ধর্ম ডেস্ক
নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম একক কোনো জাতি-গোষ্ঠীর নবী নন। তিনি ছিলেন সমগ্র বিশ্বের সব মানুষের নবী এবং রাহমাতুল্লিল আলামিন (সা.)।
উম্মতের প্রতি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দরদ ও ভালোবাসা ছিল অপরিসীম। উম্মতের কল্যাণ সাধনা ছিল তার জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। উম্মতকে ঘিরে উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠায় কাটতো তার রাতদিন। এ প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমে আল্লাহ তাআলা বলেন- لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِّنْ أَنفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُم بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَّحِيمٌ
অর্থ: ‘তোমাদের কাছে এসেছে তোমাদের মধ্য থেকেই একজন রাসূল। তোমাদের দুঃখ-কষ্ট তার পক্ষে দুঃসহ। তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, দয়াময়।’ (সূরা: তওবা, আয়াত: ১২৮)
আর তাই বিশ্বনবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের প্রতিটি বিষয়ে দিয়ে গেছেন সঠিক দিক নির্দেশনা। রমজান রোজা বিষয়ে রাসূল বলেন- ‘যে ব্যক্তি কোনো কারণ বা অসুস্থতা ছাড়া রমজানের রোজা ভাঙে, তার ওই রোজার বিপরীতে সারা জীবনের রোজাও রমজানের একটি রোজার সমমর্যাদা সম্পন্ন ও তার স্থলাভিষিক্ত হবে না।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৭২৩)
তবে অসুস্থতা বা ইসলামি শরিয়ত অনুমোদিত অন্য কোনো কারণে রোজা রাখতে না পারলে তার প্রতিবিধান রয়েছে। তাদের ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে- شَهْرُ رَمَضَانَ الَّذِي أُنزِلَ فِيهِ الْقُرْآنُ هُدًى لِّلنَّاسِ وَبَيِّنَاتٍ مِّنَ الْهُدَىٰ وَالْفُرْقَانِ ۚ فَمَن شَهِدَ مِنكُمُ الشَّهْرَ فَلْيَصُمْهُ ۖ وَمَن كَانَ مَرِيضًا أَوْ عَلَىٰ سَفَرٍ فَعِدَّةٌ مِّنْ أَيَّامٍ أُخَرَ ۗ يُرِيدُ اللَّهُ بِكُمُ الْيُسْرَ وَلَا يُرِيدُ بِكُمُ الْعُسْرَ وَلِتُكْمِلُوا الْعِدَّةَ وَلِتُكَبِّرُوا اللَّهَ عَلَىٰ مَا هَدَاكُمْ وَلَعَلَّكُمْ تَشْكُرُونَ
অর্থ: ‘রমজান মাসই হলো সে মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুষ্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তাআলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।’ (সূরা: বাকারা, আয়াত: ১৮৫)
আরও পড়ুন:রমজানে হজমে সমস্যা হলে করণীয়
যেভাবে আদায় করবেন রমজানের কাজা রোজা
রোজা ফরজ এমন ব্যক্তি যদি ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় অথবা কোনো অসুস্থতা, সফর ও ঋতুচক্র হওয়ার মতো কারণে রোজা ভঙ্গ করে তার জন্য ছুটে যাওয়া রোজার সমপরিমাণ রোজা কাজা করা আবশ্যক। এই ব্যাপারে সব ইমাম একমত। কেননা আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনুল কারিমের সূরা বাকারার ১৮৪-১৮৫ নম্বর , আয়াতে সংখ্যা পূরণ করতে বলেছেন।
হাদিসে এসেছে, এক নারী আয়েশা (রা.) এর কাছে জিজ্ঞাসা করল, ঋতুমতী নারী যখন ঋতু থেকে পবিত্র হয়, তখন কি সে নামাজ কাজা করবে? তিনি বললেন, তুমি কি হারুরি গোত্রের নারী? আমরা তো রাসূলুল্লাহ (সা.) এর যুগে ঋতুমতী হতাম এবং যখন পবিত্র হতাম, তখন আমাদের রোজা কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হতো কিন্তু সালাত কাজা করার নির্দেশ দেওয়া হতো না।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস: ২৩১৮)
যে ব্যক্তি শরীয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া রোজা ভাঙবে তাকে কাজা আদায়ের সঙ্গে সঙ্গে কাফফারাও দিতে হবে। তা হলো, দাস মুক্ত করা; সেটা না পারলে লাগাতার দুই মাস রোজা রাখা; সেটা না পারলে ৬০ জন মিসকিনকে খাবার দান করা।
কাজা আদায়ের সময়
পরবর্তী রমজান মাস আসার আগে যতটা দ্রুত রমজানের রোজার কাজা আদায় করতে হবে। বিনা কারণে কাজা আদায়ে বিলম্ব করা মাকরুহ বা অপছন্দনীয়। কারো ওপর যদি রমজানের রোজা কাজা থাকে, তবে সে তা আদায় করবে। অতঃপর শাওয়ালের ছয় রোজার মতো অন্যান্য নফল রোজা আদায় করবে। কাজা আদায় না করে অন্য কোনো নফল আদায় করলেও তা শুদ্ধ হয়ে যাবে- যদিও তা অনুচিত হবে। বছরের যেকোনো দিন রমজানের রোজার কাজা আদায় করা যায়, তবে ঈদের দিনের মতো নিষিদ্ধ দিন, পরবর্তী কোনো রমজান ও মান্নাতের রোজার জন্য নির্ধারিত দিনে তা আদায় করা যাবে না। (সূত্র : আল-ফিকহুল ইসলামী ওয়া আদিল্লাতুহু : ৩/১০৭-১১৩)
আরও পড়ুন:রোজাদার গর্ভবতী মায়েদের জন্য পরামর্শ