নিজস্ব প্রতিবেদক
যশোরে বিএনপির ডাকা তিনদিনের রেলপথ, সড়ক ও নৌপথ অবরোধের প্রথম দিন তেমন কোন প্রভাব পড়েনি। বিএনপির নেতাকর্মীরা ভোরে পৃথকভাবে ঝটিকা মিছিল করেছে। পরে পুলিশি তৎপরতায় বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রাজপথে ছিলনা বিএনপি নেতাকর্মীরা। বিএনপির ৬৯ জন নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এরমধ্যে ৭ জন নারী রয়েছেন। তবে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। আ.লীগের দাবি, বিএনপির অবরোধ কর্মসূচি প্রাতঃভ্রমণে সীমাবদ্ধ হয়ে গেছে। তারা ভোরবেলা ঝটিকা মিছিল করে হারিয়ে যায়। তবে বিএনপির দাবি, পুলিশের মিথ্যা মামলা ও আ.লীগ নেতাকর্মীদের সশস্ত্র মহড়ায় মাঠে দাঁড়াতে পারছে না তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, মঙ্গলবার সকাল থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা। বিএনপির ঝটিকা মিছিল থেকেই অন্তত ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও সড়কে যানবহান চলাচল কম ছিল। যশোর স্টেশন থেকে নির্বিঘেœ ৬টি ট্রেন ছেড়ে গেছে। যশোর কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালে বাস ছাড়ার জন্য প্রস্তুত ছিল। তবে যাত্রীর সংখ্যা কম থাকায় এবং চালকরা গাড়ি চালাতে অপারগতা প্রকাশ করায় দূরপাল্লার পরিবহন ছেড়ে যায়নি। অভ্যন্তরীণ রুটে কিছু বাস চলাচল করেছে। বেশিরভাগ উপজেলায় বিএনপির নেতাকর্মীদের রাজপথে দেখা যায়নি।
অবরোধের শুরুতে সকালে যশোর-মাগুরা সড়কে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক (খুলনা বিভাগ) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের নেতৃত্বে মিছিল বের হয়। এরপর মিছিল বের করেন জেলা বিএনপির আহ্বায়ক অধ্যাপক নার্গিস বেগম। এছাড়া যশোর-খুলনা মহাসড়কে পৃথক মিছিল করেছে দলটির নেতাকর্মীরা।
অনিন্দ্য ইসলাম অমিত জানান, অবরোধ কর্মসূচির শুরুতে যশোর-খুলনা মহাসড়কের মুড়লী মোড় থেকে ১৪ জন বিএনপি ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা আটক করে নিয়ে গেছে পুলিশ। এছাড়া অবস্থান কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় জেলা যুবদলের সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান আসাদের বাড়ি হামলা ও তার মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে একদল সন্ত্রাসী। মিছিলের প্রস্তুতি নেওয়ায় যশোর সদর উপজেলার কচুয়া ইউনিয়নের যুবদলের আহ্বায়ক বিল্লাল হোসেন ও যুবদল নেতা আসমত শরিফের মোটরসাইকেল নিয়ে গেছে পুলিশ। মোট জেলা থেকে ৬৯ জনকে পুলিশ আটক করে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। এরমধ্যে ৭ জন মহিলা নেত্রী রয়েছেন। যাদের সাথে অশোভন আচরণ করেছে পুলিশ।
এদিকে, যশোরের সড়ক-মহাসড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পুলিশ ও আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা অবস্থান নেয়। এর আগে গত ২৯ অক্টোবর হরতালের দিনে ভোরে ঝটিকা মিছিল করে শেষ করে কর্মসূচি। বিএনপির নেতাকর্মীরা পুলিশ ও আ.লীগের নেতাকর্মীদের ভয়ে রাজপথে কর্মসূচিতে বেশি সময় থাকতে পারছেন না বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
এ বিষয়ে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব সৈয়দ সাবেবুল হক সাবু বলেন, মিথ্যা মামলার পর মামলা দেয়ায় বিএনপি নেতাকর্মীরা মাঠে যেতে পারছে না। তারপরেও কর্মীরা মাঠে ছিল। নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দিয়েছি হঠকারী কিছু না করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালন করতে।
তিনি আরও জানান, রাজপথে অস্ত্র লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মহড়া দিচ্ছে; সেখানে বিএনপি নেতাকর্মীরা কিভাবে রাজপথে থাকবে। একদিকে অস্ত্র লাঠি নিয়ে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মাঠে মহড়া দিচ্ছ, অন্যদিকে পুলিশ বিএনপি নেতাকর্মীদের আটক করছে। ফলে বিএনপির আন্দোলন সফল করতে বেগ পেতে হচ্ছে। তার পরেও অবরোধে জনগণ সমর্থক জানিয়ে সফল করছে।
যশোর পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের সাংগঠনিক সম্পাদক হারুণ অর রশিদ জানান, মালিকদের নির্দেশে সড়কে গাড়ি চালাতে প্রস্তুত রাখা হয়েছিল। কিন্তু যাত্রী না থাকায় এবং কিছু চালক গাড়ি চালাতে সম্মত না হওয়ায় দূরপাল্লার গাড়ি চলাচল করেনি। অভ্যন্তরীণ রুটে কিছু বাস চলাচল করেছে।
এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি বীরমুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন বলেন, বিএনপির আন্দোলন কর্মসূচিতে জনগণের কোন সম্পৃক্ততা নেই। তারা কয়েকজন নেতাকর্মী মিলে ভোরবেলা ফাঁকা মাঠে ঝটিকা মিছিল করছে। তাদের আন্দোলন প্রাতঃভ্রমণে সীমাব্ধ রয়েছে। তাদের আন্দোলনকে জনগণ প্রত্যখান করেছে। সবকিছু স্বাভাবিকভাবেই চলছে।
যশোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বেলাল হোসাইন জানান, অবরোধে কেউ যাতে অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটাতে পারে সেজন্য আমরা তৎপর ছিলাম। বিভিন্ন মামলা থাকায় বিএনপির ৬৯ জনকে আটক করেছে পুলিশ।