উন্নয়ন হবে স্টেশনের চার নাম্বার লাইন
রেলে বাড়বে কন্টেইনারবাহী ওয়াগন
আবদুল কাদের: রেলের আধুনিকায়নে সারা দেশে বড় বড় প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলেও লাগছে উন্নয়নের ছোঁয়া। এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরেই সংস্কার হচ্ছে যশোর-বেনাপোল লাইনের সাড়ে ৩৭ কিলোমিটার ও যশোর রেলস্টেশনের চার নাম্বার লাইনের দুই হাজার তিনশ ফিট রেল লাইন। এসব লাইন সংস্কার করা হলে রেলে বাড়বে কন্টেইনারবাহী ওয়াগন। যাতায়াত করা যাবে স্বাচ্ছন্দ্যে।
বেনাপোল রেল সূত্রে জানা গেছে, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের ৮ মাসে (জুলাই ফেরুয়ারি) ভারত থেকে ট্রেন আড়াই লাখ মেট্রিক টন বিভিন্ন ধরনের পণ্য আমদানি হয়েছে। এ থেকে রেলওয়ের আয় হয়েছে প্রায় ২০ কোটি টাকা। কিন্তু আমদানি পণ্য খালাসে নূন্যতম সুযোগনুবিধা বাড়ায়নি রেলকর্তৃপক্ষ।
বেনাপোল স্টেশনের ম্যানেজার সাইদুর রহমান জানান, আমাদের দ্বিতীয় লাইনটি আগামী মাসে চালু হবে বলে আশা করছি। ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ লাঘবে আমরা কাজ করছি।
যশোর চেম্বার অব কমার্সের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান খান জানান, সড়কপথে নানা দুর্ভোগের কারণে আমদানিকারকরা রেলপথে পন্য আমদানি বাড়িয়েছেন। কিন্তু রেলে সেই অনুযায়ী কোন সুযোগ-সুবিধা গড়ে উঠেনি। রেলের অবকাঠামো উন্নয়ন হলে আমদানি আরও বাড়বে। সেই সাথে ব্যবসায়ীরাও উপকৃত হবেন।
বেনাপোল কাস্টমের কমিশনার মো: আজিজুর রহমান জানান, পেট্টাপোলে দীর্ঘজটের কারণে আমদানিকারকরা রেলপথে আমদানি করছেন। এটা সবার জন্য ভালো। এজন্য রেলকে আরও উন্নত গতে হবে।
এব্যাপারে যশোর রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী ওয়ালি উল হক জানান, যশোরে একটি মেইন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল করছে। এখানকার ডাবল লাইন প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে চলতি বছর আমরা যশোর-বেনাপোল লাইনের সাড়ে ৩৭ কিলোমিটার ও স্টেশনের চার নাম্বার লাইনের দুই হাজার তিনশ ফিট রেল লাইন সংস্কার করব। এসব লাইন সংস্কার করা হলে রেলে বাড়বে কন্টেইনারবাহী ওয়াগন। তখন আমাদের রাজস্ব বেশি আসবে। ইতিমধ্যে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
যশোর থেকে প্রতিদিন ২৪টি রেল চলাচল করছে মাত্র একটি মেইন লাইন দিয়ে। এতে ঝুঁকির পাশাপাশি যাত্রীদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। এক পাশ দিয়ে একটি ট্রেন আসলে অপর পাশের ট্রেনটি ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে। তবে রেল কর্তৃপক্ষ বলছে, চলতি বছরেই সংস্কার করা হবে যশোর-বেনাপোল লাইনের সাড়ে ৩৭ কিলোমিটার ও যশোর রেলস্টেশনের চার নাম্বার লাইনের দুই হাজার তিনশ ফিট রেল লাইন। এসব লাইন সংস্কার করা হলে রেলে বাড়বে কন্টেইনারবাহী ওয়াগন।
যশোর স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, খুলনার দৌলতপুর থেকে যশোর হয়ে মোট ১২ জোড়া ট্রেন যাতায়াত করে। এছাড়া মালবাহী আরও চারটি ট্রেন চলে। ট্রেনগুলো হলো নকশিকাঁথা, গোয়ালন্দ মেল, কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, বেতনা ট্রেন, রূপসা এক্সপ্রেস, চিত্রা এক্সপ্রেস, রকেট মেইল, মহানন্দা, সাগরদাঁড়ি, সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও সীমান্ত এক্সপ্রেস। বেতনা ট্রেনটি চলে দুবার।
এসব ট্রেন চলে একটি মাত্র মেইন লাইন দিয়ে। খুলনা থেকে দর্শনা পর্যন্ত একটি লাইন রয়েছে রেলের। দর্শনা থেকে ঈশ^রদী পর্যন্ত ডাবল লাইন থাকলেও ঈশরদী থেকে ঢাকা আবার একটি লাইনের উপর চলছে ট্রেন। খুলনা থেকে যশোর পর্যন্ত ৫৬ কিলোমিটার, খুলনা থেকে দর্শনা ১২৬ কিলোমিটার এবং যশোর থেকে বেনাপোল ৩৭ কিলোমিটার রেলের লাইন রয়েছে। তবে এসব লাইনে বেশিরভাগ জায়গায় বসানো হয়েছে লোহার স্লিপার।
এছাড়া যশোর রেলওয়ের স্টেশন দিয়ে প্রতিদিন ৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করলেও বসার জন্য মাত্র দু’টি রুম রয়েছে যেখানে বসতে পারেন ২০ জন। রুম দু’টিতে বাথরুম থাকলেও ব্যবহার উপযোগী নয়। এই অবস্থার মধ্যে দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছে রেলযাত্রীদের।
সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে ঢাকা যাবার জন্য পরিবারের সদস্যদের নিয়ে যশোর রেলওয়ে স্টেশনে আসেন শহরের বারান্দীপাড়ার বাসিন্দা ইমরুল হাসান। কিন্তু বসার পর্যাপ্ত জায়গা না থাকার কারণে তার শিশু সন্তান নিয়ে স্ত্রী দাঁড়িয়ে ছিলেন ট্রেনের অপেক্ষায়। শুধু বসার জায়গা নয়, বাথরুম সংকট প্রকট যশোর স্টেশনে। ছিনতাইকারী আর মাদক কারবারীদের আড্ডাস্থল জংশনটি।
খুলনা থেকে যশোর ক্যান্টনমেন্ট পর্যন্ত ৫২টি গেট রয়েছে। এর মধ্যে ৯টিতে গেটকিপার নেই। এছাড়া আরও অস্থায়ীভাবে গড়ে উঠা ৪০টি গেট রয়েছে অরক্ষিতভাবে। একই পথে স্টেশন ২২টি থাকলেও ৬টি স্টেশন মাস্টার না থাকার কারণে বন্ধ রয়েছে। এগুলো হলো ফুলতলা, চেঙ্গুটিয়া, রূপদিয়া, ক্যান্টনমেন্ট, মেহেরুল্লাহ নগর ও আনসার বাড়িয়া। যেকারণে ট্রেন চলাচল করছে ঝুঁকি নিয়ে। আবার যাত্রীরাও এসব স্টেশনে নামতে বা উঠতে পারছেনা। কেননা ওইসব স্টেশনে ট্রেন থামছে না।
নওয়াপাড়ার বাসিন্দা সাইফুর রহমান জানান, তিনি প্রতিদিন ট্রেনে করে বাড়ি থেকে যশোরে কর্মস্থলে আসেন। কিন্তু ট্রেনের পরিবেশ তেমন ভালো না। চোরাচালানিরা পণ্য নিয়ে যাতায়াত করায় অন্য যাত্রীদের দুর্ভোগে পড়তে হয়। আবার রাত হলেই ভয় থাকে ছিনতাই হবার। ভোর বেলায়ও একই আতংক বিরাজ করে। পরপর ট্রেন ছাড়লে যাত্রীদের বসার জায়গা থাকে না। বয়স্ক আর শিশুদের কষ্ট পেতে হয়।
যশোর রেলস্টেশন মাস্টার আয়নাল হোসেন জানান, যশোর রেল স্টেশন থেকে ৪ হাজার যাত্রী যাতায়াত করে। এখানে মাত্র দু’টি রুম রয়েছে; যেখানে বসতে পারেন ২০ জন। রুম দু’টিতে বাথরুম থাকলেও যথেস্ট নয়। আর একটি রেল লাইন হাবার কারণে ক্রসিংয়ের সময় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যাত্রীদের বসে থাকতে হয়।
যশোর রেলওয়ের উর্ধ্বতন উপসহকারী প্রকৌশলী মাহবুব হাসান জানান, ডাবল লাইন না থাকার কারণে ট্রেনের গতি কমে যাচ্ছে। আবার গেটকিপার না থাকায় দুঘর্টনার ঝুঁকি থাকছে। বিশেষ করে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে উঠা ৪০টি গেট বেশি দুশ্চিন্তায় ফেলছে।