নিজস্ব প্রতিবেদক
আগামি ২৭ মে যশোরে বিএনপির বড় বিক্ষোভ সমাবেশ। এ সমাবেশে বিএনপির মহাসচিবসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। দলটির জেলা শাখার অভিযোগ এই সমাবেশ বানচাল করতে এখনই হুমকি-ধামকি ও ষড়যন্ত্র শুরু হয়ে গেছে। ‘গয়েবি’ মামলায় নেতাকর্মীদের আটক করছে পুলিশ। মঙ্গলবার জেলার ৪ উপজেলা থেকে ১৫ নেতাকর্মীকে আটক করেছে-দাবি বিএনপির।
জেলা বিএনপি নেতাকর্মীদের অভিযোগ, ‘গায়েবি মামলায় গ্রেপ্তার, নির্যাতনসহ সরকার পদত্যাগের ১০ দফা দাবিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসাবে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে যশোর জেলা বিএনপি। আগামি ২৭ মে যশোর টাউন হল ময়দান বা কেন্দ্রীয় ঈদগাহে অনুষ্ঠিতব্য এই সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত থাকবেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এছাড়া বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের কেন্দ্রীয় নেতাকর্মীরা অংশ নিবেন। এই সমাবেশ সফল করতে জেলা বিএনপি বিভিন্ন ইউনিয়ন ও উপজেলাতে প্রস্তুতি সভা করছে। কিন্তু বিএনপির বিক্ষোভ সমাবেশ বানচাল করতে পুলিশ পরিকল্পিতভাবে গ্রেফতার চালাচ্ছে। এর মাধ্যমে নেতাকর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ করেছেন তারা। মঙ্গলবার দিনভর যশোরের ৪ উপজেলায় ১৫ নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে সদরে ৩জন, মণিরামপুরে ৩ জন, বাঘারপাড়াতে ৩ জন ও শার্শা উপজেলাতে ৬ জন।
নেতাকর্মীদের দাবি, এসব নেতাকর্মীদের পুলিশ পেন্ডিং মামলা দিয়ে হয়রানিমূলক গ্রেফতার করছে। তাদের মধ্যে যশোর সদর উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আশরাফুজ্জামান মিঠু, নগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মনিরুজ্জামান মাছুম, নরেন্দ্রপুর ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আব্দুস সালাম। বাকীরা বিভিন্ন ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাকর্মী। নেতাকর্মীদের মঙ্গলবার বিকালে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের গ্রেফতারের বিষয়টি জানিয়ে জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভেকেট সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু বলেন, ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি থাকলে সরকার আর পুলিশ প্রশাসন অস্থির হয়ে যায়। এর কারণ হলো সরকার এখন দুর্বল অবস্থা রয়েছে। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল ও দলীয় কর্মসূচি বানচাল করতে এমন ষড়যন্ত্রমূলক কর্মকা- করা হচ্ছে। গ্রেফতার আতংক ছড়িয়ে নেতাকর্মীদের দাবিয়ে রাখা যাবে না। নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ থেকেই সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে।
এই বিষয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন বলেন, ‘কাউকে বিনা কারণে গ্রেফতার করা হচ্ছে না। ভাংচুর ও অন্যান্য মামলার আসামিদের গ্রেফতার করা হচ্ছে।
এদিকে, কর্মসূচি সফল করতে যশোর বিএনপির কার্যালয়ে দুটি প্রস্তুতি সভা হয়েছে। জেলা বিএনপি ও সদর উপজেলা বিএনপির আয়োজনে মঙ্গলবার যৌথ সভায় সভাপতিত্ব করেন, জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। পরিচালনা করেন যুগ্ম আহ্বায়ক দেলোয়ার হোসেন খোকন। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন খুলনা বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত। তিনি বলেন, ‘দেশে বর্তমান যে সমস্যা ও সংকট বিরাজ করছে, এর জন্য দায়ী বর্তমান কর্তৃত্ববাদী সরকার। এই সমস্যা ও সংকট থেকে উত্তরণে তাদের পতনের কোন বিকল্প নেই। তিনি আরো বলেন, বিগত এক যুগের অধিক সময় ধরে যশোরে বিএনপির প্রতিটি নেতাকর্মী সীমাহীন নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করেও দলের একটি নেতাকর্মীও নীতি আদর্শ থেকে বিচ্যুতি হননি। তাদের দৃঢ় ও ইস্পাত কঠিন মনোবল রয়েছে। যেটি বিগত দিনেও তারা প্রমাণ করেছেন। আগামী ২৭ মে জনসমাবেশে তারা আরেকবার প্রমাণ করবেন। পৃথক দুটি সভায় বক্তব্য রাখেন, জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাড. সৈয়দ সাবেরুল হক সাবু, সদস্য গোলাম রেজা দুলু, মো. মুছা, আব্দুস সালাম আজাদ, মিজানুর রহমান খান, এ কে শরফুদ্দৌলা ছোটলু, মারুফুল ইসলাম, অ্যাড. হাজী আনিছুর রহমান মুকুল, কাজী আজম, মুনির আহমেদ সিদ্দিকী বাচ্চু, সিরাজুল ইসলাম, নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এহসানুল হক সেতু, সদর উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আঞ্জুরুল হক খোকন, সাংগঠনিক সম্পাদক আশারুফুজ্জামান মিঠু (পরে পুলিশ তাকে আটক করে), শার্শা উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক খায়রুজ্জামান মধু, ঝিকরগাছা উপজেলা বিএনপির যুগ্ম-আহ্বায়ক খোরশেদ আলম, বাঘারপাড়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক শামসুর রহমান, যুগ্ম-আহ্বায়ক মশিউর রহমান, মণিরামপুর পৌর বিএনপির সভাপতি খায়রুল ইসলাম, নওয়াপাড়া পৌর বিএনপির সভাপতি আবু নঈম, জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী রাশিদা রহমান প্রমুখ।