আবদুল কাদের: যশোরের আট উপজেলার মধ্যে ছয় উপজেলায় বোরো ধানের ক্ষেতে বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। কীটনাশক ব্যবহারেও সুফল পাচ্ছেন না কৃষকরা। এতে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন চাষিরা। উৎপাদন বিপর্যয়েরও আশঙ্কা করছেন তারা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলায় ২০২১-২২ অর্থবছরে বোরো ধান আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৫৭ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। আবাদ হয়েছে এক লাখ ৫৮ হাজার ৫০৫ হেক্টর। যার মধ্যে উফসি জাতের আবাদ করা হয়েছে এক লাখ ৩১ হাজার ৬২০ হেক্টর ও হাইব্রিড জাতের আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৮৮০ হেক্টর। এরমধ্যে পোকার আক্রমণ হয়েছে ৩৭ হেক্টর জমিতে। তবে কৃষকরা বলছেন, বাস্তবে পোকার আক্রমণ হয়েছে শতাধিক হেক্টর জমিতে।
কৃষি বিভাগ বলছে, সদর উপজেলায় বোরো আবাদ হয়েছে ২৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমি, পোকা লেগেছে ২ হেক্টরে, শার্শা উপজেলায় আবাদ হয়েছে ২৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর, পোকা ধরেছে এক হেক্টরে, ঝিকরগাছায় আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৮৫০ হেক্টর, চৌগাছায় আবাদ হয়েছে ১৮ হাজার ৬৩০ হেক্টর, এই দুই উপজেলায় পোকা লাগেনি। অভয়নগরে আবাদ করা হয়েছে ১২ হাজার ২শ হেক্টরে, পোকা লেগেছে ৯ হেক্টর জমিতে। বাঘারপাড়ায় আবাদ হয়েছে ১৬ হাজার ৪২০ হেক্টর, পোকার আক্রমণ হয়েছে ২ হেক্টরে। মণিরামপুরে আবাদ হয়েছে ২৬ হাজার ৯৬৫ হেক্টর, পোকা লেগেছে ২০ হেক্টর জমিতে এবং কেশবপুর উপজেলায় বোরা ধানের আবাদ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৫২০ হেক্টরে, আর পোকা লেগেছে ৩ হেক্টরে।
কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, ধানের ছড়া থেকে মাত্র শীষ বের হতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে সাদা লম্বা লেদা পোকা শীষগুলো ছিদ্র করে ফেলছে। ফলে ওই ছড়াতে আর ধান না হয়ে শুকিয়ে সাদা (চিটা) হয়ে যাচ্ছে। ওই পোকার আক্রমণ থেকে বোরো ধান রক্ষায় কৃষকরা বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করছে। পোকার আক্রমণে ক্ষতির মুখে পড়ছেন অধিকাংশ কৃষক। এতে প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ থেকে ছয় মণ করে ধান কম পাওয়ার আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।
অভয়নগর উপজেলার বগুড়াতলা গ্রামের কৃষক শেখ নূর আলম বলেন, বোরো মৌসুমে এবার আমি সাড়ে তিন বিঘা (৪২ শতকে বিঘা) জমিতে ব্রি-২৮ ধান লাগিয়েছিলাম। ব্লাস্টের লক্ষ্মণ দেখার শুরু থেকেই কয়েকবার ওষুধ ছিটিয়েছি। কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। ওই জমিতে আমার কোনো ধান হবে না।’
উপজেলার শ্রীধরপুর গ্রামের কৃষক আনোয়ার মল্লিক জানান,‘ আমি ৭৯ শতক জমিতে হিরা-২ হাইব্রিড ধান লাগিয়েছি। ব্লাস্টে অর্ধেকের বেশি জমির ধান নষ্ট হয়েছে। কয়েকবার ব্লক সুপারভাইজারের সাথে যোগাযোগ করি। তিনি আসতে চেয়েও আসেননি। সর্বশেষ তিনি ধান কেটে ফেলার পরামর্শ দিয়েছেন।’
বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের কৃষক রফিকুল বিশ্বাস বলেন, ‘বোরো রোপণের পর ২০ থেকে ২৫ দিন পর্যন্ত কোনও পোকা আক্রমণ করেনি। হঠাৎ করে ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। রক্ষা পেতে বিভিন্ন কীটনাশক ব্যবহার করেছি। এরপরও প্রতিকার মিলছে না।’
মণিরামপুর উপজেলার হানোয়ার গ্রামের আনসার আলী বলেন, এ বছর এক বিঘা জমিতে আবাদ করেছিলাম। বোরো ধানের বীজ খুবই ভালো ছিল। কিন্তু পোকা সব শেষ করে দিচ্ছে। ধানের শীষ কেটে দিয়েছে। একই গ্রামের মোমেনা বেগম বলেন, আমার ১০ কাঠা জমিতে পোকা লেগেছে। এতে ধানের শীষ ফেটে যাচ্ছে। খুবই লোকসান দিতে হবে এবার।
মণিরামপুর উপজেলা কৃষি অফিসার আবুল হাসান বলেন, উপজেলার বিভিন্ন বোরো ক্ষেতে পোকার আক্রমণ বেড়েছে। উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারা মাঠ পরিদর্শন ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছেন। পোকার আক্রমণ থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক দীপংকর দাস বলেন, ধানক্ষেতে মাজরা পোকা দেখা দিলে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই। এ পোকা ধানের ফলনে কোনও ক্ষতি করে না। পোকা দমনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়া ব্যবহার করতে হবে। ইতিমধ্যে আমরা আক্রান্ত ৩৩ হেক্টর দমন করে ফেলেছি। আশা করছি আর ১৫ দিনের মধ্যে কৃষক তার ফসল ঘরে তুলতে পারবেন।