মাছের প্রজনন মৌসুম বৈশাখ-জৈষ্ঠ মাসে ভারী বৃষ্টি হলে মাছ উজান স্রোতে ওপরে উঠে আসে। গ্রাম্য ভাষায় এ অবস্থাকে উজো বলা হয়। এই উজোর সময় মাছের উল্টো স্রোতে উঠে আসা দেখে ব্যাঙেরও উজানে ওঠার সখ হয়। ঠিক এমনটা হয়েছে চৌগাছার মর্জাদ বাঁওড় ব্যবস্থাপকের। চারিদিকে সর্বত্র লাগামহীন অনাচার-দুর্নীতি দেখে তারও যেন মনে হয়েছে কারো যখন কিছু হচ্ছে না তখন তারও কিছু হবে না। তাই তিনিও নেমে পড়েছেন দুর্নীতিতে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, মর্জাদ বাঁওড়ের জমি ব্যক্তি মালিকানায় ইজারা দিয়ে প্রায় ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। বাঁওড়টির ব্যবস্থাপক এবং নৈশপ্রহরীর বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিত অভিযোগ করেছেন ওই বাঁওড়ের হ্যাচারি অংশ লিজ নিয়ে মাছ চাষি ভুট্টো মিয়া। তিনি মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী, সচিব ও মৎস্য অধিদফতরের মহাপরিচালক বরাবর এ অভিযোগ করেন। বাঁওড় ব্যবস্থাপক বাঁওড়ের প্রায় ৫ হাজার ট্রাক মাটি বিক্রি করেছেন। বাঁওড়ের নিত্যানন্দি গ্রামের অংশের ৩০ বিঘা, ১৪ বিঘা ও ২০ বিঘা জমির ৩টি ভেড়ি ৮০ হাজার টাকা বার্ষিক লিজ চুক্তিতে, মুক্তদহ গ্রামের ১৩ বিঘার দুটি ভেড়ি বার্ষিক এক লাখ টাকা লিজ চুক্তিতে লিজ দিয়েছেন। ৪ বিঘার পুকুর ৩০ হাজার টাকা, ৬ বিঘার পুকুর ৩০ হাজার টাকা, ৭ বিঘার পুকুর ৩৫ হাজার টাকা, এবং ৮ বিঘার পুকুর ৪০ হাজার টাকা বার্ষিক চুক্তিতে লিজ দিয়েছেন।
এ সব অভিযোগ পেয়ে চৌগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইরুফা সুলতানা হাকিমপুর ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে পাঠান। তিনি ঘটনাস্থলে যেয়ে মাটি চুরি করে বিক্রি করার বিষয়টির প্রমাণ পেয়েছেন। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জানান, তিনি নিজে বাঁওড় ব্যবস্থাপককে একাধিকবার কল করলেও মোবাইল সংযোগ বন্ধ পেয়েছেন। তাকে সংবাদ পাঠানো হয়েছে। বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রয়োজনে নিয়মিত মামলা করা হবে।
বিচারহীনতার সংস্কৃতি বাঁওড় ব্যবস্থাপককে এমন ফ্রি স্টাইল দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করেছে। আর তাই তিনি মাটিতো বিক্রি করেছেন তার ওপর অনুনমোদিতভাবে বাঁওড়ের জমি লিজ দিয়ে টাকা পকেটে ভরতে সাহস করেছেন। তার প্রতিটি কাজই স্বেচ্ছাচারিতায় ভরপুর। একজন সরকারি কর্মকতা হয়ে তিনি কোন বিবেকে মোবাইল ফোন বন্ধ রাখেন? সাংবাদিকরা তার সাথে যোগাযোগ করে তাকে পাননি। তার মোবাইল খোলা পাননি ইউএনও। তিনি মাটি বেচে যে অপরাধ করেছেন তাতে আর বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। কারণ অপরাধ করেছেন বলেইতো ইউএনও মামলা করতে চেয়েছেন। এমন সব সরকারি কর্মকর্তাদের যথাযথ শাস্তি হোক, অন্যরা বুঝুক এদেশে অপরাধ করে পার পাওয়া যাবে না।