নিজস্ব প্রতিবেদক
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে তাদের এমপি, সাবেক এমপি ও দলীয় নেতাকর্মীরা আত্মগোপনে চলে গেছেন। অনেকে দেশ ছেড়েছেন। আবার অনেকেই দেশে থেকেও প্রকাশ্যে আসছেন না। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় হয়েছেন এসব নেতাকর্মীরা। যশোরে সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে আওয়ামী নেতাকর্মীদের সক্রিয়তা বেড়েছে এবং নিজের অবস্থান জানাতে ঝটিকা মিছিল, আদালত প্রাঙ্গণে মিছিলও করতে দেখা গেছে তাদের।
গত ৫ আগস্ট জনরোষের মুখে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা দেশ ছাড়েন। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানা। বর্তমানে তারা ভারতে অবস্থান করছেন। এরপর আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা নানা কৌশলে দেশ ছাড়তে থাকেন, তবে কিছু নেতাকর্মী পালাতে গিয়ে ধরা পড়েন। এরই অংশ হিসেবে লাপাত্তা হয়ে যান যশোরের অধিকাংশ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আত্মগোপনে থাকা এসব নেতাকর্মীরা হঠাৎ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে উঠেছেন। আবার গ্রেফতারের পর জামিনে মুক্ত হয়ে অনেকে মাঠের রাজনীতিতে ফিরতে না পারলেও ফেসবুক, এক্সসহ (সাবেক টুইটার) অনলাইন ভিত্তিক নানা যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদ পোস্ট আপলোড করছেন। পাশাপাশি টেলিগ্রাম চ্যানেল, হোটসঅ্যাপ গ্রুপ খুলে তথ্য আদান-প্রদান করা হচ্ছে।
গত ২২ জানুয়ারি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলায় যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারকে চার বছরের কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে তার ৩৮ লাখ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার আদেশ দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়ে তাৎক্ষণিক ফেসবুকে প্রতিবাদ পোস্ট দেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। পোস্ট দেওয়া অধিকাংশরাই বিভিন্ন মামলায় আসামি হয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন। এর মধ্যে যশোর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর হাজী সুমন ও জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি রওশন ইকবাল শাহীসহ একাধিক নেতা ফেসবুকে লেখেন, ‘আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করতে দেওয়ার মেটিকুলাস প্লানের অংশ হিসাবে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের বিপ্লবী সাধারণ সম্পাদক জনতার জননেতা শাহীন চাকলাদারের সাথে বিচারের নামে যে প্রহসন করা হয়েছে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অবশ্য এই অবৈধ ভ্যাটম্যানের অধীনে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবো না।’
তারা আরও লেখেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শাহীন চাকলাদার যশোরের মানুষের দোয়া ও ভালোবাসায় সমৃদ্ধ যশোর গড়তে এগিয়ে যাবেন ইনশাআল্লাহ…’
জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদের সাবেক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন বিপুল ২৪ আগস্টে দেওয়া এক স্ট্যাটাসে বলেন, ‘ধৈর্য ধরুন, অপেক্ষা করুন, কোন সহিংসতা করবেন না, বিজয় হবে ইনশাল্লাহ…’
এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই ফেসবুকে সরব রয়েছেন আরবপুর ইউপি চেয়ারম্যান ও যশোর সদর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহারুল ইসলাম। ঢাকায় ঝটিকা মিছিলে অংশগ্রহণের পর বিভিন্ন সময়ে ফেসবুক লাইভে নেতা-কর্র্মীদের একত্রিত করা চেষ্টা করছেন তিনি। ২৪ আগস্ট ফেসবুকে তিনি বলেন, ‘বাঁশি বাজলেই দড়াটানা হাজির হয়ে যাবেন, দেখা হবে রাজপথে মুজিব সেনারা।’
গত ১৩ জানুয়ারি যশোর আদালতে হাজিরা দিয়ে জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক শেখ আতিকুর রহমানের (বাবু) নেতৃত্বে রাজপথে ঝটিকা মিছিল করেন নেতাকর্মীরা। শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) ঢাকা থেকে ফের শেখ আতিকুর বাবুকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিন রাত সাড়ে ১২টার দিকে ফার্মগেট তেজকুনিপাড়া এলাকা থেকে তিনি গ্রেফতার হন।
এ ঘটনায় তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা আরাফাত রহমান বাসিত ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্য বিষয়ক সম্পাদক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সন্তান শেখ আতিকুর রহমান বাবুর গ্রেফতারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। অকুতোভয়, নির্ভিক ও সময়ের সাহসী সন্তান যিনি এই কঠিন সময়েও রাজপথে তার উপস্থিতি জানান দিয়েছেন বারবার। যার বজ্রকন্ঠে ‘জয় বাংলা’ শ্লোগান রোধ করার জন্য এনজিও-প্রশাসন উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে তাকে হয়রানি করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘….মনে রাখবেন ইতিহাস ফিরে আসে। আগস্টের আগুন মার্চেও লাগতে পারে।’
ফেব্রুয়ারি মাসে আন্দোলনে নামছে আওয়ামী লীগ!
ফেব্রুয়ারি মাসে হরতাল অবরোধসহ নানা কর্মসূচি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে ১৪ দলসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে গোপনে আলোচনা চলছে। এ আন্দোলনের মাধ্যমে ড. ইউনূস সরকারের পতন ঘটাতেই সরাসরি আন্দোলনে নামার পরিকল্পনাও করেছে। দেশের বেসরকারি একটি টেলিভিশনকে এসব কথা জানালেন দলটির পলাতক যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম। বেশিরভাগ নেতা-কর্মী পালিয়ে থাকায় সরকারবিরোধী এই কর্মসূচি কীভাবে সফল হবে এমন প্রশ্নের জবাবে জনগণ তাদের সঙ্গে রয়েছে বলে দাবি করেন নাছিম।
এ বিষয়ে আ. ফ. ম. বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, আমরা কর্মসূচি তৈরি করেছি, আলাপ আলোচনার জন্য। দলসহ অন্যান্য জেলায় বিভিন্ন স্টেকহোল্ডার আছে। ছাত্র, যুবক, শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষ, শ্রেণি পেশা আছে। তাদের সাথে আমাদের এই কমিউনিকেশন হচ্ছে একুশে ফেব্রুয়ারিকে সামনে রেখেই। আগেই আমরা কর্মসূচিগুলো একে একে পালন করি এবং একপর্যায়ে আমরা সর্বাত্মক হরতালের আহ্বান জানাব দেশবাসীকে।
যে কর্মসূচি নিয়ে আসবেন মাঠে তো কর্মীদেরকে থাকতে হবে কর্মসূচি বাস্তবায়নে। সেটি কীভাবে করবেন; প্রশ্নের জবাবে নাসিব বলেন, জনগণের অংশগ্রহণ থাকবে। জনগণের অংশগ্রহণেই হবে। দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ আবারও ফিরে আসবে বলে দাবি করেন সাবেক এই এমপি।