সংস্কার হয়নি পঁচিশ বছরেও
রায়হান সিদ্দিক: যশোর শহরের শংকরপুরে আধা কিলোমিটার সড়ক যেন দুর্ভোগের অপর নাম। বৃষ্টিতে পানি জমে আর শুষ্ক মৌসুমে ধুলোবালি। কোনো সময়ই শান্তি নেই এখানে বসবাসরত ৩শ’ পরিবার ও পথচারীদের। ছোটনের মোড় থেকে দেলোয়ারের মোড় পর্যন্ত আধা কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের কথা দেন জনপ্রতিনিধিরা। কিন্তু গত ২৫ বছরে কেউ কথা রাখেননি। ফলে বছরের পর বছর এলাকাবাসীকে পোহাতে হচ্ছে সীমাহীন দুর্ভোগ।
সংস্কারের অভাবে ওই সড়কে পানি জমে সৃষ্টি হয়েছে খানাখন্দ। রাতের অন্ধকারে এ পথে যাতায়াত করা একেবারে অসম্ভব হয়ে পড়ে। বাসা থেকে সড়কে নামলেই ভোগান্তিতে পড়েন এলাকাবাসী।
স্থানীয় ফিরোজ হোসেন বলেন, আমাদের রাতের বেলা কেউ হঠাৎ অসুস্থ হলে তাকে হাসপাতালে নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ডাকলে এই সড়কে তা প্রবেশ সম্ভব না। এমনকি ইজিবাইক, রিকশাও এই সড়কে আসতে চায় না। যার জন্য প্রায় সময় বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়তে হয়।
তিনি আরও বলেন, বর্ষা মৌসুমে বিপদ সব থেকে বেশি। হালকা বৃষ্টি হলেই আর সড়ক মনে হয় না। মনে হয় খাল। পানি থৈ থৈ করে। শিক্ষার্থীরা স্কুলে যেতে পারে না। কাজের জন্য বাইরে যেতে হতে হলে আলাদা পোশাক নিয়ে বের হতে হয়। প্রতিবার পৌরসভার নির্বাচনের সময় আমাদের আশ্বাস দেয়া হয়- সবার আগে এই সড়ক সংস্কার করা হবে। কিন্তু পরে ভুলে যান জনপ্রতিনিধিরা।
স্থানীয় চা দোকানি নাজমুল শেখ বলেন, ‘প্রায় পঁচিশ বছর সড়কটি বেহালে আছে। বৃষ্টি হলেই সড়ক ডুবে যায়। এখানকার ড্রেন সময়মত পরিস্কার না করায় পানি সড়কে উঠে আসে। সব সময়ই ময়লার গন্ধ নাকে লাগে। অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এই সড়কে চলাচল করতে খুব কষ্ট হয়।
ওষুধ কোম্পানিতে চাকরি করেন সুজন মিয়া। তিনি জানান, কয়েকদিন আগে বৃষ্টির ভেতরে বাড়ি ফিরছিলাম। হঠাৎ মোটসাইকেলের চাকা গর্তে আটকে যায়। গাড়িটি যতই সামনের দিকে নেয়ার চেষ্টা করি, ততই ঝাঁকুনি দিয়ে হেলে পড়ি। উল্টে পড়ার দশা।
বয়স্ক নারী মরিয়াম বেগম ডাক্তারের কাছে যেতে রিতিমত নাজেহাল হন। তিনি বলেন, ‘দুই যুগের বেশি আমরা এই ভোগান্তি পোহাচ্ছি। সারা বছরই সমস্যা। বছরের পর বছর অপেক্ষা করেও সমস্যার কোনো সমাধান হচ্ছে না। আমরা কাদা-পানি আর ধুলোবালিতে বন্দি হয়ে আছি।
রিকশাচালক খলিল মিয়া বলেন, বৃষ্টির সময় কাদা-পানি থাকে। গর্তে পড়ে রিকশা উল্টে যায়। অনেকের হাত-পা ভাঙে। সারা বছর সমস্যা থাকে। সহজে এই রাস্তায় ঢুকি না।
শিক্ষার্থী সুমন হোসেন বলেন, মাঝেমধ্যে ময়লা কাদা-পানিতে ইউনিফর্ম নষ্ট হয়ে যায়। আর প্রতিদিনই জুতায় কাদা লেগে যায়। সড়কে হাঁটারও উপযোগী নেই।
পঁচিশ বছরেও কেন সড়কটি সংস্কার হলো না জানতে চাইলে পৌর সচিব আজমল হোসেন বলেন, যশোর শহরে এখন অধিকাংশ সড়কের সংস্কার হয়েছে। তবে সব কাজ তো একবারে করা সম্ভব না। এখনো বেশ কিছু সড়ক রয়েছে যেগুলো সংস্কারের প্রয়োজন, অনেক জায়গায় সড়ক নির্মাণে কাজ চলছে। খুব দ্রুতই দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার না হওয়া সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হবে।
এ বিষয়ে সাত নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শাহেদ হোসেন নয়ন বলেন, সড়কটি দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি। আমি নির্বাচনের আগে এই সড়কের সংস্কারের কথা বলেছিলাম। মেরামতের ব্যাপারে ইতিমধ্যে আমি মেয়রকে বলেছি। নতুন প্রকল্প আসলে সর্ব প্রথম এ সড়কটি সংস্কার করা হবে।