কল্যাণ ডেস্ক: রিতু মনির বলে অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের ড্রাইভে বল ভেসে গেল হাওয়ায়। কিন্তু বলে হাত ছোঁয়াতে পারলেও বোলার নিতে পারলেন না ক্যাচ। ম্যাচটাও কি ফসকে গেল সেখানে? জীবন পেয়ে সাদারল্যান্ড আগলে রাখলেন এক প্রান্ত। আরেক প্রান্তে বেথ মুনি দারুণ ব্যাটিংয়ে অস্ট্রেলিয়ার এগিয়ে নিলেন জয়ের পথে। বাংলাদেশের ছোট পুঁজি তাড়ায়ও নাকানি-চুবানি খেতে খেতে শেষ পর্যন্ত স্বস্তির জয় পেল বিশ্বের এক নম্বর দল।
এবারের মেয়েদের ওয়ানডে বিশ্বকাপের একমাত্র অপরাজিত দল অস্ট্রেলিয়া ধরে রাখল তাদের অপরাজেয় যাত্রা। ওয়েলিংটনে বৃষ্টিবিঘিœত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৫ উইকেটে হারিয়ে তারা পেল টানা সপ্তম জয়।
ক্যাচ ছাড়ার জন্য বাংলাদেশকে আক্ষেপটুকু হয়তো করতে হতো না, যদি ব্যাটিং আরেকবার ব্যর্থ না হতো। কিন্তু আগের ম্যাচগুলোর ধারা মেনে ব্যাটিংয়ে আবারও হতাশ করে দল। বৃষ্টিতে ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে রান আসে কেবল ৬ উইকেটে ১৩৫।
প্রবল প্রতাপশালী অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটারদের এই রান তাড়া করার কথা তুড়ি বাজিয়েই। ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ৫ ব্যাটারদের ৪ জনই অস্ট্রেলিয়ার, সবাই পাওয়ার ও স্কিলে দারুণ সমৃদ্ধ। কিন্তু অভিজ্ঞ সালমা খাতুন ও অন্য স্পিনারদের দারুণ বোলিংয়ে এই ব্যাটিং লাইন আপকেই চেপে ধরে বাংলাদেশ। ৭০ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে শঙ্কায় পড়ে যায় অস্ট্রেলিয়া। তবে মুনি ও সাদারল্যান্ডের অবিচ্ছিন্ন ৬৬ রানের জুটিতে শেষ পর্যন্ত জিতে যায় তারা।ওয়ানডে র্যাঙ্কিংয়ের দুই নম্বর ব্যাটার মুনি ম্যাচ জেতানো ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন ৬৬ রানে, সাদারল্যান্ড ২৬ রানে।
শেষ দিকে সাদারল্যান্ড আরও একবার সুযোগ দেন, এবার কঠিন ফিরতি ক্যাচ নিতে পারেননি রুমানা আহমেদ। শেষ সময়ে জীবন পান মুনিও। তবে জয় তখন অস্ট্রেলিয়ার নাগালে। রিতু মনির ক্যাচ নিতে না পারাই তাই ম্যাচে হয়ে থাকে বড় টার্নিং পয়েন্ট।
ছোট রান তাড়ায় অস্ট্রেলিয়ার রান তাড়ার শুরুটা এগোয় অনুমিত পথেই। প্রথম ৫ ওভারে অ্যালিসা হিলি ও র্যাচেল হেইন্স কোলেন ২২ রান। এরপরই সালমার একের পর এক ছোবল।
র্যাঙ্কিংয়ের শীর্ষ ব্যাটসম্যান হিলি স্কয়ার লেগে ধরা পড়েন সুইপ করে। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক ও রান তাড়ায় অসাধারণ সাফল্যের জন্য যাকে বলা হয় মেয়েদের ক্রিকেটের বিরাট কোহলি, সেই মেগ ল্যানিংকে অসাধারণ এক ডেলিভারিতে বোল্ড করেন সালমা। নিজের ৩০তম জন্মদিনে শূন্য রানে ফেরেন ল্যানিং।
সালমা পরের ওভারে ফিরিয়ে দেন বিশ্বের সেরা ব্যাটারদের একজন হেইন্সকেও। মিড অনে দারুণ ডাইভিং ক্যাচ নেন ফারজানা হক।
লতা মন্ডলকে টানা দুটি বাউন্ডারি মেরে চাপ আলগা করার চেষ্টা করেন বেথ মুনি। তবে আরেকপ্রান্তে নাহিদা আক্তার আক্রমণে এসে প্রথম ওভারেই ফেরান তাহলিয়া ম্যাকগ্রাকে। ৪১ রানে ৪ উইকেট তুলে নিয়ে তখন উজ্জীবিত বাংলাদেশ।
বরাবরই আগ্রাসী অ্যাশলি গার্ডনার উইকেটে গিয়ে শট খেলতে শুরু করেন। নাহিদাকে টানা দুটি চার মারেন তিনি পেশির জোর দেখিয়ে। তবে বিপজ্জনক এই ব্যাটারকে চমকে দেন রুমানা আহমেদ।
বেথ মুনি ও অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের জুটিতেই জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। ছবি: আইসিসি।বেথ মুনি ও অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের জুটিতেই জিতে যায় অস্ট্রেলিয়া। ছবি: আইসিসি।এমনিতে লেগ স্পিনার হলেও আচমকা একটি অফ ব্রেক করেন রুমানা। বল তীক্ষ্ন টার্ন করে গার্ডনারকে (১৬ বলে ১৩) হতভম্ব করে দিয়ে ছোবল দেয় স্টাম্পে। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে ৫০ ওয়ানডে উইকেট পূর্ণ করেন রুমানা।
এরপরই রিতু মনির বলে ৪ রানে সাদারল্যান্ডের জীবন পাওয়া। বেঁচে গিয়ে তিনি সাবধানী ব্যাটিংয়ে সঙ্গ দিতে থাকেন মুনিকে। অভিজ্ঞ মুনি ঠা-া মাথায় খেলে এগিয়ে নেন দলকে। এই জুটিতে আর ফাটল ধরাতে পারেনি বাংলাদেশ। দলকে জিতিয়েই ফেরেন দুজন।
ম্যাচের শুরুটাও বাংলাদেশের জন্য ছিল চ্যালেঞ্জিং। শুধু এ দিনই নয়, বৃষ্টির কারণে বেসিন রিজার্ভের উইকেট ঢেকে রাখা ছিল আগের দিন থেকেই। স্যাঁতস্যাঁতে সেই উইকেটে টস হেরে আগে ব্যাটিংয়ে নামতে হয় বাংলাদেশকে। তবে দুই ওপেনার মুর্শিদা খাতুন ও শারমিন আক্তার শুরুটা করেন ভালো।
সাবধানী শুরুর পর পঞ্চম ওভারে মেগান শুটকে পুল করে প্রথম বাউন্ডারি মারেন শারমিন। পরের ওভারে ডারিস ব্রাউনকে স্কয়ার ড্রাইভে চার মারেন মুর্শিদা। ৮ ওভারে ৩৩ রানের জুটি গড়েন দুজন।
অফ স্পিনার অ্যাশলি গার্ডনার ভাঙেন এই জুটি। মুর্শিদার (১৭ বলে ১২) সুইপে স্কয়ার লেগে দারুণ ক্যাচ নেন র্যাচেল হেইন্স। এরপর তিনে নামা ফারজানা হককে দ্রুত হারায় বাংলাদেশ। বিশ্বকাপে এবার দুটি ফিফটি করা ব্যাটার উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন অ্যানাবেল সাদারল্যান্ডের বাউন্সারে।
৮ রানে আউট হওয়ার আগেই অবশ্য বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটার হিসেবে ওয়ানডেতে হাজার রান স্পর্শ করেন ফারজানা।
গার্ডনারের সঙ্গে এরপর বাংলাদেশকে আরও চেপে ধরেন জেস জোনাসেন। এই বাঁহাতি স্পিনারের বলে থিতু হয়ে যাওয়া শারমিন আউট হন লাইন মিস করে (৫৬ বলে ২৪)। অধিনায়ক নিগার সুলতানা ইনিংসকে গতি দিতে না পেরে শেষ পর্যন্ত ক্যাচ দেন সুইপ করে (৩০ বলে ৭)।
অভিজ্ঞ লতা মন্ডল সেখান থেকে টেনে নেওয়ার চেষ্টা করেন দলকে। আরেকপ্রান্তে রুমানা আহমেদ দারুণ দুটি ড্রাইভে চার মারেন বাটে, তবে সিঙ্গেলস-ডাবলস নিতে ধুঁকতে থাকেন প্রবলভাবে। ৩৩ রানের জুটিতে তাই বল লেগে যায় ৭১টি।
রুমানা আউট হন ৪৫ বলে ১৫ করে। পরের জুটিতে লতা ও সালমা মিলে একটু দ্রুত রান তুলতে পারেন। ৪৭ বলে ৩৬ রান যোগ করেন দুজন। ৬৩ বলে ৩৩ করে লতা ফেরেন শেষ ওভারে। সালমা অপরাজিত থাকেন ১৫ রানে।
ওই রানেই পরে লড়াই জমিয়ে তোলেন বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আফসোসই সঙ্গী। রোববার এই মাঠেই ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে বাংলাদেশের বিশ্বকাপ অভিযান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর: বাংলাদেশ: ৪৩ ওভারে ১৩৫/৬ (মুর্শিদা ১২, শারমিন ২৪, ফারজানা ৮, নিগার ৭, রুমানা ১৫, লতা ৩৩, সালমা ১৫*, নাহিদা ৩*; শুট ৮-২-২৫-১, ব্রাউন ৬-০-২৫-০, গার্ডনার ৮-১-২৩-২, জোনাসেন ৯-৩-১৩-২, সাদারল্যান্ড ৬-০-২২-১, কিং ৬-১-২৩-০)।
অস্ট্রেলিয়া: ৩২.১ ওভারে ১৩৬/৫ (হিলি ১১, হেইন্স ৭, ল্যানিং ০, মুনি ৬৬*, ম্যাকগ্রা ৩, গার্ডনার ১৩, সাদারল্যান্ড ২৬*; জাহানারা ৪-১-১৩-০, সালমা ৯-১-২৩-৩, লতা ২-০-১২-০, নাহিদা ৫-০-৩৩-১, রুমানা ৮.১-০-৩৫-১, রিতু ২-০-১১-০, ফাহিমা ২-০-৭-০)। ফল: অস্ট্রেলিয়া ৫ উইকেটে জয়ী। প্লেয়ার অব দা ম্যাচ: বেথ মুনি।