নিজস্ব প্রতিবেদক
ওমরা হজ করা হলোনা যশোরের সন্ত্রাসী মীর সাদীর। তার একদিন আগেই গুলি করে হত্যা করা হয় তাকে। ‘ওস্তাদ’ ম্যানসেলের সান্নিধ্যে থেকে সন্ত্রাসী কায়দায় চাঁদাবাজি ও ঠিকাদারী করাসহ বিভিন্ন দিক থেকে আয় করা টাকার হিসাব দিতে না পারায় এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে বলে গুঞ্জন রয়েছে।
এদিকে ঘটনার তিনদিন পর কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাত আসামি করে মামলা করেছেন সাদীর মা কামরুন্নাহার। তবে পুলিশ এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করতে পারেনি।
গত ১৭ মার্চ গভীর রাতে যশোর শহরের মুজিব সড়কের রেলগেট পঙ্গু হাসপাতালের পেছনে নিজ বাড়ির সামনে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয়রা জানিয়েছে, যশোর শহরের ষষ্ঠীতলা রেলস্টেশন এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী মেহেবুব রহমান ম্যানসেল হত্যা, অস্ত্র, চাঁদাবাজি, বোমাবাজি, ছিনতাই, ডাকাতি, দখলবাজি ও মাদকের কারবারসহ নানা ধরণের অপরধের মূল হোতা। তিনি সব সময়েই তার ডান হস্ত হিসেবে কাউকে না কাউকে রাখতেন। ইতোপূর্বে ডলার ও নজু তার ডান হস্ত হিসেবে কাজ করতো। পরবর্তীতে মীর সাদী নজু ও ডলারের স্থলাভিসিক্ত হয়। চাঁচড়া, রায়পাড়া, ষষ্ঠীতলা, শংকরপুর, রেলগেট পশ্চিমপাড়াসহ বিভিন্ন এলাকা ম্যানসেলের নিয়ন্ত্রণে থাকে। এরমধ্যে যশোর রেলস্টেশন বাজারটিও ম্যানসেলের লোকজন দিয়ে খাজনা আদায় করা হয়। প্রতি বছরের চৈত্র মাসে রেলবাজারের চুক্তিপত্র সরকারের কাছ থেকে নেয়া হয়। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে ম্যানসেল গা-ঢাকা দেন। এরপর থেকে ম্যানসেলের নিয়ন্ত্রনাধীন সকল জায়গা থেকে টাকা পয়সা আদায় করতেন সাদী। শুধু তাই নয় বস্তি উন্নয়নসহ কয়েকটি স্থানে ঠিকাদারী কাজের ব্যাংক একাউন্ট সাদীর নামে থাকায় টাকার লেনদেনের সব কিছুই সাদীর নিয়ন্ত্রণে ছিল । সে কারণে ম্যানসেল এলাকা ছেড়ে গেলেও সব কিছু দেখাশুনা নিয়ন্ত্রণ করতেন সাদী। বছর দেড়েক আগে ম্যানসেলের লোকজন সরকারি এক কর্মকর্তাকে চাঁদাবাজির ঘটনায় মারপিটের সময় তার সহযোগি সাদী এবং ট্যাটু সুমনও ছিলো। কিন্তু ওই সময় থেকে সাদীর সাথে ম্যানসেলের কিছুটা মনোমালিন্য হলেও ব্যবসা বাণিজ্য বা চাঁদাবাজি একই সাথে করে আসছিল। কিন্তু ৫ আগস্টের পরে ম্যানসেল বাইরে থাকায় সম্পূর্ণ টাকা সাদী একাই আত্মসাৎ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এই নিয়ে সাদীকে খুন করার পরিকল্পনা করে ম্যানসেল।
এদিকে সাদী ওমরা হজে যাওয়ার জন্য বিমানের টিকিট করে রেখেছিলেন। ১৮ মার্চ যশোর থেকে ঢাকায় যেয়ে আজ ২০ মার্চ ফ্লাইটের কথা ছিলো। কিন্তু ভাগ্যের নির্মম পরিহাস ১৭ মার্চ রাতেই তার মৃত্যু হয়।
এদিকে ট্যাটু সুমনও ম্যানসেলের পুরনো সহকর্মী। সাদীকে খুন করতে ট্যাটু সুমন ও মেহেদীকে দিয়ে আগে থেকেই সাদীর অবস্থান সম্পর্কে রেকি করা হয়। ১৭ মার্চ রাতে সাদীর ভাই রাকিবের সাথে মোটরসাইকেলে বাড়িতে প্রবেশের মুহুর্তেই প্রথমে ছুরিকাঘাত এবং পরে গুলি করে হত্যা করা হয়।
এদিকে এই ঘটনার ডিবি, থানা, পিবিআই এবং সিআইডি পুলিশ আসামিদের সম্পর্কে খোঁজখবর নেয়া শুরু করে। কিন্তু তিনদিনেও কোন আসামির সন্ধান করতে পারেনি প্রশাসন।