আবদুল কাদের: যশোর ও নড়াইলে ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়াই চালকরা ৫ হাজারের বেশি গাড়ি চালাচ্ছেন। আবার এসব গাড়ির বেশিরভাগই নেই ফিটনেস। ফলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যাত্রীরা চলাচল করছে। বিআরটিএ থেকে বাববার তাগিদ দেয়া হলেও মালিক পক্ষ তাদের গাড়ির ফিটনেস ঠিক করছেনা। আবার চালকরা আবেদন করেও ড্রাইভিং লাইসেন্স পাচ্ছেন না। যদিও বাস মালিকরা বলছেন, আগামী ২৮ ফেরুয়ারি পর্যন্ত ফিটনেস ফি মওকুফ করেছে সরকার। এরপর তারা নবায়ন করবেন।
যশোর বিআরটিএ অফিস সূত্রে জানা গেছে, যশোর ও নড়াইল জেলা নিয়ে তাদের কার্যক্রম। এই দুটি জেলায় রেজিস্ট্রেশনকৃত গাড়ি রয়েছে ৫ হাজার ৮০০। এর মধ্যে ফিটনেস রয়েছে ২ হাজার গাড়ির। আর ফিটনেসবিহীন গাড়ি রয়েছে তিন হাজার ৮০০। ৯০ শতাংশ গাড়ি যশোরের। আর চালকের লাইসেন্স রয়েছে মাত্র ৫০৮টি। চালকের লাইসেন্স ছাড়াই চলাচল করছে ৫ হাজার ২৯২টি গাড়ি।
যশোর-চৌগাছা রুট। শহর থেকে প্রতি ১০ মিনিট পর পর যাত্রীবাহী বাস ছেড়ে যায় চৌগাছার উদ্দেশ্যে। টার্মিনাল থেকে ছাড়ার সময় এসব বাসে সিট গুনে যাত্রী থাকলেও পথিমধ্যে অতিরিক্ত যাত্রীর চাপ বাড়ে। শুধু ভেতরে নয়, ছাদেও গাদাগাদি করে বসেন মানুষ। যাত্রা পথেই কোন কোন গাড়ি বিকল হয়ে পড়ে। বন্ধ হয়ে যায় স্টার্ট। তখন যাত্রীদের নামিয়ে ধাক্কা দিয়ে চালু করা গাড়ি আবার চলতে শুরু করে। বিকট আওয়াজ করে দ্রুতগতিতে চলা এসব গাড়ি প্রতিনিয়ত ছোট বড় দুর্ঘটনা ঘটায়।
সম্প্রতি এই সড়কে চলা একটি বাসের চালক সামনে আসা একজন পথচারিকে বাঁচাতে কড়া ব্রেক ধরেন। তখন গাড়ির তলা থেকে যন্ত্রাংশ খুলে পড়ে। নিরুপায় যাত্রীরা অন্য গাড়িতে চড়ে গন্তব্যে যান। এমন বেহাল গাড়ি শুধু যশোর-চৌগাছা নয়, যশোর-কেশবপুর, বাঘারপাড়া, বেনাপোল, নড়াইল ও মাগুরা সড়কে প্রতিনিয়ত চলছে। যাদের বিরুদ্ধে কার্যকরী ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নিয়েছে জেলা প্রশাসন।
যশোর বাস মালিক সমিতির সভাপতি বদরুজ্জামান বাবলু জানান, যশোর-সাতক্ষীরা, যশোর-মাগুরা, যশোর-চৌগাছা, যশোর-ফরিদপুর, যশোর-বরিশাল, যশোর-ছুটিপুর-বেংদাহ, যশোর-রাজগঞ্জ, ঝিকরগাছা-বাঁকড়া, নাভারণ-সাড়াতলা, যশোর-নারকেলবাড়িয়াসহ এই অঞ্চলের সড়কগুলোয় এক হাজার হাজার বাস, মিনিবাস চলাচল করে।
যশোর আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও ঈগল পরিবহনের স্বত্ত্বাধিকারী পবিত্র কাপুড়িয়া জানান, ৯টি মালিক সমিতির অধীনে থাকা এসব গাড়ির মধ্যে অন্তত ৭০ শতাংশ গাড়ির কোন ফিটনেস নেই। এসব গাড়ির রেজিস্ট্রেশন দীর্ঘদিন হালনাগাদ করা হয়নি। সরকার আগামী ২৮ ফেরুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়েছেন। এরপর আশা করছি মালিকরা ফিটনেস করবেন। আর চালকরা বিআরটিএতে আবেদন করেও লাইসেন্স পাচ্ছেনা। সমস্যা হচ্ছে বিআরটিএ’র, আর দোষ হচ্ছে চালকদের।
যশোর পরিবহন সংস্থা শ্রমিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সেলিম রেজা মিঠু জানান, বাস চালকরা বর্তমানে আবেদন করেও লাইসেন্স পাচ্ছে না। শ্রমিকদের লাইসেন্স না থাকলে কোন দুর্ঘটনা হলে হত্যা মামলা হতে পারে। এজন্য আমরা সাবাইকে লাইসেন্স করতে তাগাদা দিচ্ছি। আবার মালিক পক্ষকেও দেখতে হবে তিনি যার কাছে গাড়ি চালাতে দিচ্ছেন তার লাইসেন্স রয়েছে কিনা।
বিআরটিএ’র যশোর অফিসের সহকারী পরিচালক মাহফুজুর রহমান জানান, ৩ হাজার ৮শ গাড়ির কোনো ফিটনেস নেই। বেশিরভাগ গাড়িগুেেলা যশোর জেলায় চলাচল করে। একারণে সরকার যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, তেমনি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ছে যাত্রী পরিবহন ব্যবস্থা। ঝুঁকিপূর্র্ণ এসব যানবাহনের বিরুদ্ধে পুলিশি ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান জোরদার করার দাবি জানান তিনি।
যশোর ট্রাফিক পুলিশের পরিদর্শক খন্দকার মশিউর রহমান জানান, আমাদের লাইসেন্স ও ফিটনেস বিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। গত মাসেও আমরা ২৩৫টি মামলা করেছি। আর ২০২১ সালে ট্রাফিক পুলিশ ১৭ হাজার বিভিন্ন গাড়ির বিরুদ্ধে মামলা করে জরিমানা আদায় করা হয়েছে ৩ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
জেলা প্রশাসক তমিজুল ইসলাম খান জানান, আমাদের সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ফিটনেসবিহীন মোটরযানের তালিকা তৈরি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বিআরটিএ’র পাশাপাশি মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন যৌথভাবে এজন্য কাজ করছে। ইতিমধ্যে গাড়ি সংস্কার ও কাগজপত্র হালনাগাদের জন্য নোটিশ জারি করেছে বিআরটিএ। গাড়ির মালিকরা যদি শিগগিরই ফিটনেস নবায়ন না করেন তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।