ত ৩ জন সেলসম্যান নিয়োগ দিতে হয়েছে। তাদের বেতন দিতে হবে। সব মিলিয়ে খরচ এবং লাভ মুখোমুখি অবস্থায় থাকবে।