দেলোয়ার কবীর, ঝিনাইদহ: ধান রোপণের মৌসুমের শুরুতে প্রচ- খরার কারণে সেচ সংকটে ঝিনাইদহের আমনচাষিরা সমস্যা ভোগ করলেও পরবর্তীতে দফায় দফায় বৃষ্টির ফলে তা দূর হয়। সব বাধা পেরিয়ে এখন ক্ষেতে দুলছে আধাপাকা আর কাঁচা ধান। চাষির মন ক্ষেতের ফলন দেখে ভরে উঠেছে।
কিন্তু সার-কীটনাশকের দামবৃদ্ধি এবং অন্যান্য খরচে তাদের মুখে হাসি ফুটছে না। এমন কথা বললেন জেলার শৈলকুপা উপজেলার হাবিবপুরের চাষি খোন্দকার শহিদুল ইসলাম ও আসলাম হোসেন কানাই।
তারা জানালেন, একবিঘা জমিতে বীজ, সার, কীটনাশক, সেচের পানি সরবরাহ, ধানরোপন, নিড়ানি ও সবশেষ কাটার জন্য যা খরচ হয়, তাতে ধানচাষ তাদের জন্য মোটেও লাভজনক নয়। তাদের মধ্যে প্রতিবিঘা ধানচাষে খরচ হয় ১৫ থেকে ১৭ হাজার টাকা।
আর তাতে উৎপাদিত ২০ মণ ধান বিক্রি করে সর্বোচ্চ ২৪ হাজার টাকার মত আসে। এছাড়াও কৃষকের নিজের ও পরিবারের সদস্যদের পরিশ্রম ও মজুরি তো হিসাবেই আসে না। ফলে বাজারে দাম যতই বাড়–ক, ধানচাষ এখনও লাভজনক কোন আবাদ নয়।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র মতে, এবার জেলায় ১ লক্ষ ৪ হাজার ৭৫০ হেক্টর জমিতে রোপা আমনের আবাদ করে ৩৪ লক্ষ ৩৮ হাজার ২৯০ টন আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ হলেও আবাদ হয়েছে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৩৩৩ হেক্টরে। হেক্টর প্রতি চালের উৎপাদন ধরা হয়েছে ৩.২৮ টন। উপজেলাওয়ারি জমির পরিমাণ ঝিনাইদহ সদরে ২৫ হাজার ২৫০ হেক্টর, কালিগঞ্জে ১৮ হাজার ৬০০ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৬ হাজার ১০০ হেক্টর, মহেশপুরে ১৮ হাজার ১৮৫ হেক্টর, শৈলকুপায় ২৪ হাজার ৯২৭ হেক্টর এবং হারিণাকুন্ডুতে ১১ হাজার ২২১ হেক্টর। সপ্তাহ দুয়েক আগে কোন কোন স্থানে বিক্ষিপ্ত কাটা শুরু হলেও এপর্যন্ত ৪ হাজার হেক্টর জমির ধান কাটা পড়েছে।
ঘুর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে কোন কোন জমির ধান মাটিতে পড়ে যাবার ফলে চাষিরা কোনমতে পাকা ধান কেটে ফেলতে শুরু করেছে। গত আমন মৌসুমে ঝিনাইদহে ১ লক্ষ ৪ হাজার ৬১২ হেক্টর জমিতে ধানচাষ হয়। আর তাতে উৎপাদন হয় ৩৪ লক্ষ ২ হাজার ৪৮৫ টন চাল।
ঝিনাইদহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের খামারবাড়ির উপপরিচালক আসগর আলী জানান, ধানরোপনের সময় প্রচ- খরাপ পরিস্থিতিতে চাষিরা ঝুঁকি নিয়েই আমনের আবাদ করেন। কারেন্টপোকা কিছুটা যন্ত্রণাও দিয়েছে। পরবর্তীতে ঘনঘন বৃষ্টি হওয়ায় চাষিরা স্বস্তি পেয়েছেন।
সিত্রাংয়ের প্রভাবে সামান্য ক্ষতি হলেও বড় বিপর্যয় আসেনি। ফলে চাষিরা আমন চাষে কিছুটা হলেও লাভবান হবেন। উন্নত কৃষি প্রযুক্তি ও যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে চাষিরা বেশি লাভের দিকে ক্রমশ এগিয়ে যাচ্ছেন বলে জানান উপপরিচালক আসগর আলী।