নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে গ্রামপর্যায়ের হতদরিদ্রসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার ৭শ’১৬ জন গ্রাহকের বীমার মেয়াদপূর্ণ হলেও তাদের ১ কোটি ৫ লাখ টাকার দাবি নিষ্পত্তি না করে ওই টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ওই টাকা ফেরত না দিয়ে নানামুখি প্রতারণা ও অব্যাহত তালবাহানা করার ঘটনায় হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান পরিচালকগণ ও সিইওর বিরুদ্ধে যশোরের আদালতে মামলা হয়েছে।
যশোরের সীতারামপুরের গ্রাহক শেখ কামাল হোসেন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এই মামলাটি করেছেন। এর আগে অভিযুক্তদের উকিল নোটিশ করা হয়। ঐ নোটিশে কর্ণপাত না করায় শেষে মামলা করা হয়েছে। আধা পেটা খেয়ে, কখনও ডিম মুরগি বিক্রি করে, আবার দিন মুজুরি করে টাকা জমা করে এখন সংকটে সময় পার করা গ্রাহকেরা দ্রুত চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন সিইও এ কে দাশসহ ঘটনায় সরাসরি জড়িত ৯ জনকে আটকের দাবি করেছেন।
তথ্য মিলেছে, বাংলাদেশে শরীয়াহ ভিত্তিক জীবন বীমার প্রবর্তক শ্লোগান তুলে ১৯৯৬ সালে যশোর ব্রাঞ্চ চালু করে হোমল্যান্ড লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড। ১০ বার অফিস পাল্টিয়ে যশোর ব্রাঞ্চের বর্তমান অবস্থান যশোর শহরের আশ্রম রোডে। এই বীমা প্রতিষ্ঠানের কোনো দীর্ঘমেয়াদী সঠিক বিনিয়োগ পরিকল্পনা না থাকা, ৩ স্বতন্ত্র পরিচালকসহ ১৭ পরিচালকের মধ্যে স্বচ্ছতা না থাকা এবং অভ্যন্তরীন লুটপাটের কারণে বিমাকারীরা এমন ভয়ানক পরিস্থিতিতে পড়েছেন। বীমামেয়াদ পূর্ণ হলেও অধিকাংশ গ্রাহক টাকা ফেরত পাচ্ছেন না।
যশোর ব্রাঞ্চের তথ্যানুসারে যশোরাঞ্চলে এখন দুই হাজারেরও বেশি গ্রাহকের মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। কারো ৩ বছর, কারো ২ বছর, কারো এক বছর কারো ৬ মাস আবার কারো ৩ মাস। এরা প্রায় দুই কোটি টাকার উপরে পাবেন কোম্পানির কাছে। এর মধ্যে ৭শ’ ১৬ জন গ্রাহকের পক্ষে মামলা করা হয়েছে। তাদের এক কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩শ’৫৫ টাকা আত্মসাৎ করেছেন হোমল্যান্ডের চেয়ারম্যানসহ ৯ জন। আসামিরা হচ্ছেন, চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিন, ভাইস চেয়ারম্যান হোসনেয়ারা নাজ, পরিচালক জামাল মিয়া, মোহাম্মাদ জুলহাস, সালেহ হোসেন, কামাল মিয়া, আব্দুল হাই, সিইও এ কে দাশ ও সিএফও হোমল্যান্ড লাইফ ইন্সুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড।
মামলায় বলা হয়েছে, হোমল্যান্ড লাইফ ইনসুরেন্স কোং লিমিটেডের সার্ভিসিং সেন্টার যশোরের মাধ্যমে সকল নিয়ম কানুন মেনে যশোরের ৭শ’১৬ জন গ্রাহক হন। ২০১৯ সালের বিভিন্ন তারিখে ওই ৭শ’১৬ জন গ্রাহক ও পলিসি হোল্ডারদের পলিসি ম্যাচিউড হয়। কোম্পানির নিয়ম মোতাবেক সকল গ্রাহকদের স্ব স্ব নামের অনুকূলে চেক প্রদান করা ইনসুনেন্সের শর্ত থাকা সত্ত্বেও অদ্যাবধি ৭শ’১৬ জন গ্রাহককে কোনো চেক দেয়া হয়নি। এক কোটি ৫ লাখ ৮৬ হাজার ৩শ’৫৫ টাকা আত্মসাতের লক্ষ্যে পলিসির চেক না দিয়ে প্রতারণা করা হচ্ছে। যা অমানবিক নীতি-গর্হিত, বেআইনী এবং আইনের পরিপন্থি কাজ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মামলার বাদী কামাল হোসেনসহ সংশ্লিষ্ট ভুক্তভোগীরা জানিয়েছেন, দ্রুত চেয়ারম্যান জামাল উদ্দিনসহ চক্রের ৯ জনকে আটক করতে হবে। আটক করে আইনের আওতায় আনা না হলে যশোরের হতদরিদ্ররা তাদের পাওনা টাকা পাবে না।
হোমল্যান্ড ইন্স্যুরেন্সের সাবেক হাসিমপুর এরিয়া ইনচার্জ সিহাব উদ্দিন জানিয়েছেন, তার মাধ্যমে এলাকার কয়েকশ’ গ্রাহক হোমলান্ডের বই খোলেন। কয়েক বছরর আগেই তাদের মধ্যে ৪০ জনের বীমার মেয়াদ পূর্ণ হলেও টাকা পাননি তারা। এ কারণে স্থানীয় গ্রাহকেরা তাকে ধরেন, হেনস্তা করেন। তিনি যথাযথভাবে টাকা দিয়ে রশিদ দিলেও এখন টাকা পাচ্ছেন না গ্রাহকেরা। অবস্থা এতটাই বেগতিক যে হোমল্যান্ডের নানা প্রতারণার কারণে পাবলিকের হাত থেকে বাঁচতে এই চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন তিনি। তার সময়ের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার আলমগীর হোসেনকে বার বার বলা হলেও তিনি কোনো সমাধান করে যাননি।
এ ব্যাপারে হোমল্যান্ড যশোর ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইনচার্জ তাহাজ্জেল হোসেন জানিয়েছেন, আসলে সত্যি কথা বলতে কি, কোম্পানির ফান্ড এখন একেবারে শূণ্য। টাকা দেবে কোথা থেকে। যশোরে শুধু ৭শ’১৬ জন নন, দুই হাজারের বেশি গ্রাহকের বীমার মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে অনেক আগে থেকেই। প্রতিদিনই লোকজন আসছেন, গ্রাহকেরা আসছেন। টাকা দিতে না পারায় গালমন্দ শুনতে হচ্ছে। তিনি এই কোম্পানিতে ১৪ বছর কাজ করছেন। কোম্পানির নুন খান তার গুনও গাইতে হয়। কিন্তু এটাও সত্য যে দুই হাজার গ্রাহকের মেয়াদ পুর্ণ হয়েছে তাদের বাড়ি যশোরে। আর তার নিজের বাড়িও যশোরে। সবার জন্য তার চিন্তা হয়। তিনি চান সবাই টাকা পেয়ে যাক। এর জন্য তিনি বার বার কোম্পানিকে লিখছেন, তথ্য পাঠাচ্ছেন। কিন্তু কাজ হচ্ছে না।
আরও পড়ুন: অনলাইনে জুয়া খেলায় হেরে যুবকের আত্মহত্যা