শ্যামনগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি
সুন্দরবন খুলনা পশ্চিম জোন সাতক্ষীরা রেঞ্জের নোটাবেকী বন টহল ফাঁড়ি অভয়ারণ্য ঘোষিত এলাকা। এ এলাকায় নৌকা প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। কিন্তু ওই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ওই সব এলাকায় উৎকোচের বিনিময়ে অবাধে চলছে মাছ, কাকড়া আহরণ ও মায়াবী হরিণ নিধন এবং মূল্যবান কাট পাচার। এ সবের পেছনে কাজ করে একটি দালাল চক্র। ঘুষ নিয়ে তারা অভয়ারণ্যে মাছ কাকড়া আহরণের সুযোগ করে দেয়।
চুক্তির মাধ্যমে জেলেদের কাছে অঘোষিত ইজারা দেয় বনের নিষিদ্ধ ও অভয়ারণ্য নদী-খাল। নোটাবেকি বন বিভাগের কর্মী ছাড়াও ওই চক্রে রয়েছেন দাদন দেওয়া মাছ ব্যবসায়ী ও স্থানীয় দালাল চক্র। সম্প্রতি নোটাবেকী অভয়ারণ্য বন টহল ফাঁড়ি থেকে আটক হয় কয়রা থানার ৬ জন জেলেসহ ৪ খানা ডিঙ্গি নৌকা। বাকি ৬ জেলে সুন্দরবনের পালিয়ে যায়। এর মধ্যে পালিয়ে আসা কয়রা উপজেলার কালিকাপুর এলাকার সেলিম হোসেন চুক্তির মাধ্যমে (ঘুষ দিয়ে) সুন্দরবনের অভয়ারণ্যে এলাকায় মাছ ধরতে যাওয়ার বিষয়ে বলেন, ‘৪ খানা নৌকায় মোট ১২ জন জেলে দালাল বুড়িগোয়ালিনী সহিদূলের মাধ্যমে নোটাবেকী বন টহল ফাঁড়ির ওসি সাহাদাত স্যার এর সাথে ৬ দিনের জন্য মোট ৮০ হাজার টাকা চুক্তিতে সাহাদাত স্যারের হাতে নগদ ৬০ হাজার টাকা প্রদান করি’। তিনি আরো বলেন, সুন্দরবনের যে স্বাভাবিকের তুলনায় বড় মাছ বেশি পাওয়ায় অতিরিক্ত টাকা দাবি করে। টাকা দিতে অস্বীকার করায় তাদের ৪খানা নৌকাসহ ৬ জনকে আটক করে। এ সময় আমরা ৬ জন সুন্দরবনের পালিয়ে যাই। এরপর অন্য জেলের নৌকায় লোকালয়ে আসি। তার বক্তব্যে ঘুষ দিয়ে মাছ ধরার এমন তথ্য বেরিয়ে এসেছে।
নোটাবেকী বন টহল ফাঁড়ির ওসি সাহাদাত হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ৬ জন জেলে ও ৪খানা নৌকা আটক করার সময় ৬ জন জেলে সুন্দরবনে পালিয়ে যায়। পশ্চিম সুন্দরবনের খুলনা বিভাগীয় বন কর্মকর্তা ড, মোহাম্মদ মহসিন হোসেন সুন্দরবনের অভয়ারণ্য প্রবেশ করে ৪০ কেজি কাকড়াসহ ৪ জেলেকে আটক করে তাদের বিরুদ্ধে বন আইনে মামলা দেন।
উল্লেখ্য, সাতক্ষীরা রেঞ্জের চারটি স্টেশন থেকে সুন্দরবনে মাছ কাঁকড়া আভরণের যে পারমিট দেওয়া হয়। সে পারমিটে নিষিদ্ধ এলাকা হিসেবে সীল মারা থাকে। অথচ সব কিছু জানার পরেও অসাধু বন কর্মকর্তা শাহাদাত হোসেন উৎকোচের বিনিময়ে নিষিদ্ধ এলাকায় জেলেদের প্রবেশ করার সুযোগ দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে সুন্দরবন সাতক্ষীরা রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক এম কে এম ইকবাল হোছাইন চৌধুরী বলেন, সাধারণ জেলে হোক বা প্রভাবশালী দালাল হোক বনের আইন সবার জন্য সমান। অভয়ারণ্যে প্রবেশ বা বনে অপরাধ করলে কাউকে ছাড় দেওয়া হয় না। তিনি আরও বলেন, কোনো বনকর্মীর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মাছ শিকারের সুযোগ করে দেওয়ার অভিযোগ থাকলে আর সেটা প্রমাণিত হলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।