আবদুল কাদের : সংকটের কারণে যথাসময়ে ঋণপত্রের (এলসি) দায় পরিশোধ করতে পারছে না রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংক। এলসি দায় পরিশোধে বিলম্ব ব্যাংকটিতে নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেসরকারি খাতের এক্সিম ব্যাংকের পরিস্থিতিও প্রায় একই। ইসলামী ধারার ব্যাংকটির ডলার ধারণক্ষমতা ৫৩ মিলিয়ন হলেও এ মুহূর্তে উদ্বৃত্ত কোনো ডলার নেই। উল্টো ৮৮ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে। সারা দেশের মতো যশোর শাখায়ও কোন ডলার নেই তাদের।
অগ্রণী কিংবা এক্সিম ব্যাংকের পরিস্থিতি এখন বেশির ভাগ ব্যাংকের। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা যায়, দেশের অন্তত ২০টি ব্যাংকের কাছে এলসি দায় মেটানোর মতো কোনো ডলার নেই। আমদানি দায় পরিশোধ করতে গিয়েই ঘাটতিতে পড়েছে এসব ব্যাংক। রেমিট্যান্স ও রফতানি আয় থেকে সংগৃহীত ডলার দিয়েও নিজেদের আমদানি দায় ও গ্রাহকদের বিদেশি ঋণ পরিশোধ করতে পারছে না। এ কারণে আমদানির নতুন এলসি খোলা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছে ব্যাংকগুলো। অনেক ব্যাংক খাদ্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের এলসি খোলাও বন্ধ রেখেছে। যে কয়েকটি ব্যাংকের কাছে এখনো ডলার আছে, সেগুলোও কমে আসছে। আর এ সংকটের কারণে প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে আন্তঃব্যাংক বৈদেশিক মুদ্রাবাজার।
এদিকে ডলার সংকটের কারণে যশোরের সরকারি বেসরকারি অনেক ব্যাংকই নির্ধারিত তারিখে এলসি দায় পরিশোধ করতে পারছে না। কোন কোন দায় পরিশোধে এক মাসও বিলম্ব হচ্ছে। এ অবস্থায় এলসির নিশ্চয়তা দেয়া বিদেশি ব্যাংকগুলোর কাছে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন হচ্ছে। বিদেশি অনেক ব্যাংকই এখন বাংলাদেশের জন্য নিজেদের ক্রেডিট লাইন কমিয়ে দিতে শুরু করেছে।
ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা বলছেন, বিদ্যমান ডলার সংকট পরিস্থিতি ভয়াবহ। কিন্তু নীতি নির্ধারকরা পরিস্থিতির ভয়াবহতা বুঝতে পারছেন না। প্রতিদিনই কোন না কোন ব্যাংক এলসির দায় পরিশোধে ব্যর্থ হচ্ছে। ব্যাংকগুলোর ডলার ঘাটতির পরিমাণও বাড়ছে। রফতানি আয় ও রেমিট্যান্স প্রবাহ যে হারে কমছে, তাতে ডলার সংকট আরো তীব্র হবে। ব্যাংকগুলো এলসি দায় পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় বিদেশি ব্যাংকগুলো বাংলাদেশের এলসি নেয়াই বন্ধ করে দিতে পারে।
দেশের মোট রেমিট্যান্স প্রবাহের প্রায় ৩০ শতাংশই আসে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে। আবার রফতানি আয়ের দিক থেকেও ব্যাংকটির অবস্থান সবার শীর্ষে। এরপরও আমদানি দায় পরিশোধ নিয়ে বিপদে আছে দেশের সবচেয়ে বড় ব্যাংকটি। কোনো কোনো এলসি দায় পরিশোধের ক্ষেত্রে ৩০ দিন পর্যন্ত বিলম্ব হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, বর্তমানে সবচেয়ে বেশি ডলার ঘাটতিতে রয়েছে অগ্রণী ব্যাংক। রাষ্ট্রায়ত্ত এ ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ২৫৬ মিলিয়ন ডলার ছাড়িয়েছে। এছাড়া এক্সিম ব্যাংক ৮৮ মিলিয়ন, ঢাকা ব্যাংক ৬৮, শাহজালাল ইসলামী ব্যাংক ৬৪, ইউসিবিএল ৪৯, দ্য সিটি ব্যাংক ৪৭, পূবালী ব্যাংক ৪৫, প্রাইম ব্যাংক ৪২ ও সাউথইস্ট ব্যাংক ৪১ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে রয়েছে। ইস্টার্ন ব্যাংকের ঘাটতির পরিমাণ ৩৫ মিলিয়ন ডলার। মার্কেন্টাইল ব্যাংক ৩৪, ওয়ান ব্যাংক ৩২, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ২৭, ন্যাশনাল ব্যাংক ২৪, ব্যাংক এশিয়া ১৪ ও স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ১১ মিলিয়ন ডলার ঘাটতিতে রয়েছে। ৮ মিলিয়ন ডলার করে ঘাটতিতে রয়েছে ট্রাস্ট, ব্র্যাক ও এনসিসি ব্যাংক। বিদেশি খাতের কমার্শিয়াল ব্যাংক অব সিলনেও ৪ মিলিয়ন ডলার ঘাটতি রয়েছে।
মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক শাকিল আলম, ঢাকা ব্যাংক যশোর শাখার ব্যবস্থাপক হুমায়ন কবীর তাদের শাখায় ডলার সংকটের কারণে এলসি বন্ধ রাখা হয়েছে বলে জানিয়ে বলেন, আমাদের মতো ২০টিরও বেশি ব্যাংকের শাখায় কোন এলসি নেয়া হচ্ছে না। সামনে পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ হতে পারে।
নিজেদের সংকটের কথা জানাতে ব্যাংকের শীর্ষ নির্বাহীরা গত বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের দুই ডেপুটি গভর্নরের সঙ্গে বৈঠকে বসেছিলেন। বৈঠকে এবিবি ও বাফেদার দায়িত্বে থাকা ব্যাংক নির্বাহীরা ডলার সংকটের প্রকৃত চিত্র তুলে ধরে কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা চান। এমডিরা বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা দেয়া না হলে দেশের অনেক ব্যাংকই এলসি দায় পরিশোধ করতে পারবে না। রিজার্ভ থেকে ডলার দেয়া না হলে অন্তত কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ডলার সোয়াপ করার সুযোগ দিতে ব্যাংক এমডিরা অনুরোধ করেন। যদিও বৈঠকে বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর কাজী ছাইদুর রহমান ব্যাংক এমডিদের দাবি সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন।
সামগ্রিক বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র জিএম আবুল কালাম আজাদ সাংবাদিকদের বলেন, ডলারের বাজার স্থিতিশীল করতে বাংলাদেশ ব্যাংক এরই মধ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এরই মধ্যে আমাদের এলসি খোলার পরিমাণ প্রায় ৪০ শতাংশ কমেছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একটি চৌকস টিম ব্যাংকের খোলা এলসিগুলো পর্যবেক্ষণ করছে। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ডলার সহায়তা দেয়া হচ্ছে। আমরা আশা করছি, সহসা দেশের বৈদেশিক মুদ্রাবাজার স্থিতিশীল হয়ে যাবে।
সর্বশেষ
- ৩২ জেলায় নিপাহ ভাইরাস
- যশোরে গত ৯ বছরে ১২০০ কোটি টাকার উন্নয়ন হয়েছে : এমপি নাবিল
- তুলারামপুরে মাঠ দিবস ও কৃষক সমাবেশ অনুষ্ঠিত
- নেপালকে উড়িয়ে সাফ শুরু বাংলাদেশের
- স্বাস্থ্যসেবায় দক্ষ জনবল খুবই কম : বিএসএমএমইউ উপাচার্য
- রাজগঞ্জে বাসের চাকা ফেটে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে দুর্ঘটনায়, আহত ১৪
- বেনাপোল বন্দর দিয়ে টিসিবির ডাল আমদানি
- বন্ধন এক্সপ্রেস থেকে ফের মদসহ ৬৫ লাখ টাকার পণ্য উদ্ধার