ইউনেস্কো স্বীকৃত ‘বিশ্ব ঐতিহ্য’র অংশ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সাত মার্চের ভাষণ, যে ঐতিহাসিক ভাষণটি তিনি আজকের দিনে দিয়েছিলেন রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান)। এ ভাষণটি বঙ্গবন্ধুর জীবনের শ্রেষ্ঠতম এবং ঐতিহাসিক ভাষণ। শোষিত বঞ্চিত মানুষের মনের অব্যক্ত কথা যেন বের হয়ে আসে বঙ্গবন্ধুর ভাষণের প্রতিটি উচ্চারণে, প্রতিটি বর্ণে, শব্দে। বঙ্গবন্ধুর প্রতিটি উচ্চারণ ধ্বনিত-প্রতিধ্বনিত হতে থাকে লাখো প্রাণে। গগনবিদারী আওয়াজ তুলে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সমর্থন জানায় উপস্থিত লাখো জনতা।
সাত মার্চের আগের চার-পাঁচ দিনের ঘটনাবলিতে বিক্ষুব্ধ মানুষ ওই দিন নতুন কর্মসূচির অপেক্ষায় ছিল। সকাল থেকেই চারদিক থেকে মানুষের ঢল নামে রেসকোর্স ময়দানে। লাখো মানুষের পদভারে ঢাকা পরিণত হয় উদ্বেলিত এক নগরে। অলিগলি হতে সকাল থেকে দলে দলে মানুষ রাজপথ কাঁপিয়ে রেসকোর্স ময়দানের দিকে আসতে লাগল। ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা-তোমার আমার ঠিকানা’, ‘তোমার দেশ আমার দেশ-বাংলাদেশ বাংলাদেশ’ ‘বীর বাঙালি অস্ত্র ধরো- বাংলাদেশ স্বাধীন করো’ প্রভৃতি স্লোগানে রাজপথ মুখরিত করে আসতে লাগল শোষিত বঞ্চিত জনতা। স্লোগানে স্লোগানে প্রকম্পিত হয় রেসকোর্স ময়দান। বঙ্গবন্ধু ২২ মিনিট তার জীবনের শ্রেষ্ঠতম এবং ঐতিহাসিক ভাষণ শুরু করেন।
১৯৭১ সালের ৭ মার্চের আগের কয়েক দিনের ঘটনাবলি, শাসক শ্রেণির সাথে আলোচনা ফলপ্রসূ না হওয়ায় তিনি বজ্রকন্ঠে বলেন, এরপর যদি একটি গুলি চলে, এরপর যদি আমার লোককে হত্যা করা হয় তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, প্রত্যেক ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল। তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে। আমি যদি তোমাদের হুকুম দিবার নাও পারি তোমরা সব বন্ধ করে দেবে। আমরা ভাতে মারব, আমরা পানিতে মারব। সৈন্যরা, তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব্যারাকে থাকো তোমাদের কেউ কিছু বলবে না। কিন্তু আর তোমরা গুলি করার চেষ্টা করো না। সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না। রক্ত যখন দিয়েছি রক্ত আরো দেবো। এই দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়ব ইনশা আল্লাহ! এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।’
এদিন বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বক্তা। এই ভাষণই বাঙালি জাতির মুক্তিযুদ্ধে প্রেরণা যোগায়। তিনি ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তুলতে বলেছিলেন। বলেছিলেন, তোমাদের যার যা কিছু আছে তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলা করতে হবে। জাতি তাই এক প্রকার খালি হাতে শত্রুর মোকাবিলায় নেমেছিল। জাতি তাঁর অবর্তমানে তাই করেছিল। নয় মাস এক রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে জাতি তাঁর ভাষণের প্রেরণায় অটুট ছিল। নেতার অবর্তমানে তাঁর কথা অক্ষরে অক্ষরে পালিত হয় এমন দৃষ্টান্ত বিরল।