শাহারয়িার আলম তূর্য
শ্রীলংঙ্কার বিপক্ষে দারুণ জয় ও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ম্যাচের পারফরম্যান্সের পর নেদারল্যান্ডের সঙ্গে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী ছিলাম। তবে ফর্মহীনতা ও নিউইয়র্কের ড্রপ ইন পিচে পারফরম করতে না পারা সাকিব, লিটন ও নাজমুল হাসান শান্তর উপর নজর ছিল। সাকিব দুর্দান্ত ফিরে আসার গল্প লিখে হয়েছেন ম্যাচ সেরা। সাকিবের সাথে শান্ত-লিটন পারফরম করলে এ বাংলাদেশ যেকোনো দলের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়াবে।
১০ বছরের অধিক সময় জ্যামাইকার কিংসটোন স্টেডিয়ামে আন্তর্জাতিক কোনো ম্যাচ হয়নি। এমন মাঠে যেকোনো অধিনায়কই টসে জিতলে ফিল্ডিং নিতো। ডাচ অধিনায়ক এডোয়ার্ডস্ও তাই করেছে।
কয়েক ম্যাচের ধারাবাহিকতা ধরে শান্ত ও লিটন বাজে শট খেলে উইকেট বিলিয়ে দিয়ে এসেছে। তবে এদিন তানজিদ তামিমের অসাধারণ কিছু শট আর বিশ্বকাপের সেরা খেলোয়াড়দের একজন সাকিব আল হাসানের প্রত্যাবর্তন অন্য এক বাংলাদেশ দেখেছেন ক্রিকেট বিশ্ব। এই উইকেটে রান করাটা কঠিন না হলেও অতটা সহজও নয়। অতিরিক্ত বাউন্সার ও স্পিনে টার্ন দুটোই ছিলো এই উইকেটে। বিশ্বকাপের মঞ্চে এই প্রথম আমরা কোনো দলের বিপক্ষে পাওয়ার প্লের ব্যবহার কিছুটা হলেও করতে পেরেছি। তামিম-সাকিবের জুটি আমাদের বড় টার্গেটের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল, সাকিবের দুর্দান্ত কিছু শট মনে করিয়ে দিচ্ছিল বিশ্ব ক্রিকেটের রাজপুত্রের মুকুটটা একমাত্র সাকিবের মাথায় মানায়। এই জুটি ভাঙার আগে তামিম ৩৫ (২৬) বলে আউট হলেও এদিন রানের গতি ছিলো সচল। এরপর ইনফর্ম তাওহীদ হৃদয়কে নিয়ে থিতু হবার আগেই জায়গা করে খেলতে গিয়ে নিচু হয়ে যাওয়া বলে বোল্ড হয়ে হৃদয় দ্রুত ফিরলেও সাকিব ও মাহমুদুল্লাহ্ একটা ফাইটিং স্কোরের দাঁড়প্রান্তে নিয়ে যান। মাহমুদুল্লাহ আউট হলে জাকির আলির ঝড়ো ১৪ (৭) আর সাকিবের হার না মানা ৬৪ (৪৬) এই উইকেটের জন্য লড়াকু স্কোর পায় বাংলাদেশ।
আসলে এদিন বাংলাদেশের সবচেয়ে বেশি যে ব্যাপার আমার ভালো লেগেছে সেটা হলে আগের ম্যাচের দুঃসহ স্মৃতি ভুলে গিয়ে সুযোগের ব্যবহারটাই করেছে। খেলোয়াড়রা মানসিক চাপের বাইরে ছিলো এদিন। পুরো একটা দল হিসেবেই খেলতে দেখেছি বাংলাদেশ দলকে।
দ্বিতীয় সেশন নেদারল্যান্ডসের ব্যাটিং এ নিয়ন্ত্রিত বোলিং, ফিল্ডিং দেখে মনে হয়েছে এই বাংলাদেশ দল বিশ্বকাপের মঞ্চের এই উইকেটে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে!
নেদারল্যান্ডসকে পাওয়ার প্লেতে তাদের দুই ওপেনার থিতু হবার আগেই আটকে রেখে তাসকিনের ব্রেক থ্রুর পর তানজিম সাকিবের রিটার্ন ক্যাচ প্রথম ধাক্কায় ফেলে দেন। এরপর ভিকরামজিৎ সাকিব ও রিশাদকে পরপর ৩টা ৬ সাময়িকের জন্য চিন্তার কারণ হলেও অধিনায়ক শান্ত ডানহাতি আর বামহাতি কম্বিনেশনে মাহমুদুল্লাহকে দিয়ে ভিকরাম জিৎকে লিটনের হাতে স্ট্যাম্প হলে নেদারল্যান্ডস কিছুটা চাপে পড়ে। অধিনায়ক এডোয়ারর্ড আর অংব্রেনট শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশ দলের নতুন সেনসেশন রিশাদের ঘূর্নীতে পরপর দুই আঘাতেই মূলত শেষ হয় নেদারল্যান্ডস। লিটনের দুর্দান্ত স্ট্যাম্পিং ছিলো বিশ্বসেরা কিপারদের মতো। মূল ম্যাচের মোমেন্টাম পাল্টে যায় সেখানেই। মুস্তাফিজ মাত্র ১/১২ রান দিয়ে তার কিপটে বোলারের কোটা পূরণ করেন। এরপর আর ঘুরে দাঁড়ানোর মতো শক্তি নেদারল্যান্ডসের ছিল না।
তবে আজকের খেলা দেখে আমি ভীষণ আশাবাদী কারণ বাংলাদেশ দল জয়ের ধারার পাশাপাশি একটি পূর্ণাঙ্গ দল হিসেবেই নেদারল্যান্ডসের সাথে আজকের খেলায় পারফর্ম করে জয়ী হয়েছে। আমি বলবো সামনে নেপালের সাথে আমাদের ম্যাচ এটাতে মনোযোগী হয়ে জয়ের ধারা অব্যাহত রেখে সুপার ৮ এর ব্যাপার এ ভাবতে হবে। তবু বাংলাদেশের জন্য সুপার ৮ যেমন নিশ্চিত ঠিক তেমনি বাংলাদেশ দলটি সামনের যেকোনো দলের জন্য ভয়ঙ্কর হতে পারে বলে আমার মনে হয়।
সামনের গল্প যেনো স্বপ্ন নয় এমন একটি ফলাফলের প্রত্যাশায় থাকলাম। বিশ্বকাপের মঞ্চে বাংলাদেশ হয়ে উঠুক পূর্ণ শক্তির দল।
সাকিব আবারও প্রমাণ করলেন সাকিবের তুলনা সাকিব নিজেই। বীরন্দর শেওয়াগের সমালোচনার জবাব কিভাবে দিতে হয় সেটাও সাকিব প্রমাণ করেছেন তার অসাধারণ পারফরম্যান্স দিয়ে। বাংলাদেশ ক্রিকেটের জয় হোক। বাংলাদেশ দলের জন্য রইলো শুভকামনা।
লেখক : সাবেক প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটার ও
সভাপতি, ক্রিকেটার্স ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ, যশোর শাখা।