সবুজ মিয়া, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: প্রায় ৬৫ বছর আগে এক রাজনৈতিক জনসভায় যোগ দিতে ঝিনাইদহের শৈলকূপার এই বাড়িতে এসেছিলেন বঙ্গবন্ধু। কিন্তু সংস্কারের অভাবে বাড়িটি এখন জীর্ণ দশায় পরিণত হয়েছে। বাড়িটি জেলা শহর থেকে প্রায় ৩০ কিলোমিটার দূরে শৈলকূপা উপজেলার বাখরবা গ্রামে অবস্থিত।
১৯৫৪ সালে তৎকালীন প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী প্রয়াত অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় পার্শ্ববর্তী জেলা কুষ্টিয়ার খোকসা হয়ে ঝিনাইদহের শৈলকুপার বাখরবা গ্রামে আসেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। সন্ধ্যায় কামরুজ্জামানের বাড়িতে রাতযাপন করে সকালে তার বাড়ির পুকুরে গোসল শেষ করে দুপুরে পাশের কাতলাগাড়ী বাজারে জনসভায় যোগ দেন বঙ্গবন্ধু। সভা শেষ করতে সন্ধ্যা হওয়ায় সে রাতও তিনি এই বাড়িতে থেকে যান। পরদিন সকালে সেখান থেকে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেন বঙ্গবন্ধু।
সেই ঘর এবং একটি চৌকি বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি হিসেবে আজো রয়েছে। ঘরটির সব কিছুই সে সময়কার। তবে যে প্লেটে জাতির জনক খেয়েছিলেন তা এখন আর নেই। যে চেয়ারে তিনি বসেছিলেন সেটিও কয়েক বছর আগে চুরি হয়ে গেছে। তবে তার ব্যবহৃত চৌকিটি ওই ঘরেই রয়েছে। হামলার পর অনেকেই বাড়িটি দেখতে আসেন। কিন্তু বাড়িটির বেহাল দশা দেখে হতাশ হন। বর্তমানে বাড়িটির একপাশে বসবাস করছেন বাড়ির মালিক প্রয়াত অধ্যক্ষ কামরুজ্জামানের ভাতিজা আশফার আহমেদ বেলাল দম্পতি।
সে সময় জাতির পিতার সান্নিধ্য পেয়েছিলেন বলে দাবি করা ওই গ্রামের বৃদ্ধ তবারক হোসেন জানান, তখন তার বয়স ছিলো ১৩ বছর। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন বাড়িটিতে ছিলেন তখন তাঁর সঙ্গে আমার কথা বলার সৌভাগ্য হয়েছে। সেসময় পুকুরে গোসল করতে গেলে আমি তাঁর গামছা এগিয়ে দিয়েছিলাম। তার কাছে গল্প শুনতাম।
হামলার বিষয়ে তিনি বলেন, গত ৫ জানুয়ারি ইউপি নির্বাচনের পর থেকে ইউনিয়নব্যাপি গোলযোগের সৃষ্টি হয়। তারই জের ধরে গত ১২ জানুয়ারি রাজনৈতিক ও নির্বাচনি এ কোন্দলকে কেন্দ্র করে ওই বাড়িটিসহ স্থানীয় আরও চার পাঁচটি বাড়ি ভাঙচুর করে দুর্বৃত্তরা। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সাথে হেঁটে এই বাড়ি থেকে কাতলাগাড়ি বাজারে জনসভায় অংশ নিয়েছিলাম। এখনও বঙ্গবন্ধুর কথা মনে হলেই ওই বাড়িতে যেয়ে ঘুরে আসি। বাড়িটিতে হামলা হওয়ার পর আমি তিনবার যেয়ে দেখে এসেছি। আর তিনবারই আমার বুকে রক্তক্ষরণ হয়েছে। তিনি বলেন, হামলা যেন ওই বাড়িটির উপর করা হয়নি ডাইরেক্ট বঙ্গবন্ধুর ওপর করা হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছেন, ইউপি নির্বাচন কেন্দ্রিক সারুটিয়া ইউনিয়ন জুড়ে দফায় দফায় হামলা ও মারামারি হয়েছে, যার ফলে চার চারটি খুনের ঘটনা সংগঠিত হয়েছে। থানায় মামলা হয়েছে অপরাধীদের কিছু গ্রেফতার করা হয়েছে অন্যান্যদের গ্রেফতারের জন্য অভিযান অব্যাহত আছে।